খুলনা | শনিবার | ২৩ নভেম্বর ২০২৪ | ৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

ডাকবাংলা-রূপসা খেয়াঘাট, দ্বন্দ্ব দু’টি সেবা সংস্থার

জেলা পরিষদের অধীনে থাকা নগরীর সকল ঘাটের ইজারায় টেন্ডার দেবে কেসিসি, দখলে যাবে পহেলা বৈশাখে

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০১:০২ এ.এম | ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩


খুলনা সিটি কর্পোরেশন ও জেলা পরিষদের মধ্যে জায়গা নিয়ে দ্ব›দ্ব দীর্ঘ দিনের। এরমধ্যে বহুল আলোচিত নগরীর প্রাণ কেন্দ্র ডাকবাংলার জায়গাটি নিয়ে চলছে দীর্ঘ দিনের রশি টানাটানি। কয়েকবার জেলা পরিষদ ডাকবাংলার জায়গায় নতুন স্থাপনা করার চেষ্টা করলেও দ্ব›দ্ব নিরসন না হওয়ায় সেটি এখন ঝুলে আছে। এরই মধ্যে নতুন করে বিবাদ শুরু হয়েছে রূপসাঘাটের ইজারা নিয়ে। গত ১২ ফেব্র“য়ারি ১৬টি ঘাট ইজারার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জেলা পরিষদ। ওই বিজ্ঞপ্তিটি বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত হয়। এরমধ্যে ১৫ নম্বরে রূপসা খেয়া ঘাট ইজারার তথ্য উলে­খ রয়েছে। ওই ঘটনার পর ক্ষুব্ধ হয় কেসিসি কর্তৃপক্ষ ।
এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে মেয়র কাপ হাডুডু টুর্নামেন্ট উপলক্ষে নগর ভবনের শহীদ আলতাফ মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক এ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা আগামী পহেলা বৈশাখ থেকে খুলনা শহরের সঙ্গে লাগোয়া জেলা পরিষদের সকল খেয়াঘাট দখলে যাবো এবং নিয়ম অনুযায়ী টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে সিটি মেয়র বলেন, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের টেরিটরি সীমানা হচ্ছে রূপসা ও ভৈরব নদীর মাঝখান পর্যন্ত। তারপর থেকে রয়েছে জেলা পরিষদের। তাই সিটির মধ্যে থাকার সকল ঘাটের মালিকানা হবে সিটি কর্পোরেশন। 
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সকল ঘাটের যাতায়াতের রাস্তাসহ সকল উন্নয়ন করবে কেসিসি, আর আয় করবে অন্য প্রতিষ্ঠান তা হতে পারে না। তিনি বলেন, রূপসা ঘাটটি আগে ছিল সড়ক ও জনপথের। খানজাহান আলী সেতু (রূপসা সেতু) হওয়ার পর সড়ক ও জনপথ ঘাটটি কেসিসি’র নিকট হস্তান্তর করা হয়। তখন থেকে কেসিসি রূপসা ঘাটের সার্বিক উন্নয়ন করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, সিআরডিবি প্রকল্পের অধীনে ইতোমধ্যে ২২ কোটি টাকার উন্নয়ন করা হয়েছে। তখন থেকে এটির রাজস্ব কেসিসি কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করছে। তবে ঘাটের অপর পাড়ের জায়গাটিও সড়ক ও জনপথের হওয়ায় রাজস্বের কিছু অংশ আমরা রূপসা উপজেলা প্রশাসনকে দিয়ে আসছি। এ অবস্থায় সম্প্রতি অযাচিতভাবে এই ঘাটটি ইজারা প্রদানের জন্য টেন্ডার আহবান করেছে জেলা পরিষদ।
সিটি মেয়র বলেন, বর্তমানে নগরীতে কেসিসি রূপসা খেয়াঘাট, ফুলবাড়িগেট টিবি হাসপাতাল সংলগ্ন এজাক্স খেয়াঘাট ও কদমতলা কাঁচারী খেয়াঘাট পরিচালনা করছে। আর জেলা পরিষদ নগরীর দৌলতপুর পুরাতন স্টিমার ঘাট, দৌলতপুর মহেশ^রপাশা ঘাট, দৌলতপুর বার্মাসেল ঘাট, দৌলতপুর বাজার ঘাট, ১ নং কাস্টমস ঘাট, জেলখানা সংলগ্ন বটতলা ঘাট ও কালিবাড়ি খেয়াঘাটসহ ৭টি ঘাট পরিচালনা করছে। এছাড়া বিআইডব্লিউটিএ ১৩টি ঘাট পরিচালনা করছে। ইতোমধ্যে বিআইডব্লিউটিএ-কে পত্র দ্বারা অবহিত করা হয়েছে পরবর্তী টেন্ডার প্রক্রিয়ার আগে কেসিসি’র সঙ্গে সমন্বয় করার জন্য।
উলে­খ্য, গত ১২ ফেব্র“য়ারি ১৬টি ঘাট ইজারার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জেলা পরিষদ। বিজ্ঞপ্তিটি বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে ১৫ নম্বরে রূপসা খেয়া ঘাট ইজারার তথ্য উলে­খ রয়েছে।
এবিষয়ে কেসিসির বৈষয়িক কর্মকর্তা নুরুজ্জামান তালুকদার জানান, রূপসা ঘাটে ফেরী চলাচল বন্ধ হওয়ার পর ২০০৫ সালের ১২ জুন রূপসা ঘাটটি কেসিসি’র কাছে হস্তান্তর করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। সেই থেকে কেসিসি ঘাটটি পরিচালনার পাশাপাশি উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছে। হঠাৎ করে জেলা পরিষদের খেয়াঘাট ইজারার দরপত্র বিজ্ঞপ্তিতে রূপসা খেয়া ঘাটের নাম দেখে সবাই অবাক।
এর পরপরই গত ১৪ ফেব্র“য়ারি বিকালে গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠায় কেসিসি। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জেলা পরিষদের বিজ্ঞপ্তিতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রূপসা খেয়াঘাটের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যা আপত্তিকর ও নিন্দনীয়। দরপত্রের ১৫নং ক্রমিকে উলি­খিত ‘রূপসা খেয়াঘাট’-এর বিপরীতে কোন প্রকার দরপত্র দাখিল/অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকার জন্য কেসিসি কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানাচ্ছে।’
খুলনা জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান জানান, ১৮৮৫ সালে জেলা পরিষদ প্রতিষ্ঠিত হয়। রূপসাসহ সব ঘাটের মালিকানা জেলা পরিষদের ছিল। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সংস্থা ঘাটটি ইজারা নিয়ে জেলা পরিষদের সঙ্গে বিরোধে জড়ায়। এনিয়ে আদালতে একাধিক মামলা চলছে। স¤প্রতি মামলাটি নিষ্পত্তি হয়েছে। এতে ঘাটের প্রকৃত মালিকানা জেলা পরিষদ ফিরে পেয়েছে। এজন্য এবার দরপত্র আহŸান করা হয়েছে।
তার আগে খুলনার প্রাণকেন্দ্র ডাকবাংলা মোড়ে জমির মালিকানা নিয়ে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) এবং জেলা পরিষদের মধ্যে দ্ব›দ্ব তৈরি হয়েছে। গত ২০ নভেম্বর মাসে ওই জমিতে নির্মাণাধীন স্থাপনায় তালা দিয়েছে কেসিসি। এতে জেলা পরিষদের কর্মকর্তারা বিব্রতবোধ করছেন। এনিয়ে দুপক্ষের মধ্যে চিঠি চালাচালি চলছে। বিষয়টি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। সরকারি দু’টি দপ্তরের দ্ব›েদ্বর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা।
জানা গেছে, ডাকবাংলা মোড়ের সদর মার্কেটের অভ্যন্তরে ফাঁকা অংশে কিছুদিন আগে বঙ্গবন্ধু কর্নার ও দোকান নির্মাণ করছে জেলা পরিষদ। কিন্তু ২০ নভেম্বর মার্কেটের ওই স্থানের প্রবেশপথে তালা ঝুলিয়ে দেন কেসিসি’র একজন কাউন্সিলর। কেসিসির দাবি, ডাকবাংলা সদর মার্কেটের অভ্যন্তরে ১৮ শতাংশ জমির মালিক সিটি কর্পোরেশন। পাশে বঙ্গবন্ধু কর্নার নির্মাণ করা হয়েছে, তা নিয়ে আপত্তি নেই। কিন্তু কেসিসির সঙ্গে আলোচনা না করে সেখানে দোকান নির্মাণকাজ শুরু করলে তা বন্ধ রাখতে বলা হয়।  
এদিকে গত ২২ নভেম্বর খুলনা জেলা পরিষদকে দেওয়া চিঠিতে কেসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (যুগ্ম সচিব) লস্কার তাজুল ইসলাম বলেন, কেসিসির মালিকানাধীন ১৮ শতাংশ জমিতে নির্মাণকাজ বন্ধসহ নির্মাণাধীন নতুন স্থাপনা অপসারণ না করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে জেলা পরিষদের কর্মকর্তারা বলছেন, ডাকবাংলা সদর মার্কেটের ১৮ শতাংশ জমি কেসিসি নিজেদের দাবি করলেও ওই জমির মালিক রেকর্ড অনুযায়ী জেলা পরিষদ। কাগজপত্র যাচাই-বাছাই না করেই নিজেদের সম্পত্তি দাবি করা এবং মার্কেটের প্রবেশপথে তালা দেওয়ার ঘটনাটি দুঃখজনক।
এ ঘটনায় ২৩ নভেম্বর কেসিসিকে দেওয়া চিঠিতে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (উপসচিব) মোঃ আছাদুজ্জামান জানান, সরকারি রেকর্ডে ডাকবাংলা মোড়ে ওই স্থানে খুলনা জেলা পরিষদের মালিকানায় ৫০.৪০ শতাংশ জমি রয়েছে। সিএস, এসএ এবং আরএস খতিয়ানের মাধ্যমে ওই জমির রেকর্ডিয় মালিক জেলা পরিষদ। ওই জমিতে সিটি করপোরেশনের মালিকানা স্বত্ব নেই। উপরন্তু ওই জমিতে সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত হোল্ডিং ট্যাক্স জেলা পরিষদ নিয়মিত পরিশোধ করে আসছে। তিনি বলেন, পাওয়ার হাউজ মোড়ের অপর একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নির্মাণের জন্য সেখানকার ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের জন্য ডাকবাংলা মার্কেটের খালি জমিতে অস্থায়ী ইজারা প্রদানে উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু কাগজপত্র যাচাই ছাড়াই নির্মাণকাজে বাধা দেওয়া হচ্ছে। 
জানা গেছে, সিএস খতিয়ানে ২৬৯৮ দাগের বাটা দাগ নং ২৬৯৮/২৭১৫-এ ০.১৮ শতক জমি মিউনিসিপিলিটি নামে দেখানো হয়, যা সিএস রেকর্ড সংশোধিত আকারে এসএ রেকর্ডে খুলনা জেলা পরিষদের মালিকানায় রেকর্ড হয়েছে। পরে বিআরএস খতিয়ানে ৫০.৪০ শতাংশ সম্পূর্ণ জমি জেলা পরিষদের একক নামে রেকর্ড হয়ে প্রিন্ট পর্চা ও চূড়ান্ত গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।