খুলনা | রবিবার | ১৩ অক্টোবর ২০২৪ | ২৮ আশ্বিন ১৪৩১

জানাজা শেষে মায়ের কবরের পাশে দাফন আজ : রাষ্ট্রীয় মর্যাদা চান না পরিবার

চলে গেলেন রাজনীতির ‘রহস্য পুরুষ’ সিরাজুল আলম খান

খবর ডেস্ক |
১২:৫৮ এ.এম | ১০ জুন ২০২৩


মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সিরাজুল আলম খান আর নেই। আজ শুক্রবার দুপুর আড়াইটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে তাঁর মৃত্যু হয় (ইন্নালিল­াহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন...আমরা তো আল­াহর এবং আমরা আল­াহর কাছেই ফিরে যাবো)।  সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ সূত্র জানায়, অসুস্থ সিরাজুল আলম খানকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁকে ১ জুন আইসিইউতে রাখা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে বৃহস্পতিবার রাতে তাঁকে লাইফ সাপোর্টে দেওয়া হয়।
রাষ্ট্রপতির শোক :  মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন। শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
জীবনী : সিরাজুল আলম খানের জন্ম নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আলীপুর গ্রামে, ১৯৪১ সালের ৬ জানুয়ারি। তাঁর বাবা খোরশেদ আলম খান ছিলেন স্কুল পরিদর্শক। মা সৈয়দা জাকিয়া খাতুন, গৃহিণী। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়।
১৯৬১ সালে ছাত্রলীগের সহসাধারণ সম্পাদক হন সিরাজুল আলম খান। ১৯৬৩ সালে তিনি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭২ সালে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠিত হয় তাঁর উদ্যোগেই। 
সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুর খবরে হাসপাতালে ছুটে যান জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান (মান্না), জনসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণঅধিকার পরিষদের সদস্যসচিব নুরুল হক (নুর)।
সিরাজুল আলম খানকে নিয়ে লেখক মহিউদ্দিন আহমদের বই ‘প্রতিনায়ক সিরাজুল আলম খান’ প্রকাশ করেছে প্রথমা প্রকাশন। মহিউদ্দিন আহমদ লিখেছেন, ‘ষাটের দশকে সিরাজুল আলম খানের উত্থান ছাত্রনেতা শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের হাত ধরে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছায়াতলে। এ সময় আরও কয়েকজন ছাত্রনেতা মাঠ কাঁপিয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে সিরাজুল আলম খানের ফারাক এক জায়গায় তিনি ধারাবাহিকভাবে লেগে ছিলেন। তিনি নিজেই বলেছেন, শেখ মুজিবের ছয় দফা তাঁর বুকের মধ্যে আগুন জ্বেলে দিয়েছিল। উনসত্তরে মুজিব যখন জেল থেকে ছাড়া পান, দেখলেন তাঁর জন্য জমি তৈরি হয়ে আছে, যার ওপর ভরসা করে বীজ বোনা যায়। জমি তৈরির এই কাজটি করেছেন সিরাজুল আলম খান। শেখ মুজিবকে নেতা মেনেই তিনি এটা করেছেন।’
সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল দেওয়া এক শোকবার্তায় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘স্বাধীনতা আন্দোলনের সূচনালগ্নের অন্যতম সংগঠক সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুতে আমরা শোকাভিভূত। তিনি আমাদের সত্তার মাঝে অমর হয়ে থাকবেন।’ 
জাসদের দপ্তর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন জানিয়েছেন, সিরাজুল আলম খানের মরদেহ বিকেলে হাসপাতাল থেকে মোহাম্মদপুরের আল-মারকাজুলে নেওয়া হয়েছে। সেখানে গোসল শেষে রাতে শমরিতা হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হবে। আগামীকাল শনিবার সকাল ১০টায় বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে জানাজা শেষে নোয়াখালীতে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে পুনরায় জানাজা শেষে বেগমগঞ্জের আলীপুরে মায়ের কবরের পাশে তাঁকে দাফন করা হবে।
রাষ্ট্রীয় মর্যাদা চান না সিরাজুল আলমের পরিবার : চলে গেছেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সিরাজুল আলম খান। মৃত্যুর পর রাজনীতির এ রহস্য পুরুষকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান জানানো হোক-এমনটা চান না তার পরিবার। শুক্রবার সিরাজুল আলম খানের ছোট ভাই ফেরদৌস আলম খান গণমাধ্যমকে এমনটাই জানান। তিনি বলেন, দাদা ভাই সিরাজুল আলম খান সবসময় প্রচারণার বাহিরে থেকেছেন। 
তিনি মৃত্যুর আগে তার কিছু আশার কথা বলে গিয়েছেন। তিনি মৃত্যুর পরে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা চান না। সিরাজুল আলম খান বলে গেছেন তাকে যেন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা না হয়। এমনকি দাফনের সময় তাকে কাফনের বদলে মায়ের কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে দাফন করার ইচ্ছার কথা জানিয়ে গেছেন। তিনি বলেছেন, মায়ের শাড়িটাই আমার কাছে পতাকা। আমি এই পতাকা নিয়েই আমি চলে যেতে চাই। 
সিরাজুল আলম খানের ভাতিজি ব্যারিস্টার ফারাহ আলম খান বলেন, চাচা বলে গেছেন-মৃত্যুর পরে আমাকে কোথাও রাখার দরকার নেই। আমাকে যেনো ডিসপ্লে করা না হয়।
আমার জন্য হাজার হাজার ফুল আসার দরকার নেই। আমি দেশটা স্বাধীন করতে চেয়েছিলাম। আমি স্বাধীন করতে পেরেছি। সেটাই আমার বড় অর্জন। আমি কারো কাছে কিছু চাই না।