খুলনা | রবিবার | ১৮ মে ২০২৫ | ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

টাটা-বাই, হাই-হ্যালো বনাম ইসলামী সালাম

প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউসুফ আলী |
০২:২৩ এ.এম | ১৩ মে ২০২২


পৃথিবীর প্রথম মানুষ হযরত আদম আলাইহিস সালামকে মহান আল­াহপাক সৃষ্টি করার সাথে সাথে বললেন, উপস্থিত সকলকে সালাম করো। তিনি সকলের উদ্দেশ্যে বললেন, আসসালামু আলাইকুম...। আবার যখন মানুষ জান্নাতে যাবে সেখানেও ফেরেশতাদের পক্ষ থেকে বলা হবে সালাম। অর্থাৎ সালাম সকল মানুষের আদি-অন্তের সাথে জড়িত একটি উত্তম আমল। কিন্তু আজকাল এই সালামকে বাদ দিয়ে অনেকে হাই, হ্যালো, টাটা, বাই ইত্যাদি বলে মানুষকে সম্মোধন করছে ও বিদায় দিচ্ছে। এমনকি ছোট ছোট বাচ্চাদেরকেও এগুলো না বুঝেই শিক্ষা দিচ্ছে। যদি পাঠকদের জিজ্ঞাসা করা হয় টাটা, বাই, হাই  এগুলোর অর্থ কি? অনেকেইে বলবেন এর প্রকৃত অর্থ জানি না। আসলেই এগুলোর ভালো কোন অর্থ নেই। অপর দিকে সালাম অর্থ শান্তি। সালাম একই সঙ্গে সদ্ভাষণ, আবার উত্তম দোয়াও বটে। পৃথিবীতে মানুষকে সদ্ভাষণের জন্য যতো ধরণের বাক্য বা পদ্ধতি আছে তার মধ্যে সালাম হলো সর্বোত্তম পদ্ধতি। উদাহরণ স্বরূপ, আমরা কাউকে দেখা হলে সাধারণত বলি, হাই, হ্যালো, কেমন আছেন?; গুড মর্নিং (সু-প্রভাত); গুড আফটারনুন (শুভ বিকেল);  গুড নাইট (শুভ রাত্রি) ইত্যাদি.. ইত্যাদি। কাউকে যদি বলা হয়, কেমন আছেন? তাহলে সে যদি ভালো না থাকে তারপরও লৌকিকতার কারণে উত্তর দিবে, ভালো আছি। অন্তরে বলবে ভালো নেই, আর মুখে বলবে, ভালো আছি। অর্থাৎ অনিচ্ছাকৃত ভাবেই তাকে মিথ্যার আশ্রয় নিতে হবে। আর একটা কথা ধরা যাক, এক ব্যক্তি বাংলাদেশ থেকে সকালে অন্য এক ব্যক্তিকে আমেরিকায় ফোন করলো এবং বললো, গুড মর্নিং (সু-প্রভাত)। এই ক্ষেত্রে সে মারাত্মক একটি ভুল করলো। কারণ আমেরিকায় তখন গভীর রাত। আমেরিকায় অবস্থানকারী সে ব্যক্তি তাড়াতাড়ি ফোন ধরে ভড়কে যাবে, বুঝতে পারবে না সে কি বলবে; গুড মর্নিং (সু-প্রভাত); গুড আফটারনুন (শুভ বিকেল) না  গুড নাইট (শুভ রাত্রি)। তখন তার হিসেব করে দেখতে হবে বাংলাদেশে তখন সময় কতো। এটা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। আর যদি সে সাথে সাথে আমেরিকার সময় অনুসারে বলে, গুড নাইট (শুভ রাত্রি); তাহলে সেও মারাত্মক একটি ভুল করলো। কারণ বাংলাদেশে তখন কেবল সকাল হলো। সুতরাং ঝামেলাটা থেকেই গেলো। আরও যে সব সদ্ভাষণের বাক্য আছে তা ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, এগুলোর কোন সুনির্দিষ্ট ভালো মানে নেই। আর ইসলামের সদ্ভাষণ কতো সুন্দর! আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল­াহ। অর্থাৎ তোমার ওপর মহান আল­াহ’র শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক। এটা কোন ব্যক্তি, স্থান বা সময়ের সঙ্গে সম্পর্কিত না। কেউ যদি ভালো থাকে, তাহলে এর অর্থ হলো মহান আল­াহ তোমার শান্তি আরও বাড়িয়ে দিক। আর যদি খারাপ অবস্থার মধ্যে থাকে তাহলে এর অর্থ হলো মহান আল­াহ’র রহমতে তোমার অশান্তি দূর হোক এবং তোমার কাছে শান্তি আসুক।
সালাম ইসলামের সৌন্দর্য্য। মহানবী (সাঃ) আমাদেরকে বেশি বেশি সালামের প্রচলন করতে বলেছেন। এক হাদিসে হুজুর (সাঃ) এরশাদ করেছে- হে লোকেরা, তোমরা পরস্পরের মধ্যে সালামের ব্যাপক প্রচলন করো, অভুক্তদের আহার করাও, আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সদ্ব-ব্যবহার করো এবং গভীর রাতে মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন নামাজ পড়ো। তাহলে তোমরা নির্বিঘেœ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে (তিরমিজি)। হযরত আব্দুল­াহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত: এক ব্যক্তি রসুলুল­াহ (সাঃ) কে প্রশ্ন করলোঃ ইসলামে সবচেয়ে ভালো কাজ কি? তিনি জবাব দিলেন, অভুক্তদের আহার করানো ও পরিচিত অপরিচিত সবাইকে সালাম করা (বুখারি ও মুসলিম)। সালামের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে মহব্বত পয়দা হয়। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, মহানবী (সাঃ) এরশাদ করেছেনঃ তোমরা ঈমান না আনা পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর পরস্পরকে ভালোবাসা না পর্যন্ত তোমরা ঈমানের পূর্ণতা হাসিল করতে পারবে না। আর আমি কি তোমাদের এমন কাজের কথা বলবো না, যা তোমাদের ভালোবাসা বৃদ্ধি করবে? তা হলো, তোমরা নিজেদের মধ্যে সালামের প্রচলন করো (মুসলিম)। মহান আল­াহপাক এ প্রসঙ্গে এরশাদ করেন, তোমরা অন্যদের ঘরে প্রবেশ করো না যতক্ষণ না তোমরা অনুমতি গ্রহণ করো এবং ঘরের অধিবাসীগণকে সালাম প্রদান না করো (সূরা নুর : ২৭)। আল­াহ তায়ালা এরশাদ করেন, আর যখন কেউ তোমাদের দোয়া করে বা সালাম দেয়, তোমরা তার চেয়ে ভালো কথায় সালাম করো অথবা সেই কথা গুলোই বলে দাও; নিশ্চয় আল­াহ সর্ববিষয়ে হিসাব-নিকাশ গ্রহণকারী (সূরা নিসা : ৮৬)। এ ব্যাপারে হযরত ইমরান হুসাইন (রাঃ) একটি হাদিস বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি মহানবীর (সাঃ) কাছে এসে বললেন, আসসালামু আলাইকুম। তিনি তার সালামের জবাব দিলেন। সে ব্যক্তি বসে পড়লো। তখন রসুল (সাঃ) বললেন, তুমি ১০টি নেকি পেয়েছো। এরপর আর এক ব্যক্তি এসে বললেন, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল­াহ। তিনি তার সালামের জবাব দিলেন। সে ব্যক্তিও বসে পড়লো। তখন রসুল (সাঃ) বললেন, তুমি ৩০টি নেকি পেয়েছো (আবু দাউদ, তিরমিজি)। এক হাদিসে এসেছে, লোকদের মধ্যে সেই ব্যক্তি আল­াহ’র কাছে সবচেয়ে নিকটবর্তী যে আগে সালাম দেয় (আবু দাউদ)। তাই আসুন আমরা টাটা, বাই, হাই-হ্যালো ইত্যাদি পরিহার করে সমাজে বেশি বেশি সালামের প্রচলন করি। 

(লেখক: মৎস্য বিজ্ঞানী ও অধ্যাপক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়)