খুলনা | শুক্রবার | ০৯ মে ২০২৫ | ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

অবিলম্বে চালকদের লাইসেন্স ও স্মার্ট কার্ড দেওয়া হোক

|
১২:০৯ এ.এম | ১৪ জুন ২০২১

আমাদের দেশে সড়কপথে যানবাহন ঠিকমতো চলাচল করছে কি না, মালিক ও চালকেরা আইন মানছেন কি না, সেসব তদারকি করার দায়িত্ব বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ)। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম দেখে মনে হয়, তারা মালিক, শ্রমিক তথা চালকদের সমস্যা নিয়ে বিন্দুমাত্র ভাবিত নয়।
বিআরটিএ কতটা দায়িত্বহীন, তা জানা গেল গতকাল শনিবার বিভিন্ন খবরের কাগজের প্রকাশিত প্রতিবেদনে। অন্তত ১৫ লাখ মানুষ স্মার্ট কার্ডের লাইসেন্স পাওয়ার জন্য বিআরটিএর দুয়ারে ধরণা দিচ্ছেন। অনেকের বিদেশে ভিসা প্রস্তুত হলেও লাইসেন্স না থাকায় আবেদন করতে পারছেন না। বিআরটিএ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সব শ্রেণির চালককে লাইসেন্স ও স্মার্ট কার্ড দেয়। সাধারণত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ গাড়ি চালকেরা দুই সপ্তাহ থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে লাইসেন্স পেয়ে থাকেন। উদ্বেগের বিষয় হলো অনেকে লাইসেন্স পাওয়ার জন্য দেড় থেকে আড়াই বছর পর্যন্ত ঘুরছেন। আশির মোল­া নামে এক বিদেশগামী চালক ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে পরীক্ষা দিয়ে এখন পর্যন্ত লাইসেন্স পাননি। বিআরটিএ’র দেওয়া রসিদে চারবার তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। সর্বশেষ তারিখ দেওয়া হয়েছে চলতি বছরের ১৩ ডিসেম্বর।
সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে বাংলাদেশি চালকদের চাহিদা বেশি। অথচ বিআরটিএ’র স্বেচ্ছাচারিতার কারণে তাঁরা যেতে পারছেন না। বিদেশগামী চালক কেন, দেশের ভেতরেও অনেক চালক চাকরি পাচ্ছেন না লাইসেন্স না থাকায়। ২০১৮ সালে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জাতীয় সংসদে জানিয়েছিলেন, দেশে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ৩৪ লাখ ৯৮ হাজার ৬২০টি। আর ড্রাইভিং লাইসেন্সপ্রাপ্ত চালক আছেন ১৮ লাখ ৬৯ হাজার ৮১৬ জন। এর অর্থ প্রায় অর্ধেক চালকেরই লাইসেন্স নেই। গত দুই বছরে লাইসেন্সহীন চালকের সংখ্যা আরও বেড়েছে।
যখন লাখ লাখ মানুষ লাইসেন্সের জন্য মাসের পর মাস ধরণা দিচ্ছেন, তখন বিআরটিএ পছন্দসই প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য কালক্ষেপণ করছে। বর্তমানে চালকের লাইসেন্স প্রিন্টের কাজ করছে টাইগার আইটি নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। চলতি মাসের ২২ তারিখ তাদের চুক্তি শেষ হচ্ছে। ২০১৯ সালের মাঝামাঝি নির্বাচন কমিশনের (ইসি) স্মার্ট কার্ড মুদ্রণ সংক্রান্ত প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে ওবারথুর ও টাইগার আইটিকে সাড়ে ৯ বছরের জন্য কালো তালিকাভুক্ত করে বিশ্বব্যাংক। ২০১৯ সালের ১০ জুন ৩৫ লাখ স্মার্ট কার্ড সরবরাহের জন্য দরপত্র আহŸান করে বিআরটিএ। কয়েকবার দরপত্র আহŸান ও শর্ত পরিবর্তন করে শেষ পর্যন্ত মাদ্রাজ প্রিন্টার্সের সঙ্গে চুক্তি হলেও তারা এখন পর্যন্ত কার্ড সরবরাহ করেনি।
বিআরটিএ অন্তবর্তী সময়ের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা না করা এবং দ্রুত নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করতে না পারার কারণে লাইসেন্স প্রত্যাশীদের হয়রানি বেড়েছে। মহল বিশেষের স্বার্থ রক্ষার জন্য লাখ লাখ মানুষকে দুর্ভোগ ও অনিশ্চয়তার মধ্যে রাখা অমার্জনীয় অপরাধ। সড়ক ও সেতুমন্ত্রী প্রায় প্রতিদিনই রাজনীতি নিয়ে নানা বাণী দেন। নিজ মন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে চলছে, কাদের খামখেয়ালির জন্য মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন, সেসবের দিকেও তাঁর নজর দেওয়া উচিত।