খুলনা | বুধবার | ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৭ পৌষ ১৪৩২

জেলবন্দি হাসিনার মুক্তি চেয়েছিলেন বেগম জিয়া, অথচ...

খবর প্রতিবেদন |
০১:৩০ পি.এম | ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫


১৮ বছর আগে এক-এগারোর সরকারের সময়ে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা যখন দুর্নীতির একাধিক মামলায় কারাবন্দি ছিলেন, তখন তাকে মুক্তি দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। হাসিনার গ্রেফতারে দুঃখপ্রকাশও করেছিলেন।

বেগম জিয়ার মৃত্যুর পর বিবিসি বাংলার এমন একটি সংবাদের স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, যেটি ঘুরছে নেটিজেনদের ফেসবুক ওয়ালে ওয়ালে। ২০০৭ সালের ১৮ জুলাই সংবাদটি প্রকাশ করেছিল বিবিসি বাংলা। প্রতিবেদনটির শিরোনাম ছিল- ‘শেখ হাসিনার মুক্তি দাবি খালেদা জিয়ার’।

সেটির ভাষ্য ছিল এমন- ‘বাংলাদেশে সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার মুক্তির দাবি জানিয়ে আরেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এক বিবৃতি দিয়েছেন। বুধবার খালেদা জিয়ার এই বিবৃতি সংবাদমাধ্যমে পাঠানো হয়।’

‘বিবৃতিতে খালেদা জিয়া বলেছেন, শেখ হাসিনাকে মুক্ত রেখে তার বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনায় আইনগত সুযোগ থাকলে তাকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া উচিত। শেখ হাসিনাকে মুক্ত রেখে আইন পরিচালনা করা হলে পারস্পরিক অবিশ্বাস, সন্দেহ, সামাজিক উত্তেজনা এবং রাজনৈতিক আশঙ্কা কমে আসবে।’

‘শেখ হাসিনাকে যেভাবে গ্রেফতার করে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তাতে খালেদা জিয়া দুঃখপ্রকাশ করেছেন।’

অথচ পরবর্তীতে ক্ষমতায় এসে সেই খালেদা জিয়াকেই দুর্নীতির সাজানো মামলায় কারাভোগ করিয়েছেন শেখ হাসিনা। তার জেলবন্দির সময়ে যিনি মানবিকতায় পরিচয় দিয়ে মুক্তি কামনা করেছিলেন, অসুস্থ হলে সেই খালেদা জিয়াকে ভালো চিকিৎসা পর্যন্ত করাতে দেননি শেখ হাসিনা।

এখানেই শেষ নয়, খালেদা জিয়াকে তার ময়নুল রোডের বাসা থেকেও অপমান করে বের করে দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা, যেটি তিনি সরকারিভাবে পেয়েছিলেন। বিএনপি চেয়ারপারসনকে নিয়ে বিভিন্ন সময়ে খুবই আপত্তিকর ভাষায় কটাক্ষও করেছেন হাসিনা। হাসি-তামাশা করেছেন তার অসুস্থতা নিয়ে।

এমন সব অভিযোগ শুধু বিএনপির নয়, দেশের সাধারণ মানুষেরও। কারণ, বিভিন্ন সময়ে বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে শেখ হাসিনার করা হাসি-তামাশা ও কটাক্ষমূলক কথাবার্তা বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচার হয়েছে, সারাদেশের মানুষ সেগুলো দেখেছে-শুনেছে। ফেসবুক ও ইউটিউবে এখনো সেসব ভিডিও ঘোরে।

শুধু তাই নয়, খালেদা জিয়ার ছেলে ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে যে দীর্ঘ ১৭ বছর লন্ডনে প্রবাস জীবন কাটাতে বাধ্য হয়েছেন, দেশে ফিরতে পারেননি, সে বিষয়েও শেখ হাসিনার গভীর ষড়যন্ত্র কাজ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচার পর্যন্ত নিষিদ্ধ করেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার।

প্রচলিত আছে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবকে সপরিবারে হত্যার পর বিদেশে থাকায় বেঁচে যাওয়া শেখ হাসিনা এবং তার ছোট বোন শেখ রেহানাকে দেশে ফেরার সুযোগ করে দিয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়ার প্রয়াত স্বামী ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। রাজনীতি করারও সুযোগ দিয়েছিলেন।

অভিযোগ আছে, পরবর্তীতে সেই জিয়াউর রহমানও রেহাই পাননি শেখ হাসিনার হিংস্রতা থেকে, জীবন দিতে হয়েছে সাবেক রাষ্ট্রপতিকে। কথিত আছে, পুরো জিয়া পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একক রাজত্ব কায়েম করাই ছিল শেখ হাসিনার উদ্দেশ্য। সেই কাজ তিনি অনেকটা গুছিয়েও ফিলেছিলেন।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত ক্ষমতায় স্থায়ী হতে পারেননি শেখ হাসিনা। ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলনের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান তিনি। পালিয়ে গেছেন তার পরিবারের অন্যরাও। আরও পালিয়েছেন তার সরকারের অধিকাংশ মন্ত্রী-এমপি এবং সরকারি আমলা।

কিন্তু দেশান্তরি হওয়ার আগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিনা চিকিৎসায়, জেল-জুলুম করে মৃত্যুর দুয়ারে পৌঁছে দেন শেখ হাসিনা। বিএনপি চেয়ারপারসনের দেহের গুরুত্বপূর্ণ সব অঙ্গ নষ্ট হয়ে যায়। অবশেষে মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

বর্তমানে খালেদা জিয়ার মরদেহ রয়েছে তার দীর্ঘদিনের ঠিকানা বাসভবন ফিরোজায়। নেওয়া হবে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় মানিক মিয়া এভিনিউতে। সেখানে জানাজার পর তিনবারের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে তার স্বামী জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে সমাহিত করা হবে।