খুলনা | বুধবার | ২৫ জুন ২০২৫ | ১১ আষাঢ় ১৪৩২

সংবাদ সম্মেলনে শিশু অথৈ ও তার পরিবার

গভীর রাতে চিকিৎসকের ক্ষুদে বার্তা ঘুম? ‘রাগ? ‘কথা বলা যাবে?’

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০১:২৪ এ.এম | ০২ মার্চ ২০২৩


খুলনায় ভুল চিকিৎসায় আঙুল হারানো শিশুর পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, ডা. শেখ নিশাত আবদুল­াহর পৈশাচিক মানসিকতার শিকার হয়েছে ছোট্ট শিশু অথৈ ও তার পরিবার। চিকিৎসকের কুরুচিপূর্ণ ও অন্যায় আবদার পূরণ না করায় শিশুটি হাতের একটি আঙ্গুল হারিয়েছে। মামলার আসামি হয়েছে শিশুটির বাবা নাঈমুজ্জামান শেখ। চিকিৎসকের পা ধরে ক্ষমা চেয়েও পাননি তিনি। এখন গ্রেফতারের হাত থেকে বাঁচতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। আর অথৈ এর চিকিৎসার অভাবে ছুটে বেড়াচ্ছে তাদের পুরো পরিবার।
বুধবার দুপুরে খুলনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে পুরো ঘটনা সবার সামনে তুলে ধরেন শিশুটির মা নুসরাত আরা ময়না। সাংবাদিকদের তিনি জানান, মাত্র এক বছর বয়সেই তাদের একমাত্র সন্তান অথৈই এর হাত আগুনে পুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওই সময় চিকিৎসকরা একটু বড় হলে অস্ত্রপচারের পরামর্শ দেন। কিন্তু অর্থ সংকটসহ নানা কারণে করা যায়নি। গতকাল বুধবার দায়েরকৃত মামলায় উলে­খ করা বিষয়টি ভুক্তভোগী গৃহবধূ সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে শিশু অথৈ-এর মা ময়না আরও  বলেন, ডাঃ নিশাত আবদুল­াহ আমার মেয়ের চিকিৎসার সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন সময় আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্ট করেন। আমার মোবাইল নম্বরে তার ব্যক্তিগত মোবাইল থেকে ১১ ফেব্র“য়ারি রাত ১২টা ৩২ মিনিটে ‘ঘুম?’ রাত ১২টা ৩৪ মিনিটে ‘রাগ?’ রাত ১২টা ৩৮ মিনিটে ‘কথা বলা যাবে?’ সহ বিভিন্ন সময় ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তা প্রেরণ করেন। এছাড়া বিভিন্ন সময় ফোন করে আমাকে একা দেখা করতে বলেন। আমার মেয়ের সু-চিকিৎসার কথা চিন্তা করে চিকিৎসকের মোবাইলের কল ও ম্যাসেজের বিষয়ে কাউকে কিছু জানাইনি।
সংবাদ সম্মেলনে অথৈ-এর মা বলেন, ৬ ফেব্র“য়ারি ডাঃ নিশাত আব্দুল­াহ আমার মেয়েকে নিয়ে শেখপাড়া হক নার্সিং হোমের চেম্বারে ড্রেসিং করানোর জন্য যেতে বলেন। সন্ধ্যায় সেখানে গেলেও আমাকে প্রায় দেড় ঘণ্টা বসিয়ে রাখেন। রাত সাড়ে ৮টায় আমার মেয়েকে নিয়ে অপারেশন থিয়েটারের ভেতরে গেলে নিশাত আবদুল­াহ আমাকে বিভিন্ন প্রকার আপত্তিকর কথাবার্তা বলার একপর্যায়ে আমার হাত ধরে টেনে তার কাছে নেওয়ার চেষ্টা করে। তিনি বিষয়টি বুঝতে পেরে মেয়েকে নিয়ে অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হয়ে যান। বিষয়টি ক্লিনিক মালিককে জানালে তিনি ডাঃ নিশাতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো কাউকে না বলার জন্য চাপ দেন।
তিনি বলেন, ২৫ ফেব্র“য়ারি রাতে হঠাৎ করে অথৈ-এর আঙুল হাত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। দ্রুত হক নার্সিং হোমে ছুটে গেলে ডা. নিশাতসহ অন্যরা কেউই অথৈ-এর চিকিৎসা করতে রাজি হয়নি। রাত ১২টার পরে কোনো রকম ড্রেসিং করে বাড়ি ফিরে যান। এরপর থেকে অথৈ কোনো চিকিৎসা হচ্ছে না। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, আবু নাসের হাসপাতাল, হক নার্সিং হোমে গিয়েছি, কেউ অথৈ-এর চিকিৎসা করাতে রাজি হচ্ছে না। এর মধ্যে জানতে পেরেছি, ওর বাবার নামে মামলা হয়েছে।
এদিকে হাসপাতালে পাওয়া যায়নি ডাঃ নিশাতকে। একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
মামলা ও যৌন হয়রানির অভিযোগ সম্পর্কে বিএমএ খুলনার সভাপতি ডাঃ শেখ বাহারুল আলম বলেন, একজন চিকিৎসককে অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে মারধর করা হয়েছে। এই হামলাকারীদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে। ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তা পুলিশ তদন্ত করে দেখুক। যদি সত্য হয় তাহলে তাকেও আইনের আওতায় আনলে চিকিৎসকদের কোনো আপত্তি থাকবে না।