খুলনা | রবিবার | ১৩ জুলাই ২০২৫ | ২৯ আষাঢ় ১৪৩২

গণপরিবহনে হাফ ভাড়া : সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করুন

|
১২:২৮ এ.এম | ২৪ নভেম্বর ২০২১


অর্ধেক ভাড়া দিতে চাওয়ায় বাস হেলপার কর্তৃক একজন ছাত্রীকে ধর্ষণের হুমকি দেওয়ার ঘটনায় আমরা স্তম্ভিত। কতিপয় পরিবহন শ্রমিক কতটা উদ্ধত ও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে, এটি তারই প্রকাশ। পাশাপাশি দেশের গণপরিবহণে নারীদের নিরাপত্তাহীনতার চিত্রও এর মধ্য দিয়ে পরিস্ফুট হয়েছে বলা যায়। বস্তুত গণপরিবহণে নারীরা প্রায়ই ধর্ষণ, যৌন নির্যাতনসহ নানা ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এজন্য দায়ী মূলত বিচারহীনতার সংস্কৃতি।
গণপরিবহনে যৌন হয়রানি, ধর্ষণ ও হেনস্তার ঘটনায় অপরাধীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে এ প্রবনতা কমে আসবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। একইসঙ্গে নারীর প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরির্বতনও জরুরি। নারীর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধির মূল কারণ নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে এই সহিংসতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। মনে রাখতে হবে, নারী নির্যাতন প্রতিরোধে সফল হতে না পারলে উন্নয়নের কোনো সুফলই পাওয়া যাবে না।
স্বস্তির বিষয়, অভিযুক্ত হেলপার ও চালককে ইতোমধ্যে আটক করেছে পুলিশ। এছাড়া সংশ্লিষ্ট পরিবহনের মালিকপক্ষের একজন সদস্য শিক্ষার্থীরা হাফ ভাড়া দিলে তাদের কোনো আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের ‘হাফ ভাড়া’র বিষয়টি নতুন কিছু নয়। এক সময় রাজধানীসহ সারা দেশে নগর পরিবহন ব্যবস্থায় ‘হাফ ভাড়া’ অতি স্বাভাবিক বিষয় ছিল। শিক্ষার্থীরা সড়কে যাতায়াতকালে নিজের পরিচয়পত্র প্রদর্শনপূর্বক গন্তব্যের মূল ভাড়ার অর্ধেক রেয়াত পেত। তবে কালের পরিক্রমায় মালিকপক্ষের কারসাজিতে সিটিং সার্ভিসের নামে ‘ওয়েবিল’ পদ্ধতি প্রবর্তনের মাধ্যমে ‘হাফ-পাশ’ প্রথা বাতিল করা হয়। এতে স্বাভাবিকভাবেই সীমিত আয়ের পরিবারের শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়ে। আশ্চর্যজনক হলো, শুরু থেকেই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা এ বিষয়ে সুদৃষ্টি ও সহানুভূতি কামনা করলেও পরিবহন খাতের মোড়লরা বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি। এবার ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির সমান্তরালে বাসভাড়া বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে বিষয়টি অত্যন্ত যৌক্তিকভাবেই সামনে এসেছে এবং শিক্ষার্থীরা আবার এ ব্যাপারে সরব হয়েছে। তাদের এ চাওয়া ন্যায়সঙ্গত, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
বিশ্বের অনেক দেশেই শিক্ষার্থীরা পরিবহনের ভাড়াসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ‘ছাড়’ পেয়ে থাকে। তাহলে আমাদের দেশে শিক্ষার্থীরা কেন এ সুবিধা পাবে না, এ প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। সবচেয়ে ভালো হয়, সরকার যদি এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট একটি নীতিমালা প্রণয়ন ও তা কার্যকর করার ক্ষেত্রে জোরালো ভূমিকা গ্রহণ করে।