খুলনা | রবিবার | ২২ জুন ২০২৫ | ৮ আষাঢ় ১৪৩২

নয়াপল্টন ট্রাজেডি......

বাবার লাশের গায়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে অবুঝ মিথিলা

খবর প্রতিবেদন |
০১:৩১ এ.এম | ০৯ ডিসেম্বর ২০২২


বাবার মরদেহ ট্রলিতে। মেয়ে বাবার মাথায় হাত বুলাচ্ছে আর অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ছোট্ট শিশুটি এখনো কিছুই বুঝে উঠতে পারেনি। এদিকে স্ত্রীও নির্বাক হয়ে পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। কি করবেন কিছুই বুঝতে পারছেন না।
বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে নিহত মকবুলের লাশের সামনে এমন চিত্র দেখা যায়।
নিহত মকবুলের বড় ভাই নূর হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আমার ভাই বুটিক্সে কাজ করতেন। গত বুধবার তিনি পল্টনে ইচ্ছাকৃতভাবে এসেছেন নাকি অনিচ্ছাকৃতভাবে এসেছেন তা আমরা বলতে পারছি না। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসেছিলেন, সান্ত্বনা দিয়ে গেছেন। এখন আমার একমাত্র ভাতিজিকে নিয়ে কীভাবে কী করব কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। 
তিনি বলেন, আমাদের কথা বলার কোনো ভাষা নেই। ছোট্ট ভাতিজির মুখের দিকে তাকাতে পারছি না। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি আজ নির্মমভাবে গুলিতে নিহত হলো। আমার ভাইকে হত্যার দায় কে নেবে? আমার ভাই বিএনপি সমর্থন করে। আমরা জানি না তিনি কেন এখানে এসেছিলেন। আমরা পল­বী থানার সেকশন ১১ এর ১২ নাম্বার রোডের আট নম্বর বাসায় থাকি।
নিহত মকবুলের স্ত্রী হালিমা বলেন, আমার স্বামী বিএনপি করতো কি না আমি জানি না। তিনি বাসায় কিছু বলে আসেননি কোথায় যাচ্ছেন। আমার স্বামীকে এভাবে গুলি করে হত্যা করা হলো। আমি এর বিচার চাই। আমি কি নিয়ে বাঁচবো আমার তো কিছুই রইলো না। এই মেয়েকে নিয়ে আমার পথে বসা ছাড়া আর কোনো গতি নেই।
আপনার স্বামী বিএনপি করতো, বিভিন্ন নেতাদের সঙ্গে তার ছবি আছে এবং তিনি নিয়মিত পার্টি অফিসে যেতেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো উত্তর দেননি।  
এদিকে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, নিহত মকবুল পল­বী থানা বিএনপি’র সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি নিয়মিত পার্টি অফিসে যাতায়াত করতেন। বিএনপি পার্টি অফিসের সামনে বিভিন্ন নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তার ছবি রয়েছে।
নিহত মকবুলের মরদেহ হস্তান্তর : রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে নিহত মকবুল হোসেনের (৪৩) মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষ হয়। পরে তার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ।
নিহত মকবুলের বড় ভাই নূর হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আমার ভাইয়ের ময়নাতদন্ত শেষ হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে পুলিশ আমার ভাইয়ের মরদেহ হস্তান্তর করেছে। আমরা মরদেহ নিয়ে মিরপুরের কালশীতে জানাজা শেষে কবরস্থানে দাফন করবো। 
মকবুলের পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস ফখরুলের : বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে কিছুক্ষণ অবস্থান করে নয়াপল্টনে গুলিতে নিহত মকবুলের স্বজনদের সাথে কথা বলেছেন। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে ঢামেক হাসপাতালে ৩-৪ মিনিট অবস্থান করে সেখান থেকে চলে যান ফখরুল। তবে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে কোনো কথা বলেননি তিনি।
নিহত মকবুল হোসেনের ভাই নূর হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হঠাৎ এখানে এসে আমাদের সাথে কয়েক মিনিট কথা বলে হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান। এ সময়ে মকবুলের স্ত্রী ও বাচ্চাকে সান্ত্বনা দিয়ে ধৈর্য ধরার আহŸান জানিয়ে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন তিনি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, নিহত মকবুলকে দেখতে বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এখানে এসে কয়েক মিনিট পরে হাসপাতাল ত্যাগ করে চলে যান।