খুলনা | বুধবার | ০৯ জুলাই ২০২৫ | ২৫ আষাঢ় ১৪৩২

বড় কর্তারা আমাকে বলির পাঠা বানানোর চেষ্টা করেছেন : প্রকাশ

হরিলুট, এবার খুলনা জেনারেল হাসপাতালে এফডিআর’র ৭০ লাখ টাকা উধাও!

বশির হোসেন |
১২:৩৬ এ.এম | ০৪ ডিসেম্বর ২০২১


খুলনা জেনারেল হাসপাতালে ‘ব্লাড ব্যাংক’-এর এফডিআরের ৭০ লাখ টাকা ব্যাংক থেকে উধাও হয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অগ্রণী ব্যাংক, স্যার ইকবাল রোড শাখায় ওই টাকাগুলো এফডিআর করা হলেও পরবর্তীতে ওই টাকার আর কোন হদিস পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় সিভিল সার্জন-এর নির্দেশে ৩ সদস্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সব মিলে হরিলুটের জায়গায় পরিণত হয়েছে খুলনা জেনারেল হাসপাতাল।
এদিকে করোনা পরীক্ষার দুই কোটি ৫৮ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে খুলনা জেনারেল হাসপাতাল ল্যাবের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট প্রকাশ কুমার দাস কর্মস্থলে ফিরে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে চাইলে তাকে বিরত রাখেন আরএমও। উচ্চ আদালত থেকে ৩ সপ্তাহের আগাম জামিন নিয়ে খুলনা এসেছেন তিনি। এখন নিম্ন আদালত থেকে স্থায়ী জামিন নেয়ার পরিকল্পনায় ব্যস্ত তিনি।
খুলনা সিভিল সার্জন ডাঃ নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, হাসপাতালে ব্লাড ব্যাংকে এফডিআর এর ৭০ লাখ টাকা ব্যাংকে রাখা ছিলো। কিন্তু সেই টাকা বর্তমানে ব্যাংকে পাওয়া যাইনি। এ ঘটনায় ৩ সদস্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। হাসপাতালের জুনিয়ার কনসালটেন্ট (ইএনটি) ডাঃ কাজী আবু রাশেদকে তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে। ডাঃ কাজী আবু রাশেদ বর্তমানে ব্লাড ট্রান্সফিউশন অফিসার ( বি টু ও) হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন।
সিভিল সার্জন বলেন, করোনা পরীক্ষার দুই কোটি ৫৮ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে হাসপাতাল ল্যাবের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট প্রকাশ কুমার দাসকে সাময়িক বরখাস্ত করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত ২১ নভেম্বর স্বাস্থ্যের মহা-পরিচালক দপ্তর থেকে তাকে বরখাস্ত করা হয়। একই সময়ে তার বিরুদ্ধে কেন বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হবে না সে জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হয়। এই নোটিশের জবাব অভিযুক্ত প্রকাশকে ১০ দিনের মধ্যে জবাব দেয়ার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়। এই আদেশের পত্রটি প্রকাশের বাড়ির ঠিকানা প্রেরণ করা হয়েছে।
ব্লাড ব্যাংকের ৭০ লাখ টাকা এফডিআর করা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে না পাওয়ার বিষয়ে ঘটনা জানতে চাইলে জেনারেল হাসপাতালে জুনিয়ার কনসালটেন্ট (ইএনটি) ডাঃ কাজী আবু রাশেদ বলেন, এ বিষয়ে এখনো তদন্ত চলমান রয়েছে। আমরা তদন্তের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। তদন্ত শেষ না হলে এ বিষয়ে নিয়ে কিছু বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেন তিনি ।
জানা গেছে, তৎকালীন সিভিল সার্জন ডাঃ আব্দুর রাজ্জাক ও আরএমও ডাঃ মাহবুবুর রহমানের আমলেই ব্লাড ব্যাংকের এফডিআর-এর ৭০ লাখ টাকা উত্তোলন হয়েছিলো। এতো বছর বিষয়টি কারো নজরে আসেনি। এই এফডিআর টাকাগুলো অগ্রণী ব্যাংকে রাখা হয়েছিলো। ব্যাংক থেকে এই টাকা সিভিল সার্জন এবং ব্লাড ট্রান্সমিউশন অফিসার (বি টু ও )-এর যৌথ স্বাক্ষর ছাড়া কেউ তুলতে পারেন না। করোনা পরীক্ষার দুই কোটি ৫৭ লাখ টাকা আত্মসাতের বিষয়টি হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ তদন্ত করা শুরু করলে তখন ব্লাড ব্যাংকের ৭০ লাখ টাকা এফডিআর অগ্রণী ব্যাংকে না থাকার বিষয়টিও ধরা পড়ে।
হাসপাতালের একাধিক সূত্রমতে, ল্যাব টেকনোলজিস্ট প্রকাশের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকে মামলা দায়ের হওয়ার পর হাসপাতালে শীর্ষ থেকে নিম্ন পর্যায়ের অনেকেই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। কারণ ওই করোনা আত্মসাতের ঘটনায় বিষয়ে অনেক রাঘম বোয়ালরা জড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 
করোনা পরীক্ষার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে অভিযুক্ত ল্যাবের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট প্রকাশ কুমার দাস বুধবার দুপুরে বলেন, তার বিরুদ্ধে দায়ের করা (দুর্নীতি দমন কমিশনার) দুদকের মামলায় তিনি হাইকোর্ট আগাম ৩ সপ্তাহের জন্য জামিন পেয়েছেন। গত ২৯ নভেম্বর তিনি হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন। আগামী ২১ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট আদালতে তাকে আত্মসমর্পনের নির্দেশ প্রদান করেছেন উচ্চ আদালত। তিনি বলেন, আমাকে বরখাস্ত করা হয়েছে সেই চিঠি পেয়েছি এবং কারণ দর্শানর চিঠির জবাব আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করেছি। বড় কর্তারা আমাকে বলির পাঠা বানানোর চেষ্টা করেছিলো বিধায় আমি পালিয়েছি। তখন থাকলে আমাকে নির্যাতন করে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়া হবে এই কথা শুনে জীবন নিয়ে পালিয়ে আদালতের দারস্থ হয়েছিলাম।