খুলনা | শুক্রবার | ০৯ মে ২০২৫ | ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

‘আঁতুড় ঘরে’ দুর্নীতি ও অনিয়মে রেকর্ড : ইউজিসির তদন্তে প্রমাণিত

খুকৃবির উপাচার্যের আত্মীয় পরিবারের ৯ সদস্যের নিয়োগ বাতিল

খবর ডেস্ক |
১২:৪৬ এ.এম | ৩০ অগাস্ট ২০২২


খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুকৃবি) উপাচার্যের আত্মীয় ও পরিবারের ৯ সদস্যের প্রতিষ্ঠানটিতে নিয়োগ বাতিলের নির্দেশনা দিয়ে আদেশ জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তদন্তের পর প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী এ নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রণালয়। 
তবে আগামী ১১ সেপ্টেম্বর উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হচ্ছে বলে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়নি, মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে এমনটিই জানানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শহীদুর রহমান খান অনিয়ম-স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নিজের ছেলে, মেয়ে, শ্যালক-শ্যালিকার ছেলে ও ভাতিজাকে নিয়োগ দিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ মতে, সব মিলিয়ে উপাচার্যের পরিবারের সদস্য-আত্মীয়দের মধ্যে ৯ জনকে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। উপাচার্য তার স্ত্রীকেও বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অধ্যাপক পদে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। অনিয়মের এই অভিযোগ ইউজিসির তদন্তে প্রমাণিত হয়। ইউজিসির সুপারিশের পর গত ৩ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয় উপাচার্যকে নিয়োগ বাতিলের নির্দেশনা দেয়। 
উপাচার্যকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ কার্যক্রম বিষয়ে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে পাওয়া তদন্ত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নির্দেশনা দেওয়া হলো।
নির্দেশনায় বলা হয় : (ক) তদন্ত কমিটির কাছে উপাচার্য নিজেই স্বীকার করায় তার পরিবারের সদস্য ও আত্মীয় ৯ জনের নিয়োগ বাতিল করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
(খ) বিষয় বিশেষজ্ঞ ছাড়া একই ব্যক্তিবর্গকে দিয়ে সিলেকশন বোর্ড গঠন করে ২০টি বিষয়ে ৭৩ জন শিক্ষকের নিয়োগ বাতিলের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
(গ) সরাসরি প্রফেসর পদে নিয়োগের যে বিজ্ঞপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে উপাচার্যের স্ত্রী আবেদন করেন, সেটি বাতিল করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
(ঘ) খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা অনুসরণ করে যুগোপযোগী করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
(ঙ) ভবিষ্যতে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে নিয়োগ এবং বিষয় বিশেষজ্ঞ ছাড়া সিলেকশন বোর্ড গঠন না করাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয় এমন কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকতে হবে।
(চ) বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সুপারিশসমূহ ভবিষ্যতে অনুসরণ করতে হবে।
নির্দেশনাগুলো প্রতিপালন বা বাস্তবায়ন শেষে একটি প্রতিবেদন পাঠাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
স¤প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপ-সচিব মোঃ মাহমুদুল আলমের সই করা এক চিঠিতে উপাচার্যকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এসব বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন আছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে উলে­খ করা হয়েছে। এ চিঠি খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার খন্দকার মাজহারুল আনোয়ারের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে উপ-সচিব মোঃ মাহমুদুল আলম সোমবার বলেন, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তের বিষয়টি আমরা রেজিস্ট্রারের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। বিষয়টি দ্রুত কার্যকর করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই চিঠি পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার খন্দকার মাজহারুল আনোয়ার।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে আরও কয়েকটি বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের নীতিমালাটি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা অনুসরণ করে যুগোপযোগী করা, ভবিষ্যতে স্বজনপ্রীতি মাধ্যমে নিয়োগ, ‘বিষয় বিশেষজ্ঞ’ ছাড়া বাছাই বোর্ড গঠন না করাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়, এমন কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকা।
২০১৫ সালে জাতীয় সংসদে খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস হয়। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে উপাচার্য হিসেবে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শহীদুর রহমান খানকে নিয়োগের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির কার্যক্রম শুরু হয়। এরপরই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নিয়োগে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে।
উপাচার্যের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ বিষয়ে ২০২০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টির নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের পাঁচ সদস্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছিলেন। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তদন্ত কমিটি গঠন করে ইউজিসি। কমিটি গঠনের এক বছরের বেশি সময় পর চলতি বছরের জানুয়ারিতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়।
তদন্তে উঠে আসে, উপাচার্য নিজের ছেলে শফিউর রহমান খান ও শ্যালক জসীম উদ্দিনকে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শাখা কর্মকর্তা পদে নিয়োগ দিয়েছেন।
উপাচার্যের চার ভাতিজাও নিয়োগ পান। তাঁরা হলেন হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা পদে মুরাদ বিল­াহ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে সুলতান মাহমুদ, ল্যাব টেকনিশিয়ান পদে ইমরান হোসেন ও অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে মিজানুর রহমান।
উপাচার্যের শ্যালিকার ছেলে সায়ফুল­াহ হককে নিয়োগ দেওয়া হয় সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) হিসেবে। ডেটা এন্ট্রি অপারেটর পদে নিয়োগ পাওয়া নিজামউদ্দিন উপাচার্যের আত্মীয়।
উপাচার্যের মেয়ে ইসরাত খানকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যে প্রক্রিয়ায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, সেটি ত্র“টিযুক্ত বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উলে­খ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, উপাচার্যের মেয়ে ২০২০ সালের ১৩ এপ্রিল প্রভাষক পদে আবেদন করেন। এ পদে ৩০ জন প্রার্থী আবেদন করেছিলেন। যাঁদের মধ্যে স্নাতক পর্যায়ের ফলাফলে পিছিয়ে ছিলেন উপাচার্য-কন্যা। তাঁর সিজিপিএ ৩ দশমিক ৩০। তদন্ত কমিটি বলেছে, উপাচার্যের মেয়েকে নিয়োগের প্রক্রিয়ায় স্বজনপ্রীতি ও ত্র“টি পরিলক্ষিত হয়েছে।
উপাচার্য নিজের স্ত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে সরাসরি অধ্যাপক পদে নিয়োগের চেষ্টা করেছিলেন। উপাচার্যের স্ত্রী ফেরদৌসী বেগম উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা। তিনি ২০২০ সালের ১৩ এপ্রিল খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি এ্যান্ড পাবলিক হেলথ বিভাগের অধ্যাপক পদে আবেদন করেন। তবে এ নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত করে দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তদন্ত কমিটি বলেছে, উপাচার্যের স্ত্রী নিয়োগের শর্তই পূরণ করেন না।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উপাচার্য শহীদুর রহমানকে তাঁর পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়দের নিয়োগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিনি কমিটিকে বলেছেন, ‘এটা আসলে খুব একটা ভালো কাজ নয়। বিশ্ববিদ্যালয় শুরু করতে গিয়ে এ রকম করতে হয়েছে। আমি এ অন্যায় কাজটি করেছি।’
তদন্ত কমিটিতে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ্র চন্দ ছিলেন ওই কমিটির প্রধান। বাকি দুই সদস্য হলেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব আর্কিটেকচার অনুষদের ডিন আফরোজা পারভীন এবং ইউজিসির সিনিয়র সহকারী পরিচালক গোলাম দস্তগীর। 
তদন্ত দলের প্রধান অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ্র চন্দ জানান, ‘তদন্তে যা কিছু উঠে এসেছে তার সবই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। এর বাইরে আমার কোনো কথা নেই।’
খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, উপাচার্যের আত্মীয়-স্বজনের বাইরে অর্থ-বাণিজ্যের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সব পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে যোগ্যতা শিথিল করেও নিয়োগ দেয়া হয়েছে উৎকোচের বিনিময়ে। জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে খুলনার স্থানীয় প্রার্থীদের কৌশলে বাদ দিয়ে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, উপাচার্যের নিজ জেলা নোয়াখালী, রেজিস্ট্রারের নিজ জেলা নরসিংদী এবং উপাচার্যের স্ত্রীর নিজ জেলা বরিশালের লোকজনকে একচেটিয়া নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সাতজন সহকারী অধ্যাপক, একজন সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এবং ১৪ জন প্রভাষকসহ ২৯ ধরনের পদের জন্য ৭৬ জন জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সেই থেকেই অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন পদে লোক নিয়োগ ও স্থানীয় প্রার্থীদের কৌশলে বাদ দেয়ার অভিযোগ ওঠে। চাকুরিপ্রার্থীর সংখ্যা কমানোর উদ্দেশ্যে কৌশলে একের পর এক বিভিন্ন অপ্রাসঙ্গিক শর্ত জুড়ে দেয়া হয় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে। রেজিস্ট্রার সার্বজনীন পদ হলেও ‘কৃষি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্নাতক-স্নাতকোত্তর’ এর শর্ত আরোপ করা হয়, যা দেশের অন্য কোনো কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়নি। রেজিস্ট্রার মূলত প্রশাসনিক পদ। খন্দকার মাজহারুল আনোয়ার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে নিজেই সেই পদের জন্য প্রার্থী হন।
ইউজিসির তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘মাইক্রোবায়োলজি এ্যান্ড পাবলিক হেলথ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়োগ পাওয়া আশিকুল আলমের শিক্ষাগত যোগ্যতা বিজ্ঞপ্তিতে উলে­খ করা যোগ্যতার চেয়ে কম। তিনি ডিভিএমে দ্বিতীয় শ্রেণি এবং এমএসসিতে প্রথম শ্রেণি পাওয়া। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বলা ছিল, প্রার্থীকে সিজিপিএ ৪-এর মধ্যে ন্যূনতম সাড়ে ৩ পেতে হবে। এই শর্ত শিথিল করা যাবে, যদি প্রার্থীর পিএইচডি ডিগ্রি থাকে। আশিকুল আলমের পিএইচডি ডিগ্রি ছিল না। জানা যায়, তিনি উপাচার্য শহীদুর রহমান খানের অধীনে গবেষণারত ছিলেন। ইউজিসির প্রতিবেদনে আশিকুল আলমের শিক্ষক হিসেবে পাওয়া নিয়োগটি ত্র“টিপূর্ণ হওয়ায় বিধি অনুযায়ী, ব্যবস্থা নেয়া, স্ত্রীকে সরাসরি অধ্যাপক বানানোর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বাতিল করা এবং সব নিয়োগে স্বজনপ্রীতি ও অঞ্চলপ্রীতি না করাসহ সাত দফা সুপারিশ করা হয়। 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়টির এক শিক্ষক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনানুযায়ী, অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক নিয়োগের বাছাই বোর্ডে বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ সদস্য থাকার নিয়ম। সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষক পদে ‘বিশেষজ্ঞ’ থাকার নিয়ম। যে ৭৩ জন শিক্ষকের নিয়োগ বাতিল করতে বলা হয়েছে, তাঁরা সবাই প্রভাষক বা সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন। এর মধ্যে মাইক্রোবায়োলজি এ্যান্ড পাবলিক হেলথ বিভাগের এক শিক্ষকের নিয়োগে গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ আছে। কিন্তু এখানে সব শিক্ষককে এক করে ফেলার ভিন্ন কোনো কারণ আছে কি না, তা তাঁরা বুঝতে পারছেন না। এ জন্য শিক্ষকদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।