খুলনা | সোমবার | ০৬ অক্টোবর ২০২৫ | ২০ আশ্বিন ১৪৩২

৪৪ বছরের রাজনীতির পুরস্কার : মঞ্জু, আরিফুর রহমান মিঠুসহ কয়েকজনের পদত্যাগ

নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে পদ থেকে অব্যাহতি

নিজস্ব প্রতিবেদক |
১২:৪৯ এ.এম | ২৬ ডিসেম্বর ২০২১


বিএনপি’র বিভাগীয় (খুলনা) সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকে সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে অব্যাহত দেয়া হয়েছে। গতকাল শনিবার দেয়া এ অব্যাহতির পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মঞ্জু বলেছেন, ‘৪৪ বছরের রাজনীতির পুরস্কার ‘অব্যাহতি’।’ এর আগে, গত ৯ ডিসেম্বর কেন্দ্র ঘোষিত খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপি’র আহবায়ক কমিটিতে রাখা হয়নি তাকে। এতে ক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। গত ১২ ডিসেম্বর খুলনা প্রেসক্লাবে প্রেস ব্রিফিংয়ে ওই আহবায়ক কমিটির পুনঃমূল্যায়নের দাবি জানিয়েছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য মঞ্জু। এদিকে, গতকাল বিকেল থেকে গভীর রাত অবধি পত্রিকা অফিসে বিজ্ঞপ্তি ও টেলিফোনের মাধ্যমে নগর, থানা এবং ওয়ার্ড পর্যায়ের অসংখ্য নেতা-কর্মী বিএনপি থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তবে এখনি সকলে প্রকাশ্যে আসছেন না।
নগর বিএনপি’র সদ্য সাবেক সিনিয়র যুগ্ম-সম্পাদক অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম, সাবেক কাউন্সিলর মাহবুব কায়সার, আরিফুজ্জামান অপু, কোষাধ্যক্ষ এস এম আরিফুর রহমান মিঠু, আসাদুজ্জামান মুরাদ, দপ্তর সম্পাদক শামসুজ্জামান চঞ্চল ও ২২নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সভাপতি এমকে তরিকুল­¬াহ্সহ অসংখ্য নেতার টেলিফোনে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। দল থেকে নিজেদের পদত্যাগের সিদ্ধান্তের কথাও ভাবছেন তারা। গত রাতে ২২নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সভাপতি এমকেএ তরিকুল­াহ্, সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাহিদ কামাল টিটো, মোঃ সামছুল আলম খান, মোঃ তারিকুল আলম, সাহেব আলী, মোঃ নজরুল ইসলাম নান্না, মোঃ রফিক, মোঃ ফজলুর রহমান, জাহাঙ্গীর মলি­¬ক, মোঃ বেলাল তালুকদার, এস এম শাহাব্দ্দুীন, মোঃ আবুল বাশার, কবির আহমেদের স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক ফোরামের ১ম যুগ্ম-আহবায়ক সারুজ্জামান মুকুল পদত্যাগ করেছেন।
অন্যদিকে, নগর বিএনপি’র সদ্য সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক সাবেক কাউন্সিলর মাহবুব কায়সার বলেন, “শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাতে প্রতিষ্ঠাকালীন যুবদলের মধ্যদিয়ে বিএনপি’র রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হই। সেই থেকে কোনদিন আদর্শচ্যুত হয়নি। ওয়ার্ড, থানা ও মহানগর বিএনপি’র বিভিন্ন পর্যায়ে দলের অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছি। নগরীর ২২নং ওয়ার্ডে তিনবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছি। শহিদ জিয়ার আর্দশে অনুপ্রাণিত হয়ে বিএনপি’র রাজনীতি করছি। রাজপথের পরিশ্রমী ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা হিসেবে নজরুল ইসলাম মঞ্জুর নেতৃত্বে বিএনপি করেছি। স¤প্রতি বিএনপিতে দুর্বৃত্তায়ন শুরু হয়ে গেছে। দুর্বৃত্তদের আস্ফালন ও যোগ্য নেতৃত্বের অবমূল্যায়নের ফলে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করছি। তবে বিএনপি’র আর্দশের সাথেই আছি। যদি কখনো যোগ্য নেতৃত্বের মূল্যায়ন হয়, তাহলে দলের দায়িত্বে ফিরবো।”
এদিকে, বিএনপি’র কতিপয় নীতি নির্ধারকদের অন্যায় সিদ্ধান্ত ও খুলনা মহানগর বিএনপি’র আহবায়ক কমিটি গঠনের প্রতিবাদে খালিশপুর থানা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন দলের নগর শাখার সাবেক কোষাধ্যক্ষ এস এম আরিফুর রহমান মিঠু।
গতকাল দলের মহাসচিবের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে তিনি উলে­¬খ করেছেন, দলের মূল ও ত্যাগী নেতা-কর্মীদের বাদ দিয়ে খুলনা মহানগর আহŸায়ক কমিটি গঠনের অন্যায় সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আমি মহানগরের কোষাধ্যক্ষ ও খালিশপুর থানা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক দু’টি পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করছি।
খুলনা মহানগর বিএনপি’র সাবেক সিনিয়র যুগ্ম-সম্পাদক অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম বলেন, “শত শত নেতা-কর্মী ফোন দিয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তারা এই সিদ্ধান্তে হতবাক বিস্মিত এবং ক্ষুব্ধ। তারা মনে করছেন না যে এই সিদ্ধান্ত দলের জন্য মঙ্গলজনক। পার্টির এই সিদ্ধান্ত পুনঃবিবেচনা করা মূলত তাদের দাবি। আমাদেরও আবেদন।” 
তিনি বলেন, “ব্যক্তি কেন্দ্রিক বলয় সৃষ্টির যে প্রবণতা তারই অংশ হিসেবে আমরা মনে করছি, যে এই ধরনের সিদ্ধান্ত। একজন ব্যক্তিকে প্রতিষ্ঠিত করতেই আমাদের মতো পোড়খাওয়া, ত্যাগী, সংগ্রামী নেতাদের বাদ দিয়ে মহানগর কমিটি গঠন। আর এই মহানগর কমিটি গঠন পুনঃমূল্যায়ন চাওয়ার জন্য এতোদিনের ত্যাগী নেতা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদককে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তারকা রাজনীতিবিদরা যখন বিএনপি’র সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, বেঈমানী করেছেন। দলের সেই নেতৃত্বশূন্য অবস্থায় নজরুল ইসলাম মঞ্জুই দলকে কাঁধে করে এই জায়গায় নিয়ে এসেছেন। তার প্রতি এই সিদ্ধান্ত অবিবেচনাপ্রসূ। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই দল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর প্রভাব খুলনায় দলের আন্দোলন-সংগ্রাম এবং নির্বাচনে পড়বে। আমরা বিএনপি’র মঙ্গল চাই। আরও বৃহৎ পরিসরে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।”
সোনাডাঙ্গা থানা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “নেতা-কর্মীরা হতাশ, মনক্ষুন্ন, প্রচন্ড কষ্ট পেয়েছে। অনেকেই মেনে নিতে পারছে না। শুধু নেতা-কর্মীই নয়, সাধারণ মানুষ এই বিষয়টাকে ভালোভাবে নেয়নি। তিনি বলেন, দলের থানা কমিটির নেতারা সবাই একসঙ্গে রয়েছি। সবাই একসাথে সভা করে পরবর্তী করণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।”
মঞ্জুর প্রতিক্রিয়া : দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে তাঁর পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে বিএনপি। এর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া তিনি বলেন, “শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাত ধরে বিএনপিতে এসেছি। খালেদা জিয়ার সাথে থেকে রাজনীতি করেছি। দলের দুর্বৃত্তায়ন ও দুর্নীতি নিয়ে কথা বলেছি। বিএনপি আজ ৪৪ বছরের রাজনীতির ‘পুরস্কার’ আমাকে দিয়েছে।”
নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ‘কারো সাথে আলাপ না করে হঠাৎ করে খুলনায় দু’টি কমিটি দেয়া হয়েছে। মহানগর ও জেলায় যাদের নেতৃত্বে আনা হয়েছে খুলনায় তাদের অবদান কি? তারা কি আমাদের থেকে অনেক বেশি যোগ্য? এই কথাগুলোই আমি বলেছিলাম। তিন মাস আগে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ২৯ পৃষ্ঠার দরখাস্ত দিয়েছি। সেই আবেদন গ্রাহ্য হয়নি। উল্টো এ্যাকশন নেয়া হয়েছে।’
বিএনপি’র এই কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘খুলনায় বিএনপিকে ধ্বংসের দারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দলের এই সিদ্ধান্ত আমার প্রতি আবিচার। বিএনপি’র রাজনীতি করেই আমি তৈরি হয়েছি। বিএনপি’র কারণেই আজ আমি নজরুল ইসলাম মঞ্জু। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বিএনপি করে যাবো।’
বিএনপি’র জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গতকাল শনিবার প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে মঞ্জুকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, খুলনা বিভাগীয় বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে অব্যাহতি দিয়ে খুলনা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতকে ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।