খুলনা | বুধবার | ০৯ জুলাই ২০২৫ | ২৫ আষাঢ় ১৪৩২

কৃষি খাতে নেয়া উদ্যোগগুলো বেগবান করা হোক

|
১২:০৯ এ.এম | ০২ ডিসেম্বর ২০২২


করোনার অভিঘাতের পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে সব দেশই খাদ্য নিয়ে সংকটের মুখে পড়েছে। যেসব দেশ খাদ্য রপ্তানি করে সেসব দেশও অভ্যন্তরীণ চাহিদার কারণে রপ্তানি বন্ধ করে দিতে পারে-এমন আশঙ্কাও বিদ্যমান। এ সময়কার অর্থনৈতিক সংকটময় পরিস্থিতি কাটাতে সরকার খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ জোর দিচ্ছে। খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো এবং জ্বালানির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে সম্ভাব্য সংকট মোকাবিলার কৌশল নেওয়া হচ্ছে। এমন বাস্তবতায় প্রশাসনকে সরকারের নানামুখী উদ্যোগ বাস্তবায়নে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বিশেষ করে, সরকারি ব্যয় কমাতে কৃচ্ছ্রসাধন কার্যক্রমের আওতা আরো বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। গত রবিবার প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সচিব সভায় উপস্থিত সচিবদের তিনি এ নির্দেশনা দেন। সচিবদের ঐ সভায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে খাদ্য নিরাপত্তায়। আলোচনার ক্রমে এটিকে শুরুতেই স্থান দেওয়া হয়। বর্তমানে দেশে খাদ্যশস্য মজুতের পরিমাণ ১৬ লাখ মেট্রিক টন। সংকট যাতে না হয় সেজন্য আমদানি এবং উৎপাদন দু’টি ক্ষেত্রকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আসছে বছর কঠিন সময় পার করতে হবে কারণ চীন ও রাশিয়ায় উৎপাদন কমেছে। এজন্য সংকট আরো বাড়বে। এ কারণে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কোনো রকম জমি যেন অনাবাদি না থাকে সে জন্য মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশ দিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। সরকারের এই উদ্যোগ ও নির্দেশনা সময়োপযোগী। আমারা এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। সবার সর্বোচ্চ সাশ্রয়ী মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে। সরকারের কৃচ্ছ্রসাধন কার্যক্রম চালু রেখে এর আওতা বাড়ানোর কথাও বলা হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ছাড়া বিলাস সামগ্রীর আমদানি বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে। ভারতের উৎপাদন কম হলে সে দেশের রপ্তানি বন্ধের ঝুঁঁকি রয়েছে। দূরবর্তী দেশ থেকে আমদানি করা হলে তাতে পরিবহন খরচ বেড়ে যাবে। শুল্ক বাড়ানোর মাধ্যমে বিলাসী ও অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। বাংলাদেশের মাটির উর্বরতাকে ব্যবহার করা গেলে খাদ্য উৎপাদন বাড়বে যেটা এ সময় খুব জরুরি। তবে আনুপাতিক হারে খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে। স্বাধীনতার অব্যহিতর পর দেশে খাদ্য উৎপাদনের (প্রধানত ধান-গম) পরিমাণ ছিল প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ টন। বর্তমানে সেটি প্রায় ৪০ কোটি টন ছাড়িয়েছে। একইভাবে শস্য নিবিড়তাও আগের চেয়ে বেড়েছে। বাড়ছে প্রযুক্তির ব্যবহার ও কৃষির যান্ত্রিকীকরণও। এসব নিঃসন্দেহে ইতিবাচক অগ্রগতি। কিন্তু এখন কৃষিতে নতুন হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন। এরই মধ্যে আমাদের কৃষি খাতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দৃশ্যমান। লবণাক্ততা, খরা, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়ের পৌনঃপুনিকতায় ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে খাদ্য উৎপাদনে। বীজ গজানো, পরাগায়ন ও পরিপক্ব হতে সুনির্দিষ্ট তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাত ও সূর্যালোকের প্রয়োজন।
জলবায়ুর এ উপাদানগুলো পরিবর্ধিত হচ্ছে, কিন্তু বীজ বপন ও চারা রোপণের সময় পরিবর্তন সম্ভব হয়নি। এ কারণে কৃষি মৌসুমের সঙ্গে ফসলের চাষাবাদ খাপ খাওয়ানো যাচ্ছে না। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে মিল রেখে স্থানভিত্তিক গবেষণা কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। তাছাড়া পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আরো দু’টি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। একটি হলো প্রতিকূল পরিবেশে সহনশীল স্বল্পমেয়াদি উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে বেড়ে চলা জনসংখ্যার জন্য খাদ্যের জোগান দেয়া। অন্যটি পরিবর্তিত বিরূপ পরিবেশে কৃষিকে খাপ খাওয়ানো।
প্রচলিত চাষ পদ্ধতি ও শস্যপর্যায় পরিবর্তন করে পানি কম লাগে এমন ফসলের চাষ, ধান চাষে এডব্লিউডি বা পর্যায়ক্রমে ভেজানো ও শুকানো প্রযুক্তির ব্যবহার, মালচিং ও ড্রিপ সেচের প্রবর্তন, অল্প চাষ বা বিনা চাষে উৎপাদন পদ্ধতিকে উৎসাহিত করা, ভাসমান ও উল­ম্ব চাষের মাধ্যমে প্লাবিত ও অনাবাদি জমি চাষের আওতায় নিয়ে আসা, ফসল চাষের সব পর্যায়ে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, স্বল্প জীবনকাল এবং তাপ-খরা-শীত-বন্যা-লবণসহিষ্ণু জাতগুলোর আবাদ এলাকা স¤প্রসারণ করতে হবে। কৃষিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এ সময় জরুরি। সবাই মিলে কৃচ্ছ্রসাধন ও এক হয়ে কাজ করলে খাদ্য সংকট মোকাবিলা দূরূহ নয়। কিছু উদ্যোগ এরই মধ্যে নেয়া হয়েছে। সেগুলো আরো বেগবান করা প্রয়োজন।