খুলনা | শনিবার | ১০ জুন ২০২৩ | ২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০

খাদ্যের গুণাগুণ মান সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি

|
০১:০৩ এ.এম | ১৬ মার্চ ২০২৩


নিরাপদ খাদ্য সম্পর্কে আমরা এখনো উদাসীন। আমরা অনেকেই সময় বাঁচাতে সহজলভ্য, আকর্ষণীয় ও রেডিমেড খাবারে আসক্ত হয়ে পড়েছি। গরমে বাইরে বের হলে প্রবল তৃষ্ণায় অনেকেই ভিড় জমান রাস্তার পাশের লেবুর শরবত, ফলের জুস, রঙবেরঙের পানীয় শরবতের দোকানের সামনে। অথচ সেগুলোয় ব্যবহৃত বরফের বেশিরভাগই জীবাণুযুক্ত সরবরাহ লাইনের পানি দিয়ে তৈরি করা হয়। আবার মিষ্টি স্বাদ আনতে ক্ষতিকর স্যাকারিন এবং আকর্ষণীয় করতে ব্যবহার করা হয় টেক্সটাইলের বিভিন্ন রঙ ও কেমিক্যাল।
সুষম ও নিরাপদ খাবার মানুষকে সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। তেমনি আবার অনিরাপদ খাদ্য মৃত্যুর কারণ হতে পারে। আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষের মধ্যে এমন একটি ধারণা প্রচলিত যে, খাবার খাওয়ার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে পেট ভরা। নিরাপদ খাদ্য হলো মানসম্মত, ভেজালমুক্ত ও সঠিক গুণাগুণ সমৃদ্ধ খাবার। অথচ আমাদের এখানে যেন তেনভাবে পেট ভরলেই সেটিকে খাবার হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। গড়পড়তা মানুষ মনে করে খাবার খেলেই হলো। পুষ্টি কী আর নিরাপদ খাদ্য কী-এসব বিষয় নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। খাদ্যের গুণাগুণ তো দূরের কথা, সেটি কতটা নিরাপদÑতা নিয়েও বেশির ভাগেরই কোনো ভাবনা নেই। আবার অনেকে মনে করেন, নামিদামি খাবার মানেই তা পুষ্টিকর। কম দামের খাবারও যে অনেক নামিদামি খাবারের চেয়ে বেশি পুষ্টিকর হতে পারে, এ বিষয়টি আমাদের অনেকেরই অজানা। খাবার কেনা বা গ্রহণ করার সময় দাম যাচাই না করে সেটির গুণাগুণ ঠিক আছে কিনা, তা যাচাই করাটা অপরিহার্য।
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ছোট-বড় শহরের অলি-গলিতে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ভাজাপোড়া খাবারের দোকান। পিছিয়ে নেই টক-ঝাল মেশানো চটপটির পসরাও। এসব খাবার দেখতে খুবই আকর্ষণীয় ও লোভনীয়। কিন্তু এ খাবারগুলোর বেশিরভাগই তৈরি করা হয় পচা-বাসি সামগ্রী ব্যবহার করে। ভাজার ক্ষেত্রে একই তেল বারবার ব্যবহার করা হয়Ñযেখানে তৈরি হয় ট্র্যান্স ফ্যাট। অনিরাপদ দূষিত পানিতে নানা উপাদান মিশিয়ে তৈরি করা হয় টক পানি। অলি-গলিতে গড়ে উঠেছে ফাস্টফুডের দোকান, ছোট ছোট ফুডকোর্ট। এগুলো ফুটপাতের একটি অংশ হয়ে উঠেছে। এসব দোকানে চলছে কম দামে নানা ফাস্টফুড জাতীয় খাবারের রমরমা বেচাকেনা। খাবার সুস্বাদু এবং আকর্ষণীয় করে তুলতে এসবে ব্যবহার করা হচ্ছে স্বাদবর্ধক নানা উপাদান টেস্টিং সল্ট, নানা ধরণের সস ও ক্যাচাপ। বর্তমানে খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি করতে মাত্রাতিরিক্ত হারে মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট ব্যবহার করা হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনেকের বাসায় সকালে কিংবা বিকালের নাস্তার টেবিলে থাকছে পাউরুটি ও নানা ধরণের বেকারি আইটেম। গবেষণায় দেখা গেছে, এসব খাদ্যপণ্যে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মাত্রাতিরিক্ত ক্ষতিকর পটাশিয়াম ব্রোমাইড ও ট্রান্সফ্যাটের উপস্থিতি থাকে।
মেডিক্যাল সায়েন্সের আর্টিকেল সমৃদ্ধ পাবমেডে বাংলাদেশকে নিয়ে এক আর্টিকেলের সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রতিবছর বাংলাদেশে কমপক্ষে ৩০ লাখ মানুষ খাদ্যজনিত অসুস্থতায় ভোগেন। আর এর প্রধান কারণ দেখানো হয়েছে, স্ট্রিটফুড বা রাস্তার ফুটপাতের অস্বাস্থ্যকর খাবার। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এফএওর করা ২০১০ সালের এক গবেষণায় উঠে আসে, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার রাস্তার পাশের এসব খাবার পরিবেশনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ২৫ শতাংশ মানুষই অশিক্ষিত। তাদের নেই কোনো একাডেমিক যোগ্যতা। আরও বলা হয়েছে, তাদের অধিকাংশই দিনে ১৩ থেকে ১৮ ঘণ্টা কাজে নিয়োজিত থাকেন টয়লেট সুবিধা ছাড়াই। এই দোকানগুলোর ৬৮ শতাংশ ফুটপাতে অবস্থিত। আর ৩০ শতাংশ দোকান ড্রেনের কাছাকাছি অবস্থিত এবং পোকামাকড় ও মাছি দ্বারা দূষিত। রাস্তার পাশের প্রায় সব দোকানের খাবার খোলা আকাশের নিচে উন্মুক্ত অবস্থায় তৈরি, বিক্রি ও সাজিয়ে রাখা হয়। ফলে এসব খাবারে প্রতিনিয়ত পোকামাকড়, মাছি দ্বারা দূষিত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। এসব খাবার যেভাবে উন্মুক্ত স্থানে পরিবেশন ও তৈরি করা হয়। ফলে এর পাশ দিয়ে যানবাহন চলাচল করলে বাতাসের ময়লা ধূলিকণাগুলো ওইসব খাবারে পড়বেÑএটিই স্বাভাবিক।
উন্নত দেশগুলোতেও স্ট্রিটফুডের অনেক কদর রয়েছে। কিন্তু এ খাবারগুলো তৈরিতে পরিচ্ছন্ন পরিবেশ আর স্বাস্থ্যসম্মত উপায় অবলম্বন করায় ওই দেশগুলোর মানুষ বাংলাদেশের মতো ঝুঁকি থেকে মুক্ত। আশা করছি, সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা এসব নিয়ে ভাববেন ও নীতিমালা প্রয়োগ করে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে এগিয়ে আসবেন। আমরা মনেকরি, সবকিছুর মূলে রয়েছে আপনার সচেতনতা। এর বিকল্প কিছু নেই।