খুলনা | শনিবার | ২৩ নভেম্বর ২০২৪ | ৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

খুলনার দক্ষিণ জনপদের মানুষের পরম হিতার্থী ও বন্ধু ছিলেন হেডমাস্টার আমজাদ আলী

এম. নিয়াজ আহমেদ |
০২:২৮ এ.এম | ২০ অক্টোবর ২০২২


জন্ম হলেই মৃত্যু হবে। এ মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। পবিত্র কুরআন মাজিদে আল­াহতালা এরশাদ করেন, ‘কুলু নাফসুন জায়েকাতুল মাউত”। প্রত্যেক প্রাণিকে একবার করে তার মৃত্যুর স্বাদ নিতে হবে। একজন মানুষের মৃত্যু হলে সব কী তাঁর শেষ হয়ে গেল? তামাম পৃথিবীর মানুষ তাঁকে কী ভুলে গেল? আসলে তা নয়। কারণ প্রকৃত মানবের কোন মৃত্যু নেই। একজন মানুষ বেঁচে থাকেন তাঁর সৃষ্টিশীল কাজের মাঝে। তিনি মরেও অমর। যুগ থেকে যুগান্তরে তার সৃষ্টিশীল কর্ম তাঁকে বাঁচিয়ে রাখে। মায়ার পৃথিবীতে মানুষ আজ আছে কাল নেই। এটাই চিরন্তন নীতি। এটাই ধ্র“ব সত্য। তবে কিছু স্মৃতি, কিছু কথা মনের মুকুলে ভেসে উঠে। বিশেষ মুহূর্তে কিছু জ্ঞানী-গুণীর কথা, তাদের সৃষ্টিশীল কর্মময় গোটা জীবনের কথা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়। তাদের অনুপম আদর্শ আমাদের বাঁচিয়ে রাখে। তাদের রেখে যাওয়া কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাষ্ট্রীয় এবং সমাজ জীবনে অসীম অনুপ্রেরণা যোগায়। সেই স্মরণীয়-বরণীয় ব্যক্তির একজন হলেন মরহুম হেডমাস্টার মোহাম্মদ আমজাদ আলী। তিনি ছিলেন পাইকগাছা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রবীণতম প্রধান শিক্ষক।
তিনি আমার পিতামহ। তিনি ছিলেন খুলনার দক্ষিণ জনপদের মানুষের পরম হিতার্থী ও বন্ধু। তাই ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার কাছেই তিনি ছিলেন নমস্য ও গ্রহণযোগ্য। শিশু বয়সে পারিবারিক আঙিনায় তাঁকে আমি দেখেছি। পিতার কাছ থেকে তাঁর বর্ণিল জীবনের অনেক কিছু জেনেছি। তাঁর গৌরবগাঁথা জীবন আলেখ্য লোকমুখে অনেক কিছু শুনেছি। তাঁর সম্পর্কে নিজে যা দেখেছি, যতটুকু শুনেছি আর যা উপলব্ধি করেছি এসবের ওপর ভিত্তি করে আলোচ্য নিবন্ধটি।
মানুষ গড়ার কারিগর : মরহুম হেডমাস্টার আমজাদ আলী ছিলেন একজন প্রথিতযশা শিক্ষক। একজন মেধাবী, সুযোগ্য শিক্ষাবিদ, আত্মত্যাগী, আত্মবিশ্বাসী, পরিশ্রমী, শিক্ষানুরাগী মানুষ গড়ার সফল কারিগর। আমি সেই সত্যের সাধক, অনুপম সৃষ্টিশীল মানুষ মরহুম হেডমাস্টার মোহাম্মদ আমজাদ আলীর অনুরাগী, অনুসারী। তাঁর আদর্শের সৈনিক। আমি সবচেয়ে সৌভাগ্যবান যে, আমার দাদুর হাতে গড়া পাইকগাছা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ থেকে ৭ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করার সুযোগ পেয়েছি। দু’জন প্রধান শিক্ষক যথাক্রমে সর্ব জনাব আব্দুল গফফার, আব্দুল খালেককে আমি পেয়েছি। এ দু’জনসহ সকল শিক্ষকরা ছিলেন আমার প্রাণাধিক প্রিয় শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব। দাদু ভাই ছিলেন কাজ পাগল মানুষ। সততাই ছিল তার জীবনের বড় আদর্শ। তিনি সব সময় সততা এবং আর্দশকে বড় করে দেখতেন। সততাকে তিনি জীবনের একমাত্র আদর্শ হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। ছল, প্রতারণা কি জিনিস তিনি বুঝতেন না। স্পষ্টবাদিতাই ছিল তাঁর জীবনের আর একটি অধ্যায়। তিনি সবার কাছে চাচা, মামা হিসেবে পরিচিত ছিলেন না। তিনি ‘স্যার’ হিসেবে সবার কাছে ছিলেন শ্রদ্ধাভাজন এক প্রিয় ব্যক্তিত্ব।
সততাই ছিল তাঁর জীবন সাধনা : মানুষ গড়ার সফল কারিগর হিসেবে সবাইকে প্রায় বলতেন “সততাই মূলমন্ত্র’, ‘কাউকে বড় করতে যেয়ে কাউকে ছোট করো না, সাধারণ জীবনযাপন করো, অসাধারণ হিসেবে নিজেকে গড়ে তোল, ‘সমাজে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সাধ্যপর প্রতিবাদ করো, অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করো, সইলে সম্পত্তি নইলে বিপত্তি অর্থাৎ ধৈর্য্যর সাথে সব কিছুকে মোকাবেলা করো”। এসব কথা প্রসঙ্গত তিনি প্রায় বলতেন। এসব উপলব্ধিতে এনেছিলেন বলে তিনি সবার সঙ্গেই তাঁর আচরণ ছিল সহানুভূতিপূর্ণ। কে হিন্দু, কে মুসলমান এসব তিনি দেখতেন না। সবার উপর মানুষ সত্য এটাই তিনি ভাবতেন। কারও দোষ যেমন গোপন করতেন না, কাউকে অসম্মান বা আহত ও করতেন না। জাঁকজমক তিনি পছন্দ করতেন না। তিনি ছিলেন একজন অতি সাধারণ মানুষ। একেবারে সহজ-সরল, সাধাসিধা জীবনযাপন। তাঁর আচরণ বা পোশাক দেখে মনে হত না তিনি সমাজের একজন মর্যাদা সম্পন্ন অতি উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তি। এত সারল্য জীবনযাপন ছিল যে, ভাবতে অনেকের কাছে কখনও কখনও বিস্ময় মনে হতো। 
জন্ম ও শিক্ষাকাল : শিবসা-কপোতাক্ষ নদ বিধৌত অবিভক্ত পাইকগাছা থানার আজকে কয়রা উপজেলার নিভৃত এক পল­ী ‘বাগালী’ গ্রামে সাধারণ একটি মুসলিম পরিবারে এই মহান শিক্ষাবিদ ১৯৩৫ সালের ২রা জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। আপন মেধা-মননে তিনি গড়ে উঠেন। সেদিন খুলনার দক্ষিণ উপকূলীয় জনপদে যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল বড়ই অপ্রতুল। ছিল না তেমন কোন রাস্তা-ঘাট বা লঞ্চ, নৌকা। জেলা বা থানা সদরের সাথে যোগাযোগ করা ছিল খুবই দুরূহ ব্যাপার। এক কথায় পায়ে হেঁটে শত শত মাইল মেঠো পথ অতিক্রম করে গন্তব্যে পৌঁছাতে হতো।
কথায় বলে সাধনায় সিদ্ধি। মেধা-মনন, চিন্তা, সঠিক উদ্দেশ্য আর সাধনা থাকলে একজন মানুষ উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত হতে পারে। তাঁকে একদিন সঠিক আলোর পথ দেখায়। তাঁর স্বপ্ন ছিল তিনি আলোকিত হবেন। উচ্চতর লেখাপড়া করার জন্য ১৯৪৫ সালে পাড়ি জমালেন জেলা সদর খুলনায়। তখন ব্রিটিশ শাসন। অতঃপর বর্ণ যুগ প্রথা। তবুও তিনি অদম্য সাহস বুকে নিয়ে খুলনা জেলা স্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করলেন। মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ হলেন। অতঃপর ১৯৪৫ সালে ভর্তি হলেন খুলনা জেলা স্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে। আগেই উলে­খ করেছি তখন বর্ণ যুগ প্রথা। ব্রিটিশ শাসনাধীন হলেও গোটা ভারতবর্ষে তখন চলছে বাবু শাসন। অর্থাৎ গোটা বাংলায় হিন্দু বর্ণ বাবুদের জমিদারি শাসন। একজন গাঁয়ের সাধারণ মুসলমান ঘরের ছেলের পক্ষে তৎকালীন বৈষম্যমূলক শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে থেকে খুলনা জেলা স্কুলে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া আজকের দিনে সত্যিই বিরল ঘটনা। আমি আমার পিতার কাছ থেকে শুনেছি হাতে গোনা কয়েকজন মেধাবী মুসলমান ছাত্র তৎকালীন খুলনা জেলা স্কুলে লেখাপড়া করতেন। ছাত্রদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন কায়স্ত পরিবারের সন্তান। এখান থেকে তিনি কৃতিত্বের সাথে ১৯৫১ মেট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৫৪ সালে দৌলতপুর হিন্দু একাডেমি আজকের বিএল কলেজ থেকে সুনামের সাথে আইএএকই কলেজ থেকে ১৯৫৮ সালে বি এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
বেছে নেন শিক্ষকতা : উচ্চতর মেধা সম্পন্ন এই মহান শিক্ষাবিদ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করে ফিরে আসেন নিজ গ্রামে। সরাসরি জড়িয়ে পড়েন মহান শিক্ষকতা পেশায়। শিক্ষকতাকে তিনি উচ্চ পেশা হিসেবে মনে করতেন। সব পেশার ঊর্ধ্বে একটি সম্মানজনক পেশা বলে তিনি মনে করতেন। অর্থকে কখনও বড় ভাবেননি। অর্থকে বড় ভাবলে তৎকালীন আমলে অগাধ বিত্ত-বৈভবের মালিক হতে পারতেন। তাই শিক্ষকতা পেশাকে বেছে নিয়েছিলেন একটি মহৎ মিশনারী পেশা হিসেবে। তিনি পাইকগাছা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৯৬০ সালের শিক্ষকতা শুরু করেন। কর্মজীবনে প্রতিটি ক্ষেত্রে সততা এবং নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। আগেই বলেছি লেখাপড়াকে তিনি অতি গুরুত্ব দিতেন। জীবনের মধ্য বেলায়ও তিনি লেখাপড়া চালিয়ে গেছেন। তাই ১৯৭৪ সালে খুলনা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে বি.এড, ১৯৯১ সালে রাজশাহী টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে এম.এড পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
শুরু হলো ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ। জনশ্র“তি আছে যে,‘৭১-এর মহান মুক্তি সংগ্রামে স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ শক্তির তুমুল লড়াইয়ে স্কুলটি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্কুলটি পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়ে। তিনি স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে এই চরম সংকট মুহূর্ত স্থানীয় গণ্যমান্য ও শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বিধ্বস্ত স্কুলটি পুনঃনির্মাণে এগিয়ে আসেন। দুঃসময়ে এক কাণ্ডারির ভূমিকা পালন করেন। এ ব্যাপারে তাঁর ভূমিকা ছিল অসামান্য। এ কারণে স্বাধীনতা উত্তর তাকে এ স্কুলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়। এ জনপদের মানুষের কাছে আজও তিনি অমর হয়ে আছেন এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মাঝেও থাকবেন। 
কথায় বলে যেমন প্রধান শিক্ষক তেমন তাঁর বিদ্যালয়। স্বাধীনতা উত্তর তিলে তিলে তার হাতে গড়া পাইকগাছা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। এদেশের শিক্ষাঙ্গণে আজ একটি মডেল। ১৯৮৫ সালের ২০জুন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ স্কুলটি সরকারিকরণ করেন। এ ব্যাপারে তাঁর ভূমিকা ছিল অনন্য। স্কুলটির গোটা আঙিনায় তিনি নিজে হাতে নানা প্রজাতির গাছ লাগিয়েছেন। আজও জনশ্র“তি আছে যে, স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সুধীর, ইসলাম, আলতাফ এদেরকে নিয়ে প্রতিদিন সকালে তাঁর লাগানো গাছ তদারকি করতেন। নিজে হাতে গাছে পানি দিতেন। সর্বমহলে প্রশংসিত পাইকগাছা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় আজকের একটি ঐতিহ্যবাহী সরকারি প্রতিষ্ঠান। বিদ্যালয়টি তার অতীত ঐতিহ্যকে সামনে রেখে অত্যুজ্বল ভূমিকা পালন করে চলেছে। 
পাইকগাছা স্কুল ছিল তাঁর সংসার : পারিবারিকভাবে শুনেছি তিনি প্রায় বলতেন, “আমি এই স্কুলের সাথে কখনও বেঈমানী করতে পারব না। কারণ এই স্কুল আমাকে ইজ্জত দিয়েছে। সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে”। আসলে তিনি ছিলেন নাইট্রিক এসিডে পৌঢ় খাওয়া একজন সোনার মানুষ। পাইকগাছা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ছিল তাঁর প্রিয় সংসার। যে সংসারটা তিনি সাজিয়ে ছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের একটি আদর্শ বিদ্যাপীঠ হিসেবে। পাইকগাছা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় তার সংসার ছিল, কিন্তু ব্যক্তিগত সম্পত্তি ছিল না। তিনি ছিলেন সরকার নিয়োজিত একজন দক্ষ প্রশাসনিক কর্মকর্তা। সে সাথে একজন মেধাবী, সুযোগ্য শিক্ষাবিদ। পাইকগাছা স্কুলকে ফুলের বাগানের মত গড়তে যেয়ে অন্যায়ের কাছে কখনও মাথা নত করেননি। অন্যায়কে কখনও প্রশ্রয় দেননি। তিনি বলতেন ষড়যন্ত্রকারীদের কাজ ষড়যন্ত্র করা। সততার কাছে কোন ষড়যন্ত্র শেষ পর্যন্ত টিকে থাকে না। হতোও তাই। তিনি নিজস্ব বিচার-বিবেচনা ও ন্যায়বোধ দ্বারা পরিচালিত হতেন। কারও কোন অন্যায্য অনুরোধকে মোটেই প্রশ্রয় দিতেন না।
সে সময় বেসরকারি স্কুলে শিক্ষক নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ শোনা যেত। ঘুষ বাণিজ্য কি জিনিস তিনি বুঝতেন না। স্থানীয় পর্যায়ে শিক্ষক কমিটি শিক্ষক নিয়োগ দিতেন। তিনি কখনও ইন্টারভিউ বোর্ডে স্ব-শরীরে হাজির থাকতেন না। শিক্ষক নিয়োগ হবার পর তাঁর কাছে আসতেন। সরল মনে কিছু শুনে ওই স্কুলের উন্নতি কামনা করতেন। অতঃপর তিনি নিয়োগ বইতে স্বাক্ষর করে দিতেন। ১৯৬০ থেকে ১৯৯২ সাল এ সুদীর্ঘ ৩৩ বছর শিক্ষাগতা জীবন এখানেই তিনি সততা এবং নিষ্ঠার সাথে কাটিয়ে দেন। অতঃপর ১৯৯২ সালের ১লা জুলাই অত্যন্ত সম্মানের সাথে এই স্কুল থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
থমে গেল জীবন গাড়ি : নির্লোভ, নির্মোহ এই মহান জ্ঞান তাপস ২০১২ সালের ২০ অক্টোবর সকাল ৭-০৩ মিনিটে ৭৮ বছর বয়সে জীবন গাড়ি থেমে যায়। বর্ণিল কর্ম বহুল জীবনের অবসান ঘটে। সবাইকে কাঁদিয়ে তিনি চলে যান না ফেরার দেশে। এই মহান শিক্ষাবিদ নীরব-নিভৃতে আজ ঘুমিয়ে আছেন আমাদের বাড়ির নিকটস্থ পাইকগাছা সরকারি কবর স্থানে। এ দিনটির কথা আমার আজও স্মরণে আছে। তাঁর মৃত্যু সংবাদে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। তাঁর হাতে গড়া পাইকগাছা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে বাঁধ ভাঙা জনতার উপস্থিতিতে জোহরবাদ অনুষ্ঠিত হয় জানাযা নামাজ। এবং তাৎক্ষণিক এক স্মরণ সভা। এই শিক্ষাবিদের প্রতি শ্রদ্ধা নিদর্শন স্বরূপ এদিন তাঁর হাতে গড়া পাইকগাছা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়টি একদিনের জন্য বন্ধ রাখা হয়। সকালে মৃত্যুর খবর যখন আমাদের বাড়িতে এসে পৌঁছায় পরিবারের সবাই শোকে মূহ্যমান। আমার বয়স তখন মাত্র ৫ বছর। আমি ইসলামি পোশাক পাঞ্জাবি পাজামা পরে প্রস্তুত হয়ে থাকি। আমার দাদু ভাইয়ের জানাযা নামাজ কখন হয়। আমি যেন সেখানে শরিক হতে পারি। তাঁকে যেন শেষ শ্রদ্ধা জানাতে পারি।
আজও অমর : আমার দাদু ভাই আজ বেঁচে নেই। কিন্তু তার সৃষ্টিশীল কর্ম আজও তাকে সমাজের বুকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। তার একান্ত অনুপ্রেরণায় প্রতিষ্ঠিত হয় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গণমানুষের পত্রিকা আজাদ বার্তা, সত্যের ঝানডা। আমার পিতা এড. এম. মাফতুন আহমেদ এ দু’টি পত্রিকার দায়িত্বভার গ্রহনেণর পর গণমানুষের প্রিয় মুখপাত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। দাদু ভাইয়ের স্মৃতিকে ধরে রাখার মহান প্রয়াসে আমার পিতা পাইকগাছা পৌরসভা সদরে প্রতিষ্ঠা করেন হেডমাস্টার আমজাদ আলী পাবলিক লাইব্রেরি এণ্ড রিসার্স ইনস্টিটিউট। হাজার হাজার বইয়ের স্তুপে বৃহত্তর খুলনা জেলার প্রথম শ্রেণির একটি মান সম্মত লাইব্রেরি হিসেবে আজও দেদীপ্যমান। এসব প্রতিষ্ঠান তার স্মৃতিকে আজও ধরে রেখেছে। পাইকগাছা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় যতদিন টিকে থাকবে ততদিন প্রতিটি ইটের কণায় কণায় তাঁর স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখবে। 
লেখক: মরহুম হেডমাস্টার আমজাদ আলী’র পৌত্র।