খুলনা | বৃহস্পতিবার | ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

কুড়িগ্রামে অতি বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের পাকা ধান

খবর প্রতিবেদন |
০৩:৫৪ পি.এম | ১৮ মে ২০২২


কুড়িগ্রামের রৌমারীতে মাদাইডাঙ্কার বিলে অতি বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের পাকা ধান। এতে ওই বিলের প্রায় ৭০০ একর জমির একমাত্র ফসল বোরো ধান ঘরে তোলা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন ১ হাজার ৬০০ কৃষক।

এই বিলের পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে না পারলে ভেস্তে যাবে হাজারো কৃষকের স্বপ্ন। দ্রুত পানি নিষ্কাশনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারের কাছে জোর দাবি জানান ভুক্তভোগী কৃষকেরা।

এ বিষয়ে উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম কাজল বলেন, উপজেলার দাঁতভাঙা, শৌলমারী ও বন্দবেড় ইউনিয়নের আওতায় মাদাইডাঙ্কার বিলে ১ হাজার ৬০০ কৃষকের প্রায় ৭০০ একর জমি রয়েছে।

এর মধ্যে প্রায় ২২২ একর জমিতে সারা বছর পানি জমে থাকে। বিলটি শৌলমারী ইউনিয়নের বড়াইকান্দির পুড়ারচর গ্রাম থেকে উত্তরে উজান ঝগড়ারচর পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার এবং দাঁতভাঙা ইউনিয়নের ঝগড়ারচর গ্রাম থেকে বন্দবেড় ইউনিয়নের টাংগাড়িপাড়া গ্রাম পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার বিস্তৃত।  
দেখা যায়, উপজেলার দাঁতভাঙা ইউনিয়নের ঝগড়ারচর কুড়ার মোড় থেকে উজান ঝগড়ারচর সড়ক হয়ে বন্দবেড় ইউনিয়নের টাপুরচর সড়কের পূর্ব দিকে ও শৌলমারী ইউনিয়নের বড়াইকান্দি থেকে টাপুরচর সড়কের উত্তরের এলাকা পর্যন্ত মাদাইডাঙ্কার বিলের বিস্তার। বিলটির আংশিক এলাকায় জলাশয়ে মাছের ঘের তৈরি করা হয়েছে। বেশির ভাগ জমিতে চাষ করা হয়েছে বোরা ধান। কিন্তু বৃষ্টির পানিতে বিলের অনেক জায়গায় বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে।

দাঁতভাঙা ইউনিয়নের ঝগড়ারচর গ্রামের আনিছুর রহমান বলেন, মাদাইডাঙ্কার বিলে তাদের ১০ বিঘা জমি রয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে বোরো ধানের আবাদ করা হয় ওই জমিতে। সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে জমির ধান বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায়। অনেক সময় ধান ঘরে তুলতে পারলেও পানিতে নষ্ট হওয়ায় ফলন কম হয়।

একই গ্রামের কৃষক আমির হোসেন তিনিও বলেন, ওই বিলে তাদের চার বিঘা জমি রয়েছে। ওই জমিতে বোরো ধান ছাড়া কোনো কিছু আবাদ করা সম্ভব হয় না। কারণ প্রায় সারা বছর ওই বিলে পানি জমে থাকে। সরকার যদি পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে, তাহলে এই জমিগুলোতে তিন-চারটি ফসল চাষ করা সম্ভব। পানি নিষ্কাশনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান তিনি।

এ ছাড়া মাদাইডাঙ্কার বিলে জমি আছে এমন কৃষক ফকরুল মিয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু হানিফ, শহিদুল ইসলাম, শাহালম, আব্দুল মালেক, রহিজ উদ্দিন, গোলাম শহিদ, অমির হামজাসহ অনেকেই জানান, দীর্ঘদিন ধরে মাদাইডাঙ্কার বিল জলাবদ্ধ হয়ে থাকে। এতে বিপাকে পড়তে হয় হাজারো কৃষককে। অন্য জমিতে বছরে চার থেকে পাঁচটি ফসল চাষ করা গেলেও বঞ্চিত হচ্ছেন এই বিলে জমি থাকা কৃষকেরা। সরকারি উদ্যোগে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে খাদ্য উৎপাদনে সরকারকে পাশে থাকার আহ্বান জানান ভুক্তভোগী কৃষকেরা।

দাঁতভাঙা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সামিউল ইসলাম জীবন জানান, ‘মাদাইডাঙ্কার বিলে প্রায় এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি ক্যানেল তৈরি করতে হবে। ক্যানেলটি ঝগড়ারচর গ্রামের দক্ষিণ মাথা থেকে শুরু করে পুরারচর হয়ে টাপুরচর এলাকার সোনাভরী নদীতে গিয়ে পড়বে। তাহলে এই বিলের পুরো এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসন করা সম্ভব হবে।’

দাঁতভাঙা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রেজাউল করিম জানান, ‘পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় যুগ যুগ ধরে জলাবদ্ধতার কারণে অনাবাদি থেকে যাচ্ছে এই বিলের জমিগুলো। বিষয়টি নিরসনের জন্য উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। তাঁরা (কৃষি কর্মকর্তা) সরেজমিন পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেবেন।’

রৌমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, বিলের পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে পারলে বোরো ও আমন ধানের আবাদ করা যাবে। বিলটির মাটির নিচ দিয়ে ড্রেন, ক্যানেল বা পাইপের মাধ্যমে পানি নদীতে ফেলতে পারলে এর জলাবদ্ধতা দূর হবে। এ কাজ আমাদের দপ্তরের নয়। এসব কাজ উপজেলা পরিষদের সেচ ও পুনর্বাসন কমিটি করে থাকে। আগামী মাসিক সভায় বিষয়টি উপস্থাপন করা হবে।