খুলনা | শুক্রবার | ০৯ মে ২০২৫ | ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

সিওপিডি ও এ্যাজমা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে

খুলনার বাতাসে দূষিত বস্তুকণা

বশির হোসেন |
০১:২৫ এ.এম | ২৩ মার্চ ২০২৩


খুলনা মহানগরীকে স্বাস্থ্যকর শহর হিসেবে গড়ে তুলতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গৃহীত প্রকল্পের এক বছরের বেশি পার হয়েছে। ২০২৭ সালের মধ্যে খুলনাকে স্বাস্থ্যকর শহর হিসেবে গড়ে তুলতে একসাথে কাজ করছে খুলনা সিটি কর্পোরেশন, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ সংশ্লিষ্ট কয়েকটি বিভাগ। তবে স্বাস্থ্যকর শহর স্থাপনে সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ খুলনার দূষিত বাতাস। মৌসুমী আবহাওয়ার কারণে গত কয়েকদিনে কিছুটা সহনীয় মাত্রায় থাকলেও বিগত কয়েক মাস ধরে খুলনার বাতাস ছিলো পুরোপুরি অস্বাস্থ্যকর। ব্যাপকহারে নির্মাণ কাজের ধুলা, মেয়াদ উত্তীর্ণ পরিবহন থেকে নির্গত ধোঁয়া ও ক্ষতিকর জ্বালানির কারণে এই দূষণ বলছে বিশেষজ্ঞরা। ফলে যে সকল কারণে বাতাশ দূষিত হচ্ছে তার পরিমাণ কমানোর দিকে নজর দেয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
নগরীর বয়রা মোড়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের বায়ুমান পরিবীক্ষণ  কেন্দ্র (ক্যামস) থেকে সার্বক্ষণিক শহরের বায়ুদূষণের মাত্রা পরিমাপ করা হয়, যা প্রতিদিন রিপোর্ট আকারে প্রকাশ হয় ক্যামসের ওয়েবসাইটে। ক্যামসের পর্যবেক্ষণ বলছে, গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারি-দুই মাস এবং গত ১৫ ফেব্র“য়ারি খুলনার বাতাস ছিল পুরোপুরি অস্বাস্থ্যকর। এছাড়া ১৭ এবং ১৮ মার্চ ও বাতাসের মান ছিলো স্বাভাবিকের তুলনের অনেক খারাপ অবস্থায়। 
বিশেষজ্ঞরা বলেন, কোনো স্থানের বাতাসে বস্তুকণার স্বাভাবিক মান বা পিপিএম (পার্টস পার মিলিয়ন) ২৪ ঘণ্টায় ১৫০ ঘনমিটার। ক্যামসের রিপোর্ট বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত কয়েক মাস ধরে খুলনার বাতাসে বস্তুকণা রয়েছে ২৫০ ঘনমিটারের ওপরে। এর মধ্যে কিছু দিন এই কণার উপস্থিতি ৪০০ থেকে ৪৫০ ঘনমিটার ছাড়ায়। গড়ে এর পরিমান ৩৫০ এর উপরে। একই ভাবে স্বাভাবিক বাতাসে সালফার ডাই-অক্সাইডের উপস্থিতি ২৪ ঘণ্টায় দশমিক ১৪ পিপিএম থাকার কথা। কিন্তু খুলনার বাতাসে বর্তমানে সালফারের পরিমাণ ১.৭ পিপিবির (পার্টস পার বিলিয়ন) ওপরে। ওজন থাকার কথা ঘণ্টায় দশমিক ১২ পিপিএম; কিন্তু রয়েছে ৩.৫০ পিপিবির ওপরে। এছাড়া অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদানের উপস্থিতি দিন দিন বাড়ছে। পিএম ১০ এবং পিএম ২.৫ দু’টি সুচকেই দিনের বেশিরভাগ সময় বাতাশের মান স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি থাকছে।
নগরীতে চলাচলের সময়ও দূষণের বিষয়টি চোখে পড়ে। নগরীর সোনাডাঙ্গা থেকে আবু নাসের হাসপাতাল থেকে খালিশপুর পর্যন্ত এখনও অধিকাংশ সড়কের অবস্থা খারাপ। দীর্ঘদিন ধরে নির্মাণ কাজ চলায় এ এলাকার বাতাসে মারাত্মক খারাপ অবস্থা রয়েছে। এছাড়াও খুলনা শহরের অধিকাংশ সড়ক এখন ধুলায় ধূসর। মাত্রাতিরিক্ত ধুলাবালুর কারণে জোড়াগেট, আহসান আহমেদ রোড, শামসুর রহমান রোড, বিআইডিসি রোড, খানজাহান আলী সড়ক, শিপইয়ার্ড রোড, মুজগুন্নী মহাসড়ক, বাস টার্মিনাল থেকে বয়রা, নতুন রাস্তা, বাস টার্মিনাল সংযোগ সড়ক এলাকার অবস্থা খুবই ভয়ংকর। তাই এসব এলাকা ও রাস্তা এড়িয়ে চলছে সাধারণ মানুষ। 
পরিবেশ অধিদপ্তর খুলনার সিনিয়র কেমিস্ট তানভীর হায়দার বলেন, নির্মাণ কাজের ধুলাবালুর কারণে বাতাসে ভারি বস্তুকনা বাড়ছে। আর পরিবহন থেকে নির্গত ধোঁয়া, ক্ষতিকর জ্বালানি থেকে বাড়ছে সালফার ডাই-অক্সাইড। ওজনসহ বাতাসে এসব উপাদান বেশি থাকায় কাশি, হাঁপানিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। 
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বক্ষব্যাধি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডাঃ মোঃ খসরুল আলম বলেন বাতাসে দূষণের কারণে খুলনায় মানুষের মধ্যে সিওপিডি এবং এ্যাজমা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাতাসে সু² কণার পরিমাণ বেশি হলে তা সহজেও মানুষের নিঃশ্বাসের সাথে ফুসফুস ও লাঞ্চকে ক্ষতি করে। এতে করে সিওপিডি এ্যাজমাসহ নানান অসুস্থতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা নিয়ে বিস্তর গবেষণা করা প্রয়োজন বলে মনে করেন এই বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ।
কেসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ স্বপন কুমার হালদার বলেন, বাতাসে বস্তুকণার পরিমাণ বাড়লে অল্পতেই মানুষ কাশি ও এ্যাজমায় আক্রান্ত হয়। বাচ্চাদের শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়ার প্রকোপ বাড়ে। স্বাস্থ্যকর শহরের পরবর্তী সভায় বিষয়টি উত্থাপনের পাশাপাশি বায়ুমান বাড়াতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ-এর উপাধ্যক্ষ ডাঃ মেহেদী নেওয়াজ বলেন খুলনা শহরের বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা নিরসন ও রাস্তাঘাট সংস্কারের জন্য ব্যাপক উন্নয়নের কাজ চলার কারণে সাময়িকভাবে বাতাসে ওজনসহ দুষণ কিছুুটা বেড়েছে। আশা করি খুব শিগগিরই তা কমে যাবে। তারপরও আগামী সভায় বিষয়টি উপস্থাপনের মাধ্যমে যা যা করণীয় তা করা হবে। 
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, শুষ্ক মৌসুম হচ্ছে উন্নয়ন কাজের সময়। নগরীর বেশিরভাগ এলাকায় সড়ক, ড্রেনের কাজ চলছে। এ কারণে ধুলাবালু বেড়েছে। প্রকল্পের কাজ শেষ ও বর্ষা মৌসুমে আবার বায়ুমান সহনীয় হয়ে আসবে।