খুলনা | রবিবার | ০৬ জুলাই ২০২৫ | ২২ আষাঢ় ১৪৩২

অনলাইনে ভূমিকর ভোগান্তি হবে দূর

মোঃ মঈনউদ্দীন |
০১:৩২ এ.এম | ১৩ জানুয়ারী ২০২২


জমির উদ্দিন এর পৈতৃক নিবাস সাতক্ষীরা জেলায়। তিনি চাকরি সূত্রে বর্তমানে বসবাস করেন ঢাকায়। ভবিষ্যতে খুলনাতে স্থায়ী আবাস গড়তে চান তাই এক টুকরো জমি কিনেছেন দীঘলিয়া উপজেলাতে। আবার যশোরে শ্বশুরবাড়ি থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে কিছু জমির মালিক হয়েছেন তার স্ত্রী। প্রতিবছর পৃথক পৃথক ভ‚মি কার্যালয়ে গিয়ে ভ‚মিকর জমা দিয়ে রশিদ নিতে হয় তাকে। ভ‚মি কার্যালয়ে গিয়ে অনেক সময়ক্ষেপন হয়, অনেক ক্ষেত্রে অল্প খাজনা দিতেও বকশিসের নামে বাড়তি টাকা গুণতে হয়। তার মতো ভ‚মির মালিকদের খাজনা দিতে বিভিন্ন জেলায় ভ‚মি অফিসে যাতায়াতে যেমন সময় ও খরচ বেশি লাগে তেমনি নানা ধরণের ভোগান্তি পোহাতে হয়। কিন্তু ভ‚মি মন্ত্রণালয়ের একটি উদ্ভাবনী উদ্যোগের ফলে সেই ভোগান্তির দিন শেষ হতে চলেছে। এখন যে কেউ ঘরে বসেই অনলাইনে যে কোন জায়গার ভ‚মিকর দিতে পারবেন সহজেই। ২০২১ সালের ৮ সেপ্টেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিক ভাবে অনলাইনে ভ‚মিকর সেবা উদ্বোধন করেন, সেই থেকে বদলে যায় দৃশ্যপট।

কিভাবে দেওয়া যায় অনলাইন ভ‚মিকর
অনলাইনে ভ‚মিকর পরিশোধ করতে প্রথমে ভ‚মির মালিককে www.ldtax.gov.bd  ওয়েবসাইটে গিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, জন্ম তারিখ এবং মোবাইল নম্বর দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। এছাড়া ভ‚মি সেবা সংক্রান্ত হটলাইন ১৬১২২ তে ফোন করে বা ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে গিয়ে এসব তথ্য দিয়েও নিবন্ধন করে প্রোফাইল তৈরি করা যাবে। একবার প্রোফাইল তৈরি হয়ে গেলে সেটি ব্যবহার করে নিবন্ধনকারীর মালিকানাধীন সকল জমির খাজনা অনলাইনে পরিশোধ করা যাবে। দ্বিতীয় ধাপে প্রোফাইলের খতিয়ান অপশনে গিয়ে জেলা, উপজেলা, মৌজা ও জমির খতিয়ান নম্বর উলে­খ করে সংরক্ষণ করলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংশ্লিষ্ট ভ‚মি কার্যালয়ের ভ‚মি সহকারী কর্মকর্তা বা তহশীলদারের কাছে চলে যাবে। আবেদনকারীর দেওয়া তথ্য সঠিক থাকলে তহশীলদার তিন থেকে সাত দিনের মধ্যে একটি হোল্ডিং নম্বর খুলে দেন। এই হোল্ডিং নম্বর পাওয়াটা অনলাইনে কর দেওয়ার জন্য অপরিহার্য। প্রতিটি খতিয়ানের জন্য আলাদা হোল্ডিং নম্বর হবে। হোল্ডিং নম্বর এসএমএস এর মাধ্যমে আবেদনকারীর মোবাইলে চলে যাবে আবার প্রোফাইলের হোল্ডিং মেনুতেও প্রদর্শিত হবে। উক্ত হোল্ডিংয়ের ভ‚মি উন্নয়ন কর প্রদান করতে চাইলে অনলাইন পেমেন্ট বাটনে ক্লিক করে যে কোন পেমেন্ট মাধ্যম নির্বাচন করে স্টেপগুলি অনুসরণপূর্বক পেমেন্ট নিশ্চিত করা যাবে।

পেমেন্টের যত মাধ্যম
অনলাইনে ভ‚মিকর পরিশোধের ক্ষেত্রে বিকাশ, উপায়, নগদ, রকেটের মতো মোবাইল ব্যাংকিং, সরকারি একপে ও বিভিন্ন ব্যাংকের কার্ডসহ ৩৬ ধরণের পেমেন্ট টুলস ব্যবহার করে কর পরিশোধ করা যায়। মোবাইল ব্যাংকিং এর পে-বিলের মাধ্যমে ভ‚মিকর পরিশোধ করতে চাইলে হোল্ডিং মেনুর ‘বিস্তারিত’ অপশনে ক্লিক করে ‘টোকেন জেনারেট’ অপশনের মাধ্যমে টোকেন জেনারেট করে নিতে হবে। নিবন্ধিত মোবাইল নম্বরে এসএমএস এর মাধ্যমে টোকেন নম্বরটি পাওয়া যাবে। জেনারেট করার ৭২ ঘন্টা বা তিন দিনের মধ্যে কর পরিশোধ করতে হবে। পেমেন্ট নিশ্চিত করার ৭২ ঘন্টার মধ্যে কর পরিশোধের প্রমাণপত্র বা দাখিলা আবেদনকারীর প্রোফাইলের দাখিলা মেনুতে প্রদর্শিত হবে ও সংরক্ষিত থাকবে যা প্রয়োজনে প্রিন্ট করে নেওয়া যাবে।

কেমন সাড়া মিলছে
অনলাইন ভ‚মিকর সেবা চালুর পর থেকে তা জনগণের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। দেশের চার কোটি পাঁচ লাখের মতো হোল্ডিংয়ের মধ্যে ইতোমধ্যে ৮৫ শতাংশের বেশি হোল্ডিং অনলাইনে নিবন্ধিত হয়েছে। দৈনিক গড়ে এক থেকে দেড় লাখের মতো হোল্ডিং অনলাইনে নিবন্ধিত হচ্ছে। খাজনা আদায়েও বেশ প্রভাব পড়েছে। ২০২১ সালের ৮ সেপ্টেম্বর চালুর পর মাত্র চার মাসে ১৫ কোটি টাকার বেশি খাজনা আদায় হয়েছে।

সতর্ক থাকতে হবে যে বিষয়ে
নিবন্ধন করার পর তথ্য দিয়েও হোল্ডিং নম্বর পেতে দীর্ঘ সময় লাগছে বলে অনেকে অভিযোগ করেন। সেবা প্রদানকারী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এ বিষয়ে বলেন, অনেক ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারীরা আবেদন করেন কিন্তু দেখা যায় খতিয়ানে তার বাবা বা মায়ের নাম। নাম মিল না থাকায় হোল্ডিং অনুমোদন হয় না ফলে অনলাইনে কর প্রদানের সুবিধা ভোগ করা যায় না। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ হচ্ছে উত্তরাধিকারীদের প্রথমে নিজের নামে জমির মিউটেশন বা নামজারি করে নিতে হবে তাহলে আর এ ধরণের সমস্যা হবে না। আর তহশিলদারদের কাছ থেকে কোনো অসহযোগিতার অভিযোগ থাকলে তা হটলাইন নম্বরে ফোন করে জানানোর সুযোগ তো রয়েছেই।
পরিশেষে বলা যায় যাদের জমি আছে, বাড়ি বা ফ্ল্যাট এর মালিকানার অংশ হিসেবে জমি পেয়েছেন, তাদের সবার জন্য ভ‚মিকর দেওয়া বাধ্যতামূলক। পরপর তিন বছর খাজনা না দিলে মালিকের বিরুদ্ধে রেন্ট সার্টিফিকেট মামলার বিধান রয়েছে। ভোগান্তির কারণে অনেকে নিয়মিত খাজনা না দেওয়ায় মামলার সংখ্যা বাড়ছিল। এসব বিবেচনায় ভ‚মি মন্ত্রণালয়ের অধীন ভ‚মি সংস্কার বোর্ড অনলাইনে কর পরিশোধের যুগান্তকারী উদ্যোগ গ্রহণ করে। কর দিতে ভ‚মির মালিককে আর ভ‚মি কার্যালয়ে যেতে হচ্ছে না যার ফলশ্র“তিতে সময় ও খরচের অপচয় কমছে, দূর হচ্ছে সব ধরণের ভোগান্তি।
লেখক : তথ্য অফিসার, পিআইডি, খুলনা।