খুলনা | শনিবার | ২১ জুন ২০২৫ | ৭ আষাঢ় ১৪৩২

সুখী পরিবার : এক অনন্য শক্তি

স্নিগ্ধা মৌ |
০১:৫২ এ.এম | ১৬ মে ২০২২


আন্তর্জাতিক পবিরার দিবস ছিল গতকাল রবিবার। প্রতিবছর ১৫ মে সারা বিশে^ পালিত হয়ই দিনটি। যদিও বাংলাদেশে মহা সমারোহে এই দিনটি পালিত হতে দেখা যায় না। তবে শান্তিময় ব্যক্তিগত জীবনের জন্য এই দিনটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘ ঘোষণা করে পরিবারের সাথে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের গুরুত্ব এবং এর মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক পরিবার দিবসের পথচলা শুরু। এই দিনটি আমাদের সুযোগ করে দেয় পরিবারের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠতে। শুধু সচেতনতা সৃষ্টি নয় বরং এই দিনটি পরিবারকে প্রভাবিত করে এমন সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং অন্যান্য বিষয়গুলি নিয়ে চিন্তা করার সুযোগ সৃষ্টি করে।
প্রতিবছর জাতিসংঘ পরিবার দিবস নিয়ে একটি মূলসর ঘোষণা করে। ২০২২ সাল আন্তর্জাতিক পরিবার দিবসের মূলসুর, “পরিবার এবং নগরায়ন”। বর্তমানে নগরায়ন সময়ের দাবি। তবে এর ইতিবাচক এবং নেতিবাচক উভয় ধরণের লক্ষ্য করা যায়। বিশ^ায়নের এই যুগে ক্রমান্বয়ে ছোট হয়ে আসা পরিবার এবং শিথিল হয়ে যাওয়া পারিবারিক বন্ধনকে আরা মজুত করা চেষ্টা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। পরিবার-বান্ধব নগরায়ন মধ্য দিয়েই যেন পারিবারিক অটুট বন্ধন থাকে, একই সাথে উন্নয়নের ধারাও যেন অব্যাহত থাকে।
পরিবার একটি শিশুর প্রথম শিক্ষা কেন্দ্র। বলা হয়ে থাকে পরিবার একটি সমাজের প্রাণকেন্দ্র। পারিবারিক জীবনের জ্ঞন, মূল্যবোধ, নৈতিকতা একজন মানুষ নিজের ভিতরে লালন করে আমৃত্যু। পারিবারিক সংস্কার মানুষের রন্ধ্রে রন্ধ্রে থেকে যায় যুগের পর যুগ। একটি সুখী পরিবার আপনাকে যে শান্তিময় জীবন দিতে পারে, সেটি অনেক টাকা দিয়েও আপনি কিনতে পারবেন না। সুখী পরিবারের সঙ্গা দিয়ে অনেক দ্বিমত থাকতে পারে। মানুষের প্রয়োজন, রুচিবোধ এবং বৈচিত্র্যময় ব্যক্তিত্বের কারণে সুখের সঙ্গা ভিন্ন ভিন্œ হলেও, পরিবারিক বন্ধনের প্রয়োজনীয়তা আমরা সকলেই এক বাক্যে স্বীকার করি। প্রতিদিন লাগাতার ছুটে চলা, ব্যস্তময় জীবন-যাপনের ফাঁকেও আপনি চাইলে আপনার পরিবাররের সাথে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারেন।
১। পরিবারের জন্য আলাদা সময় রাখুন : কর্মব্যস্ত জীবনে আপনাকে রুটিন মাফিক চলতে হয় একথা সত্য। তবে সারাদিনের কর্মপরিকল্পনার মধ্যে পরিবারের জন্য নির্দিষ্ট কিছু সময় রাখুন। আধা ধন্টা বা ১ ঘন্টা সময় এমন ভাবেই নিজের রুটিনে রাখুন যেন সেই সময়টি মোবাইল, গেজেট বা অন্যান্য যেকোন কিছু সরিয়ে রেখে নিজের পরিবারকে সময় দিতে পারেন।
২। বিশেষ দিবসগুলি পালনে মনোযোগ দিন : বিশেষ দিবস পালনের ক্ষেত্রে আমাদের অনীহা কাজ করে অনেকের। বাড়তি খরচের চিন্তাও মাথায় আসে। তবে চাইলে ঘরোয়া পরিবেশে খুব সাধারণ ভাবেই আপনার প্রিয়জনদের সাথে অসাধারণ সময় কাটাতে পারেন আপনি। বিশেষ দিনগুলি আপনাকে নিজের পরিবাররের কাছে আসার সুযোগ করে দেয়।
৩। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দিন : প্রত্যেকটি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা। একই পরিবারের সদস্য হলেও প্রত্যেকেই আলাদা ব্যক্তিসত্ত¡া। বেড়ে ওঠা থেকে শুরু করে নানা বিষয় আমাদের জীবনকে প্রভাবিত করে। আর এইসব বিষয় থেকে মানুুষ চাইলেই বেরিয়ে আসতে পারে না। সুস্থ এবং সুন্দর পরিবারের জন্য আমাদের অনেক সময় ত্যাগস্বীকার করতে হয়, অন্যের মতামতকে প্রাধান্য দিতে শিখতে হয়। এর ফলে আপনি হেরে গেলেন বিষয়টি এমন নয় বরং আপনি আপনাদের সম্পর্ক আরো বেশি গুরুত্ব দিলেন।
৫। সম্মান করুন এবং ভালোবাসি বলতে শিখুন : পরিবারে বড়-ছোট যেকোন সদস্যকে পর্যাপ্ত সম্মান করুন। সম্মান আপনাদের সম্পর্ককে আরো মসৃণ করে তুলবে। সারাদিন হাজার হাজার মানুষকে ‘দুঃখিত’, ‘ধন্যবাদ’ এই শব্দগুলো কয়েকশ’ বার বললেও নিজের পরিবারকে কখনো ধন্যবাদ দেওয়া হয় না, ভুল করলে ক্ষমা চাওয়া হয় না। তবে এই ছোট পরিবর্তন গুলি আপনাকে সুন্দর একটি পারিবারিক বন্ধন উপহার দিতে পারে। পরিবারের সদস্যদের বোঝান আপনার জীবনে তাদের গুরুত্ব কতখানি এবং আপনি তাদের কতটা ভালোবাসেন। শুধু ভালোবাসা যথেষ্ট নয়, বরং ভলোবাসার প্রকাশও গুরুত্বপূর্ণ।
৪। দূরের আত্মীয়-স্বজনদের সাথে যোগাযোগ : তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে যোগাযোগ ব্যবস্থা আমাদের হাতের মুঠোয়। শুধুু প্রয়োজন একটু সময় এবং ইচ্ছে। আধুনিক ডিভাইসের ব্যবহার করে আপনি দূর-দূরান্তে থাকা প্রিয় মানুষগুলোর সান্নিধ্য পেতে পারেন সহজেই, দৃঢ় করে তুলতে পারেন আপনাদের সম্পর্কগুলি।
জীবনে চলার পথে আপনার পরিবার আপনার শক্তি। সময়ের সাথে বন্ধু , সহকর্মী পরিবর্তন হলেও জন্মলগ্ন থেকে আমৃত্যু আপনার পরিবার আপনার পাশেই থাকে। জর্জ বার্নার্ড শ বলেছেন, “একটি সুখী পরিবার কিন্তু আগের স্বর্গ”। সুতরাং পৃথিবীতেই যদি আপনি স্বর্গীয় শান্তি অনুভব করতে চান তবে অবশ্যই নিজের পরিবারের প্রতি যতœশীল হন। পারিস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ, সহযোগিতা, সহমর্মিতা, সৌহার্দ্য এবং ভালোবাসার দৃঢ় বন্ধন মধ্য দিয়ে আপনিও গড়ে তুলতে পারেন আপনার সুখী পরিবার।