খুলনা | রবিবার | ০৮ জুন ২০২৫ | ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

রাজনৈতিক চাপে বাধ্য হয়ে তালিকা পাঠিয়েছি : অধ্যক্ষ

সাতক্ষীরা সিটি কলেজের নিয়োগপ্রাপ্ত ১২ শিক্ষকের তথ্য জালিয়াতির ঘটনার তদন্ত সম্পন্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা |
০১:৩৬ এ.এম | ০২ ফেব্রুয়ারী ২০২২

 

সাতক্ষীরা সিটি কলেজের অনার্স শাখায় নিয়োগপ্রাপ্ত ১০ জন ও কৃষি ডিপ্লে¬ামা শাখায় নিয়োগপ্রাপ্ত ২ জন শিক্ষকের তথ্য জালিয়াতি করে তৃতীয় শিক্ষক হিসেবে এমপিওভুক্তির জন্য তালিকা মাউশিতে পাঠানোর অভিযোগের তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে মাউশির মহাপরিচালকের নির্দেশে খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে  একটি তদন্তকারি দল সিটি কলেজে এসে সরেজমিনে এ তদন্ত করেন। তদন্তকালে অধ্যক্ষ আবু সাঈদ নিজের কৃতকর্মের জন্য ভুল স্বীকার করেছেন।
জানা যায়, সাতক্ষীরা সিটি কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের বঞ্চিত ও প্রতারণার শিকার শিক্ষক বিধান চন্দ্র দাশ ও তার স্ত্রী চম্পা রানী মন্ডল মাউশি’র মহাপরিচালক বরাবর পৃথক দু’টি অভিযোগ করেন। এতে বলা হয় অধ্যক্ষ মোঃ আবু সাঈদ ২০১৫ সালের ২৬ জানুয়ারি সাতক্ষীরা সিটি কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদানের পর পরিচালনা পর্ষদের তৎকালীন সভাপতি, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ জাহিদুর রহমান, বর্তমান জেলা শিক্ষা অফিসার আবদুল­াহ আল মামুন, খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের সমসাময়িক কর্তব্যরত কর্মকর্তার যোগাসাজসে ২০১৫ সালের নভেম্বর মাস থেকে ২০১৯ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষকদের  নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, নিয়োগ ও যোগদান সংক্রান্ত তথ্য জালিয়াতি, তথ্য গোপন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকুরিবিধি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের  জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা, ২০১৮ সালের ২৮ আগস্ট  ও ২০১৯ সালের ১২ মার্চ জারিকৃত পরিপত্র উপেক্ষা করে উৎকোচ নিয়ে  ডিগ্রী স্তরের ২য় ও ৩য় শিক্ষক হিসেবে ২১ জন শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করেন। এ সময় আরো ১২ জনের তথ্য জালিয়াতি করে এমপিও ভুক্তির জন্য মাউশিতে তথ্য পাঠান অধ্যক্ষ আবু সাঈদ।
অভিযোগপত্রে আরো বলা হয়েছে, উপরোক্ত তথ্য জালিয়াতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে তদন্তে আসেন উপ-সহকারী পরিচালক প্রবীর কুমার দাশ। যার তদন্ত এখনও চলমান আছে। একই বিষয়ে গত বছরের ফেব্র“য়ারি মাসে মাউশির নির্দেশে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালকসহ তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত দল তদন্ত করেন এবং তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
পরবর্তীতে সিটি কলেজের অনার্স শাখায় নিয়োগপ্রাপ্ত ১০ জন  ও কৃষি ডিপ্লে¬ামা শাখায় নিয়োগপ্রাপ্ত ২ জন শিক্ষকের তথ্য জালিয়াতি করে তৃতীয় শিক্ষক হিসেবে এমপিও ভুক্তির জন্য তালিকা মাউশিতে পাঠানোর অভিযোগের তদন্ত করতে মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় সিটি কলেজে আসেন মাউশির খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান। এ সময় তিনি মাউশিতে এমপিও ভুক্তির জন্য তালিকাভুক্ত ১২ জন শিক্ষকের কাছে নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চাইলে ১০ জন শিক্ষক বলেন, তারা অনার্স শাখায় নিয়োগ। অপর দু’জন বলেন, তারা কৃষি ডিপ্লোমায় নিয়োগ। তারা কখনো ডিগ্রী স্তরের শিক্ষক ছিলেন না। কে বা কারা তথ্য জালিয়াতি করে মাউশিতে এমপিও ভুক্তির জন্য তালিকা পাঠিয়েছেন তা তাদের জানা নেই। তদন্তকারী কর্মকর্তার বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে অধ্যক্ষ আবু সাঈদ বলেন, রাজনৈতিক চাপে বাধ্য হয়ে তাকে অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে তালিকা পাঠাতে হয়েছে। এজন্য তিনি ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চান।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা সিটি কলেজের অধ্যক্ষ আবু সাঈদের সঙ্গে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, সবই তো শুনেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে। আমি আর কি বলব।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী উপ-পরিচালক মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রাজনৈতিক চাপে পড়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ১২ জন শিক্ষককে এমপিও ভুক্তির জন্য নাম পাঠিয়ে তিনি ভুল করেছেন মর্মে তার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন অধ্যক্ষ আবু সাঈদ।