খুলনা | বুধবার | ০৯ জুলাই ২০২৫ | ২৫ আষাঢ় ১৪৩২

মানা হচ্ছে না সড়ক থেকে ১০ ফুট দূরে মৎস্য ঘের ও পুকুর খননের নিয়ম!

খুলনায় মৎস্য ঘের ও জলাশয় গিলে খাচ্ছে গ্রামীণ সড়ক!

এস এম আমিনুল ইসলাম |
১২:৫৭ এ.এম | ০৪ জানুয়ারী ২০২২


খুলনায় মৎস্য ঘের ও জলাশয় প্রতিনিয়ত গিলে খাচ্ছে গ্রামীণ সড়ক। ফলে শত শত কোটি টাকার উন্নয়নের দীর্ঘ মেয়াদী সুফল মিলছে না গ্রামীণ জনপদে। উল্টো জনসাধারণের চলাচলে পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি।
জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর (এলজিইডি)-এর আওতায় খুলনার ৯ উপজেলায় (ডুমুরিয়া, পাইকগাছা, কয়রা, বটিয়াঘাটা, দাকোপ, রূপসা, তেরখাদা, ফুলতলা ও দিঘলিয়া) মোট ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫৩ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। এর মধ্যে উপজেলা সড়ক রয়েছে ৩৬ হাজার ৮৭৬ দশমিক ৩২ কিলোমিটার, ইউনিয়ন সড়ক রয়েছে ৪১ হাজার ৭৮১ দশমিক ৪ কিলোমিটার এবং ২ লাখ ৭৪ হাজার ৬৯৬ দশমিক ৯ কিলোমিটার গ্রামীন সড়ক রয়েছে।
বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, অনেক সড়কের গাঁ ঘেষে রয়েছে অসংখ্য জলাশয়, যেমন-পুকুর, ডোবা, দিঘি, মৎস্য ঘের ও নালা। এসব জলাশয়ে প্রতিনিয়ত ধসে পড়ছে লাগোয়া সড়কগুলোর পাড়। এতে গ্রামীণ সড়ক নষ্ট হয়ে চলাচলে চরম ঝুঁকি তৈরি করছে। অনেক সড়কে চলাচলে পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি।
ডুমুরিয়ার সাজিয়াড়া গ্রামের বাসিন্দা ফারুক আহমেদ জানান, সাজিয়াড়া-থুকড়া বাজার সড়ক মাত্র দেড় থেকে দুই বছর আগে নির্মিত হয়। কিন্তু এ সড়কের সাজিয়াড়া নামক স্থানে কিছু অংশ পুকুরে ধসে পড়েছে। ধসে পড়া ওই স্থানটি ভাঙতে ভাঙতে সরু হয়ে গেছে। সেখানে প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। ফলে মাঝারী ও বড় ধরনের যানবাহন চলাচলে বিঘœ ঘটছে। 
কয়রার বাসিন্দা মুরাদ হোসেন ও ডুমুরিয়ার গোনালী গ্রামের ভ্যান চালক দুলাল বিশ্বাস জানান, তাদের উপজেলায় কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক নির্মাণ ও উন্নয়ন হলেও দ্রুত তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সড়কে বিটুমিন উঠে ছোট-বড় গর্ত তৈরি হচ্ছে। সড়কের দুই পাশ ধসে সরু হয়ে যাচ্ছে। এতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
পাইকগাছা উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ হাফিজুর রহমান বলেন, সড়ক থেকে ১০ ফুট দূরে মৎস্য ঘের ও পুকুর কাটার নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু কয়রা ও পাইকগাছা উপজেলায় সেই নির্দেশনা উপেক্ষা করে সড়কের গা ঘেঁষেই ঘের কেটে মাছ চাষ করা হচ্ছে। নোটিশ দিয়েও তাদের শোনানো যাচ্ছে না। এতে বর্ষা মৌসুমে সড়কের কানায় কানায় পানি পূর্ণ থাকে। আর ভারী বর্ষায় সড়কের উপর দিয়ে পানির স্রোত প্রবাহিত হয়। এতে দ্রুতই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সড়কের কার্পেটিং। অনেক স্থানে সড়কের পাশ ধসে পড়ছে। ফলে কোটি কোটি টাকা খরচে সড়ক উন্নয়ন করা হলেও আসলে তা দীর্ঘ মেয়াদে কাজে আসছে না। দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
দকোপ উপজেলা প্রকৌশলী ননী গোপাল বলেন, সড়কের দুইপাশ ঘেঁষে প্রচুর পুকুর, দিঘি ও জলাশয় রয়েছে। ১০ ফুট জায়গা ছেড়ে পুকুর ও ঘের খননের নিয়ম থাকলেও মানুষ তা মানছে না। সড়ক ঘেঁষে এগুলো খনন করা হচ্ছে। আবার অনেক পরিবহন ১৫-২০ টন মালামাল নিয়েও সড়কে চলাচল করছে। অন্যদিকে বেশির ভাগ সড়কে সোল্ডার নেই। কারণ মানুষ মাটি দিতে চায় না, জায়গাও ছাড়তে চায় না। এসব কারণে দ্রুত সড়ক নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই সড়ক রক্ষায় জনপ্রতিনিধিদের উচিত সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো।
খুলনা স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর (এলজিইডি)-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, সড়কের পাশে পুকুর কাটা ও মাছের ঘের করা যাবে না। এটা আইনে নিষেধ রয়েছে। এ আইন অমান্য করলে উপজেলা সমন্বয় সভায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়। 
তবে দাকোপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিন্টু বিশ্বাস বলেন, এগুলো দেখার দায়িত্ব স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তরের।