খুলনা | শুক্রবার | ৩১ মার্চ ২০২৩ | ১৭ চৈত্র ১৪২৯

ভোজ্য তেল, চিনি, আটা, ডালের দাম অপরিবর্তিত : ‘সবজিতে ভরপুর বাজার তবুও কমেনি দাম’

সপ্তাহের ব্যবধানে নতুন করে বেড়েছে চালের দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০১:৪০ এ.এম | ০৪ ডিসেম্বর ২০২২


বাজারে চলে এসেছে আমন চাল। এর পরও কমছে না দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে নতুন করে বেড়েছে মোটা চালসহ প্রায় সব ধরনের চালের দাম। মোটা চাল ন্যূনতম কেজিপ্রতি বেড়েছে ২ টাকা। আর মাঝারি ও চিকন চালের দাম বেড়েছে ২-৫ টাকা পর্যন্ত। বাজারে নতুন চাল এলেও মোটা চাল ব্রি-২৮  এখনো ৬২ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মিনিকেট ৭৫ থেকে ৮০ টাকা ও নাজিরশাইল ৮০ থেকে ৮৫ টাকা কেজি। অন্যদিকে বাজারে কমেছে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম। তবে সামান্য কমতির দিকে সবজির দামও। তেল, চিনি, আটা, ডালের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। গতকাল শনিবার নগরীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে এ চিত্র।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ধান-চাল মজুত করছেন। এতে বাজারে নতুন চাল এলেও দাম কমছে না। এজন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট তদারকি সংস্থাগুলোকে এখন থেকে নজরদারি বাড়াতে বলেছেন তারা।
বাজারে মোটা পাইজাম চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৬-৬০ টাকা। মাঝারি মানের মিনিকেট ৭০-৭২ টাকা ও সরু নাজির চাল ৭৫-৮৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে পাইজাম চালের দাম বেড়েছে ২ টাকা, মিনিকেট ২ টাকা ও ভালো মানের নাজিরশাইল চালের দাম বেড়েছে ৫ টাকা। চিকন চালের দাম কেজিতে ৩ টাকা বেড়ে ৬৮ টাকা, মাঝারি বা পাইজাম চাল ২ টাকা বেড়ে ৬০ টাকা এবং মোটা চাল কেজিতে ২ টাকা বেড়ে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চাল ব্যবসায়ী বলেন, গতবছর এ সময়ে তিনি মাসে ২শ’ বস্তার মতো চাল বিক্রি করেছেন। গেল দু’মাস ধরে ক্রেতারা এখানে আসছেন না। কারণ হিসেবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত এক মাস ধরে চালের বাজার উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল রয়েছে। মানুষ এখন বেশী দরে চাল কিনতে চায় না। অনেকেই এখন ওএমএসের ক্রেতা। 
তিনি আরও বলেন, ব্যবসা করতে গিয়ে তিনি ব্যাংক থেকে লোন নিয়েছেন। সেই লোনের টাকা গোছানোর আগেই টাকা পরিবারের ভরণ পোষণের জন্য খরচ হয়ে যাচ্ছে।
মিস্ত্রিপাড়া চালের বাজারের ব্যবসায়ী মোঃ জাকিরুল ইসলাম বলেন, দেশের বড় বড় ব্যবসায়ীরা এখন ব্যবসায়ে নেমেছেন। তাছাড়া ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা লোন নিয়ে ভরা ধানের মৌসুমে স্বল্প দামে ক্রয় করে তা সংকটের সময়ে বেশী দরে বিক্রি করছেন। আর তাদের কারণে মূলত বাজারের এ পরিস্থিতি। চালের দাম উর্ধ্বমুখী হওয়ায় অনেক ক্রেতা হারিয়েছেন তিনি। যারা মাস তিনেক আগেও ৫০ কেজির চাল নিতেন তারা এখন অর্ধেক নিচ্ছেন।
বাজারে গত এক মাসে তিন দফা বেড়ে আটার দাম প্রতি কেজি ৭৫ টাকায় ঠেকেছে। বাজারে দুই কেজি ওজনের প্যাকেটজাত আটা বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। খোলা আটা নিলে পাওয়া যাচ্ছে ৫-১০ টাকা কমে।
মিস্ত্রিপাড়া বাজারের চাল বিক্রেতা হানিফ বলেন, আটা-ময়দার দাম বাড়ার প্রভাব চালেও পড়ছে। দরিদ্র মানুষ রুটি খাওয়া বাদ দিয়ে এখন ভাত খাচ্ছে। 
বাজারে আসা একজন পরিবহন শ্রমিক মানিক বললেন, যখন চালের কেজি ৫০ টাকা ছিল তখন ৩২ টাকায় এক কেজি আটা কেনা যেতো। এখন লাগে ৬৫ টাকা। সেজন্য সকালে রুটি খাওয়া বন্ধ করেছেন তিনি।
এক বিক্রেতা বলেন, সরকার যে হারে চিনির দাম নির্ধারণ করেছে, সেই হারে আমরা পাইকারি পর্যায়েও কিনতে পারছি না। এতে আমাদের বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।’
অন্যদিকে বাজারে অপরিবর্তিত রয়েছে দুই সপ্তাহ আগে বেড়ে যাওয়া তেল ও চিনির দাম। চিনির দাম বাড়ানোর পরও বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি। কোম্পানিগুলো প্যাকেট চিনি সরবরাহ কমিয়ে দেয়ায় বাজারে এর সংকট দেখা গেছে। প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৯০ টাকা এবং চিনির দাম ১০৭ টাকা নির্ধারিত রয়েছে। তবে চিনি ১১০ থেকে ১১৫ টাকা আর ১৯০ টাকার উপরে বিক্রি হচ্ছে তেল।
ওদিকে চাহিদা কমায় কমেছে ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম। নগরীর পাইকারি বাজার ও খুচরা পর্যায়ের ডিম ব্যবসায়ীরা জানান, এখন পাইকারিতে প্রতি ডজন বাদামি রঙের ডিমের দাম ১১০ টাকা। খুচরা ব্যবসায়ীরা হালিপ্রতি ডিমের দাম রাখছেন এখন ৪০ টাকা। এতে প্রতি ডজনের দাম দাঁড়ায় ১২০ টাকা। এক মাসের ব্যবধানে ডিমের দাম ডজনে কমেছে ২০ থেকে ২৫ টাকা।
অন্যদিকে ব্রয়লার মুরগি এখন প্রতিকেজি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এর প্রভাবে কিছুটা কমেছে সোনালি মুরগির দামও। কেজিপ্রতি সোনালী মুরগির দাম পড়ছে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা। যা গত সপ্তাহের তুলনায় প্রায় ২০ টাকা কম।
এ ছাড়া বাজারে শীতকালীন সবজি প্রচুর থাকলেও সে অনুযায়ী দাম কমেনি। গতকাল নগরীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে মানভেদে প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ ৪০ টাকা, বেগুন ৫০ টাকা, ফুলকপি ৩০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, ঝিঙে ৩০ থেকে ৪৫ টাকা, উচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, কুশি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, আলু ২৫ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৫০ টাকা, কাকরল ৪০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, পটল ৩০ থেকে ৪০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৩০ টাকা, লালশাক ও ঘিকাঞ্চন শাক প্রতিকেজি ৪০ টাকা, কাঁচাকলা প্রতিহালি ৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। 
অথচ একসপ্তাহ আগে প্রতিকেজি কাঁচামরিচ ৬০ টাকা, বেগুন ৪০ টাকা, ফুলকপি ৩০ টাকা, ঢেঁড়স ৩০ টাকা, ঝিঙে ৩০ টাকা, উচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫  টাকা, কুশি ৩০ টাকা, আলু ২৫ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৪০ টাকা, কাকরল ৩০ টাকা, পেঁপে ২০ টাকা, পটল ৩০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ২০ থেকে ২৫ টাকা, কাঁচাকলা প্রতিহালি ৩০ থেকে ৩২ টাকা দরে বিক্রি হয়। 
সবজির খুচরা বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম বলেন, বাজারে এখন অনেক সবজি। ফুলকপি-বাঁধাকপি থেকে শুরু করে সামনে শীতকালীন বিভিন্ন সবজির দাম আরও কমবে। 
নগরীর শেরে বাংলা রোডস্থ সন্ধ্যা বাজারের ব্যবসায়ী মোঃ রবিউল ইসলাম বলেন, ‘শীত মৌসুম চলছে। সবজির সরবরাহ আছে। তিনি বলেন, সরবরাহ যত বাড়বে দাম কমবে।’ আরেক ব্যবসায়ি মোঃ জাকির হোসেন বলেন, ‘সবজির সরবরাহ বেড়ে গেলে দাম নামতে শুরু করবে।’ 
মহানগরীর শেরে বাংলা রোডস্থ কেসিসি সন্ধ্যা বাজারে আসা মোঃ এনামুল পাটোয়ারী বলেন, ‘সবজির মূল্য দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। টাটকা সবজিতে ভরপুর বাজার। তিনি বলেন, বাজার দর মনিটরিং ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। আর এ জন্য ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে সবজির মূল্য কমছে না।’ 
অন্যদিকে ক্রেতারা বলছেন, কিছুটা স্বস্তি মিললেও সবজির দাম আরও কমা উচিত। দেশে প্রচুর শীতকালীন সবজি চাষ হয়। এরপরও কেন দাম আরও কমছে না, প্রশ্ন ক্রেতাদের।
মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে পুঁটি মাছ ২৫০ টাকা, বড় রুই মাছ ৪৫০ টাকা, কাতল মাছ ৪০০ টাকা, শিং মাছ ৫০০ টাকা, টাকি মাছ ৬০০ টাকা, চিংড়ি ৬০০ টাকা, রূপচাঁদা ৭০০-৮০০ টাকা, বোয়াল ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ ১১০০ টাকা এবং এক কেজির কম ওজনের ইলিশ ৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে বাজারে এখন প্রায় সব ধরনের মসলার দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে। জিরা কেজিতে ৫০ থেকে ৬০ টাকা বেড়ে এখন মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৫২০ টাকা, দারুচিনি, লবঙ্গ ও এলাচির মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্য মসলার দামও বেশ কয়েক দিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজার দরের তালিকায়ও গরম মসলার মূল্যবৃদ্ধির চিত্র উঠে এসেছে। টিসিবি বলেছে, বাজারে গত এক মাসে প্রতি কেজি জিরায় ৭ শতাংশ, দারুচিনিতে ১২ শতাংশ, লবঙ্গে ৫ শতাংশ দাম বেড়েছে।