খুলনা | শুক্রবার | ০৯ মে ২০২৫ | ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

থানায় মামলা-ইসিতে অভিযোগেও প্রতিকার মিলছে না, অভিযোগ প্রার্থীদের

নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের শঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক |
১২:৫৪ এ.এম | ০৫ জুন ২০২৩


নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রতিপক্ষ প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থক দ্বারা রক্তাক্ত জখম ও নির্বাচনী অফিস ভাঙচুরের অভিযোগ তুলছেন প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীরা। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় বাঁধা দেবারও অভিযোগ উঠছে। এসব অভিযোগে থানায় মামলা ও রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেও সুরাহা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ কাউন্সিলর প্রার্থীদের। গত ১ জুন দিবাগত রাতে কর্মীদের কুপিয়ে জখম ও নির্বাচন অফিস ভাঙচুরের অভিযোগে মামলা করেন ২২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী তাজুল ইসলামের প্রধান সমন্বয়ক আ’লীগ নেতা মোঃ গোলাম কিবরিয়া। আবার, প্রচার-প্রচারণায় বাধা দেবার অভিযোগে রিটার্নিং কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করেও সুরাহা পাচ্ছেন না বলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন ১৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনিসুর রহমান বিশ্বাস।
সূত্রে জানা গেছে, গত ২ জুন খুলনা সদর থানায় সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রথম মামলাটি দায়ের করেন (নং-০২) ২২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী তাজুল ইসলামের প্রধান নির্বাচনী সমন্বয়ক আ’লীগ নেতা গোলাম কিবরিয়া রতন। এজাহারে বাদী অভিযোগ করেন, গত ১ জুন রাত সাড়ে ৮টার দিকে কাউন্সিলর প্রার্থী মোঃ তাজুল ইসলারমের মিষ্টি কুমড়া প্রতীকের প্রচারণাকালে দলীয় নেতা-কর্মীরা ওয়াপদা ভেঁড়িবাধ নতুন বাজার চর ইয়াকুব গলির ভিতর গেলে আসামিরা বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তাদের পথরোধ করে প্রচারে বাধা দেয়। একপর্যায়ে প্রচারের কর্মী কাগজীবাড়ীর মসজিদ গলির আব্দুল মোল­ার ছেলে জনি (৪০), এছাহাক শেখের ছেলে উজ্জ্বল (৪০), ইয়াকুব গলির হায়দার আলীর ছেলে প্রিয়া (২৫) কে বেধড়ক মারপিট করে। এ সময় সন্ত্রাসী শাহ আলমের হাতে থাকা ধারলো চাপাতি দিয়ে জনিকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে মাথায় কোপ দিলে; কোপ ঠেকালে জনির বাম হাতের কনুই রক্তাক্ত জখম হয়। শুধু তাই নয়, একপর্যায়ে রামদা, লাঠি, লোহার রডসহ অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে নতুন বাজার কেডিএ মার্কেটে ২২নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী মোঃ তাজুল ইসলামের নির্বাচনী অফিসে ঢুকে অফিসের ব্যানার ছিঁড়ে চেয়ার, টেবিল ও মাইক ভাঙচুর করে। সন্ত্রাসী হামলায় আহত জনি, উজ্জ্বল, প্রিয়া, নয়ন ও সানিকে খুলনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আসামি করা হয়েছে নতুন বাজার চরের ইয়াকুব গলির মৃত জালাল শেখের ছেলে মোঃ শাহ আলম (৪৫), কাজী ফিসের উলু কাজীর ছেলে শিবলী কাজী (৪২), ইয়াকুব গলির জালাল শেখের ছেলে শাহাদাত শেখ (৩৮), মোঃ আলমগীর (৫২), ওয়াপদা ভেড়িবাঁধ রোডের লুৎফর রহমানের ছেলে মোঃ সুমন (৩২), তরিক গলির মোঃ হারুনের ছেলে মোঃ শাহিন (৪০), কাজী ফিসের টনিস (৪০), নতুনবাজার লঞ্চঘাটের মোঃ শুকুরের ছেলে মোঃ শাওন (২৮), ইয়াকুব গলির রব শেখের ছেলে আলামিন ওরফে রাঙ্গা পাসা (৪০) এবং একই এলাকার মোঃ মান্নানের ছেলে রসুল (৩০)সহ অজ্ঞাতনামা ৪০/৪৫ জনকে। গত ৬ মে দিবাগত রাতে নিজ বাসভবনে অতর্কিত সন্ত্রাসীর ঘটনায় পরদিন ৭ মে খুলনা সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন (নং-৪৫০) কাউন্সিলর প্রার্থী মাহবুব কায়সার।
অন্যদিকে, নির্বাচনী প্রচার কাজে বাধা দেবার অভিযোগ করেছেন ১৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আনিসুর রহমান বিশ্বাস। শিগগরিই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া না হলে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের এবং কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কমের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।
কাউন্সিলর আনিসুর রহমান বিশ্বাস রির্টানিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগে উলে­খ করেন, তার নির্বাচনী ওয়ার্ডের অসংখ্য ভোটার বর্তমান সিটি এলাকার বাইরে সীমান্তবর্তী কেএমপি অধীনস্থ হরিণটানা ও আড়ংঘাটা থানা এলাকায় বসবাস করছেন। এসব ভোটাররা ওই এলাকায় বিভিন্ন বেসরকারি আবাসিক প্রকল্পে বসবাস করেন। বিশেষ করে বিশ্বাস প্রোপার্টিজের একাধিক প্রকল্পে তারা বসবাস করছেন। কিন্তু ওই এলাকায় তার কর্মী-সমর্থকরা ভোটারদের দ্বারে যেতে পারছেন না। বিশ্বাস প্রোপার্টিজের কর্ণধার ও তার লোকজন, আনিস বিশ্বাসের কর্মী ও সমর্থকদের বাধা প্রদান ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে ওই এলাকার ভোটাররা ভোট গ্রহণের দিন ভোটকেন্দ্রে আসতে পারবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। যা ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার শঙ্কা থেকে যাচ্ছে এবং উৎসবমুখর নির্বাচনী পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে- অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তিনি। অভিযোগের অনুলিপি দিয়েছেন বিভাগীয় কমিশনার, কেএমপি কমিশনার, জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে। তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, ‘গতকাল হামিদনগর এলাকা থেকে ভাড়া করা লোকজন দিয়ে বিশাল মিছিল করেছেন; সাথে সাথে দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচন কর্মকর্তাকে টেলিফোনে অবহিত করলেও তিনি ব্যবস্থা নেননি।’
এছাড়া ১২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী রবিউল গাজী উজ্জ্বল ও ১৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আশফাকুর রহমান কাকনসহ কয়েকজন প্রার্থীর সাথে কথা বলে তাদের শঙ্কার কথা জানা গেছে। কর্মী-সমর্থকদের প্রচার-প্রচারণায় বাধা দেয়া হলেও ইমেজ সংকটের শঙ্কায় প্রকাশ করতে চাইছেন সকল ভুক্তভোগী প্রার্থীরা।
এ ব্যাপারে কেসিসি’র রিটার্নিং কর্মকর্তা মোঃ আলাউদ্দিন বলেন, “ইতোমধ্যে কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থীকে জরিমানা করা হয়েছে। আচরণবিধি নজরদারিতে ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতিদিন সিটি কর্পোরেশন এলাকা পরিদর্শন করছেন। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। আইন বা আচরণবিধি দিয়ে নয়, উৎসবমুখর নির্বাচনের জন্যে প্রার্থী, তাদের কর্মী-সমর্থক ও সাধারণ ভোটারদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছেন তিনি।”