খুলনা | শুক্রবার | ০৯ মে ২০২৫ | ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

খাবারে ভেজালের দৌরাত্ম্য বন্ধ করুন নইলে হুমকির মধ্যে পড়বে আগামী প্রজন্মের

|
১২:১২ এ.এম | ০২ জুন ২০২৩


সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে বিশুদ্ধ খাবারের কোন বিকল্প নেই। কিন্তু শরীরকে আমরা কতটুকু বিশুদ্ধ খাবার দিতে পারছি বর্তমানে সেটা বেশ উদ্বেগের বিষয়। খাবারের বিশুদ্ধতার মানদন্ডের প্রশ্ন আজ সবখানেই। মানুষের প্রতিদিনের সকালটা শুরু হচ্ছে ভেজাল আর বিষযুক্ত খাবার দিয়ে। সকালে ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস পানি পান করতে গেলে ভয় লাগে এই পানি বিশুদ্ধ কিনা এইটা ভেবে। পরিবেশবান্ধব, গণমুখী ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এশিয়ার পাবলিক সেক্টরে সর্বোত্তম পানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া ‘ওয়াসা’র শ্লোগান থাকলেও ওয়াসার পানিতে নানারকম দূষিত পদার্থের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। বিভিন্ন ল্যাবের পরীক্ষায় প্রমাণ মিলেছে ওয়াসার পানিতে ব্যাকটেরিয়া, উচ্চমাত্রার অ্যামোনিয়া ও মলের জীবাণু। এগুলো থেকে সহজেই অনুমেয়, ওয়াসার পানি পান কতটা স্বাস্থ্যঝুঁঁকিপূর্ণ। এই ভয়ে অধিকাংশ ঢাকাবাসী বর্তমানে ওয়াসার পানি পান বাদ দিয়েছে। তবে যাদের সামর্থ্য নেই তারা নিরূপায় হয়ে দূষিত ওয়াসার পানি পান করে যাচ্ছে।
প্রতিটি প্রাণির বেঁচে থাকতে খাবারের আগে বাতাস দরকার। যে বাতাস হতে হবে বিশুদ্ধ। আমরা কি শরীরকে সেই বিশুদ্ধ বাতাস আদৌ দিতে পারছি! 
দুধ আদর্শ খাদ্যের আওতায় পড়ে। যে আদর্শ খাদ্যে ভেজাল মেশাতে মেশাতে পুরোপুরি অনাদর্শ না হওয়া পর্যন্ত দুধ বিক্রেতারা হাল ছাড়েনা। তাও যদি পানি মিশিয়ে দুধের পরিমাণ বাড়াতো, সেটা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হতোনা। দুধে নানান সব ক্ষতিকর কেমিক্যাল মিশিয়ে মানুষের খাওয়ার পুরোপুরি অনুপযোগি করে বাজারে বিকোচ্ছে। 
মাছে মেশানো হচ্ছে ফরমালিন। যে ফরমালিন মৃতদেহ পচার হাত থেকে রক্ষা করতে ব্যবহার করা হয়, সেই ফরমালিন মেশানো হচ্ছে মানুষের খাদ্যে। চিংড়ির ওজন বাড়াতে জেলি, সাগু, ভাতের মাড়, ময়দার গাড় দ্রবণসহ নানা ধরণের অপদ্রব্য পুশ করা হচ্ছে। মাংসের বাজারেও একই সমস্যা। মুরগি, গরু, খাসি সকল ক্ষেত্রে অল্প সময়ে অধিক মাংস পাওয়ার আশায় নানা ধরণের বৃদ্ধি হরমোনের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার হচ্ছে। উচ্চ মাত্রার এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের পাশাপাশি খাবারে ব্যবহৃত হচ্ছে ইউরিয়াসহ নানা ধরনের নিষিদ্ধ দ্রব্য, যেগুলো মানুষের গ্রহণ করার ফলে মানুষের শরীরে বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
সবজির বাজারে গেলে চাকচিক্য দেখে মনে হয় সবজিগুলো মাত্রই ক্ষেত থেকে উঠিয়ে বাজারজাত করা হয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে এগুলো খুচরা বাজারে আসতে ২ দিন পর্যন্ত সময় লেগে যায়। কিন্তু এসকল সবজি দেখে বোঝার উপায় নেই ২ দিন আগে এগুলো ক্ষেত থেকে ওঠানো। 
ফল ছোট, বড়, সুস্থ, অসুস্থ্য সকলের পছন্দের একটি খাবার। সহজপাচ্য ও সুস্বাদু ফলে রয়েছে হরেক রকমের ভিটামিন। অত্যাধিক হারে রাসায়নিক পদার্থ মেশানোর ফলে রোগীর পথ্য হিসেবে প্রচলিত এই ফল এখন অনেকটা বিষের সামিল।
শিশুরা তুলনামূলক বেশি পরিমাণে দোকানের খাবার খেয়ে থাকে। বিশেষ করে জুস, চকলেট, ক্যান্ডি, চিপস, চানাচুর শিশুদের খুবই প্রিয়। দোকানের সারি সারি বৈয়ামে সাজিয়ে রাখা এসব খাবারের বাহারি মোড়কের চাকচিক্য দেখে সহজেই শিশু থেকে তার অভিভাবকেরা আকৃষ্ট হয়। বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে প্রায়ই নজরে আসে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে গিয়ে সন্ধান পাওয়া ভেজাল খাদ্য কারখানার কার্যকলাপ। যেগুলো দেখলে শরীরে কাঁটা দেয়। 
নকল আর ভেজাল প্রসাধনীর দৌরাত্ম্যে বাজারে এখন আসল ব্র্যান্ডের প্রসাধনী কোনটা, সেটা মানুষের চেনা দায়। সাবান, শ্যাম্পু, ডিটারজেন্ট, গ্লিসারিন, ফেসওয়াশ, রং ফর্সাকারি ক্রিম, পাউডার, লোশন, জেল, ব্যথানাশক ক্রিমসহ নানা ধরণের নকল পণ্যে এখন বাজার সয়লাব। হুবহু নকল করে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশেই অনুমোদনহীনভাবে ভেজাল প্রসাধনী সামগ্রী তৈরি করে বাজারজাত করছে। 
অধিক মুনাফা লাভের আশায় ব্যবসায়ীদের এমন কোন পন্থা নেই, যেটা তারা অবলম্বন করেনি। আগে জানতাম ব্যবসায়ী হতে গেলে সততা লাগে। সততাই নাকি ব্যবসায়ীদের মূলধন। কিন্তু বর্তমানে এই সততার কোন বালাই ব্যবসায়ীদের ভিতর আছে কিনা সেটা নিয়ে সন্দেহ জাগে। অধিক লাভের জন্য ব্যবসায়ীরা সর্বদা মরিয়া হয়ে থাকে। ওজনে কম দেওয়া, মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রি করা, ধুর্ততা, মানুষ ঠকানো এখন ব্যবসায়ীদের নীতি হয়ে গেছে। এককথায় মানুষের মস্তিষ্কে পচন ধরেছে। খাবার খেয়ে মানুষের বেঁচে থাকাটাই দুস্কর, সেখানে সুস্থতা আশা করাটা অকল্পনীয়। ত্রিশোর্ধ্ব অধিকাংশ মানুষ এখন নানা ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁঁকিতে ভুগছে। হাতে গুণে খুব কমই মানুষ পাওয়া যাবে যে নিয়মিত ওষুধ সেবন করে না। খাবারে ভেজালের দৌরাত্ম্য বন্ধ করা না গেলে আগামী প্রজন্ম চরম হুমকির মধ্যে পড়বে।