খুলনা | মঙ্গলবার | ১৩ মে ২০২৫ | ৩০ বৈশাখ ১৪৩২

মানবপাচারের দালালচক্রকে গ্রেফতার করুন

|
১২:১৬ এ.এম | ১৯ মার্চ ২০২৩


একটু ভালোভাবে বেঁচে থাকার আশায় কিংবা একটু উন্নত জীবনের প্রত্যাশায় মানুষ অপেক্ষাকৃত উন্নত দেশগুলোতে পাড়ি জমান। কিন্তু বৈধভাবে যাওয়ার সুযোগ হয় খুব কম মানুষের। আর এই সুযোগটাই নেয় দালাল বা প্রতারক শ্রেণি। ভালো চাকুরি, লোভনীয় সুযোগ-সুবিধার কথা বলে অভিবাসন প্রত্যাশীদের আকৃষ্ট করে। তারপর টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিয়ে তাঁদের ঠেলে দেয় ভয়ঙ্কর বিপদের মুখে। জীবনও দিতে হয় অনেককে। তেমনই একটি খবর এসেছে গণমাধ্যমে। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, লিবিয়া থেকে অবৈধভাবে ভূমধ্যসাগর দিয়ে ইতালি যাওয়ার পথে ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটে। ট্রলারে থাকা প্রায় অর্ধশত অভিবাসন প্রত্যাশীর মধ্যে ৩০ জনই ছিলেন বাংলাদেশি। তাঁদের মধ্যে ১৭ জনকে উদ্ধার করা গেলেও ১৩ জন নিখোঁজ রয়েছেন। এই ১৩ যুবকের সবাই ফরিদপুরের সালথা ও নগরকান্দা উপজেলার বাসিন্দা। 
এর আগেও ভূমধ্যসাগরে বহু ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটেছে। বহু বাংলাদেশির সলিল সমাধি হয়েছে। অনেকে সাগরে ভাসতে ভাসতে পানীয় জল ও খাবারের অভাবে মারা গেছেন। শুধু তা-ই নয়, অনেককে লিবিয়ার মরুভূমিতে অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রে রেখে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের ভিডিও পরিবারকে দেখিয়ে মুক্তিপণ আদায় করা হয়। এমন ঘটনা ঘটে অন্যান্য গন্তব্যেও। নৌকায় মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমাতে গিয়ে অনেকেরই সলিল সমাধি হয়েছে। থাইল্যান্ডের জঙ্গলে বাংলাদেশিদের বহু গণকবরেরও সন্ধান পাওয়া গেছে। তারপরও এমন ঝুঁকিপূর্ণভাবে বিদেশে পাড়ি জমানো বন্ধ হয়নি। আর এর প্রধান কারণ, দেশজুড়ে মানবপাচারকারীদের বিস্তৃত নেটওয়ার্ক। তাদের অন্যতম টার্গেট তরুণ বা যুবক শ্রেণি। জানা যায়, নিখোঁজ ১৩ যুবকই ইতালি যাচ্ছিলেন স্থানীয় একটি দালাল চক্রের মাধ্যমে। নিখোঁজ যুবকদের পরিবারের পক্ষ থেকে দালালদের অনেকের নামও প্রকাশ করা হয়েছে। খবর প্রকাশের পর চক্রের কেউ কেউ পালিয়ে রয়েছেন। কেউ কেউ বলছেন, তাঁরা এ কাজে জড়িত নন। আর স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ বলছে, তাদের কাছে এখনো কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেন অভিযোগ না পেলে অবৈধভাবে মানবপাচারকারী, ঠক, বাটপারদের ধরার ব্যাপারে কারো কোনো দায় নেই।
২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে শুধু ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ছয় লাখের বেশি অভিবাসন প্রত্যাশী ইউরোপে প্রবেশ করেছেন। এ সময়ে প্রায় ১৫ হাজার অভিবাসন প্রত্যাশীর মৃত্যু হয়েছে। ব্যাপক সংখ্যায় অভিবাসন প্রত্যাশীর আগমনে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে নানা রকম সংকট তৈরি হচ্ছে। তাই সা¤প্রতিক সময়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অভিবাসন বিরোধী তৎপরতা শুরু হয়েছে। যুক্তরাজ্যে নৌপথে পাড়ি দেওয়া অভিবাসন প্রত্যাশীদের ফিরিয়ে দিতে আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বাংলাদেশকে চাপ দেওয়া হচ্ছে অবৈধ অভিবাসন প্রত্যাশীদের ফিরিয়ে নেওয়া এবং মানবপাচার বন্ধ করার জন্য। বাংলাদেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেও। অবৈধ অভিবাসনের কারণে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশ থেকে মানবপাচার বন্ধ করতে হলে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া পাচারকারীদের নেটওয়ার্ক ভাঙতে হবে। তাঁদের আইনের আওতায় আনতে হবে। আর সেই কাজটি করতে হবে স্থানীয় প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলোকেই। আমরা চাই, ফরিদপুরে মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত দালালচক্রকে দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করা হোক।