খুলনা | শনিবার | ১০ মে ২০২৫ | ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

আসুন! প্যানিক এ্যাটাককে না বলি

প্রকাশ চন্দ্র অধিকারী, প্রফেশনাল সাইকোলোজিস্ট |
০১:০৫ এ.এম | ২৩ জুলাই ২০২৩


আতঙ্কজনিত আক্রমণ কি? : আতঙ্কজনিত আক্রমণের প্রধান লক্ষণ হলো হঠাৎ করে কোন বোধগম্য কারণ ব্যতীতই আতঙ্কগ্রস্ত হওয়া। আতঙ্কজনিত আক্রমণ কোন মানসিক ব্যাধি নয়। আতঙ্কজনিত আক্রমণ সাধারণতঃ উদ্বিগ্নতাজনিত মনোব্যাধি বা অন্য কোন মানসিক ব্যাধি যেমন পিটিএসডি বা ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডার এর সাথে উপস্থিত থাকতে পারে। সাধারণত উদ্বিগ্নতা দ্রুততার সাথে বৃদ্ধি ঘটলে অনেক সময় আতঙ্কজনিত আক্রমণ দেখা দেয়। আতঙ্কজনিত আক্রমণে ব্যক্তির নিকট পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাওয়ার অনুভুতি, ডিপারসনালাইজেশন বা নিজের শরীরের বাইরে থাকার অনুভূতি ও পৃথিবীর বাস্তব অস্তিত্ব নেই তথা ডিরিয়ালাইজেশন এর অনুভূতি তৈরি হয়। একই সাথে ব্যক্তির মধ্যে নিয়ন্ত্রণ হারানোর ভয়, মানসিক ভারসাম্য হারানোর ভয় এবং অনেক সময় মৃত্যু ভয় পেয়ে পর্যন্ত পেয়ে বসে। আক্রমণ বেশ ঘন ঘন হতে পারে-যেমন সপ্তাহে এক বার বা দুইবার হতে পারে। তবে প্রত্যেক বার কয়েক সেকেন্ড পর্যন্ত স্থায়ী হয়। তবে কয়েক ঘন্টা স্থায়ী হয় না।
কখনো কখনো কোন একটি নির্দিষ্ট উদ্দীপক উপস্থিত হলে বা নির্দিষ্ট কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে যেমন-ছাদে উঠলে বা জনতার মঝে গেলে আতঙ্কজনিত আক্রমণ হতে পারে। তবে আতঙ্কের আকস্মিক আক্রমণ কোন কারণ ছাড়াই বিশ্রামরত অবস্থায়ও হতে পারে। যখন কোন কারণ ছাড়াই ব্যক্তি মাঝে মাঝে আতঙ্কগ্রস্ত হয়, তখন আতঙ্কজনীত মনোবিকৃতি বলা হয়। সাধারন্ত: রোগটি বয়ঃসন্ধিকালের প্রথমে দেখা যায়। রোগটির জন্য ব্যক্তি জীবনের কোন পীড়নমূলক ঘটনাকে দায়ী মনে করা হয়।
আতঙ্কজনিত আক্রমণের  লক্ষণ : ডিএসএম-৫ অনুযায়ী, ব্যক্তির মধ্যে আক্রমণের সময় নিম্নলিখিত লক্ষণ সমূহের মধ্যে যে কোন ৪টি বা তার বেশি লক্ষণ সমূহ থাকলে তাকে আতঙ্কজনিত আক্রমণ বলে গণ্য করা হয়- (১) শরীর হতে বেশি পরিমাণ ঘাম নির্গত হওয়া,(২) বুক ধরফর করা, হৃদস্পন্দন হওয়া বা  হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, (৩) বুকে ব্যথা বা অস্বস্থি বোধ করা, (৩) শ^াস-প্রশ^াস ছোট হয়ে আসা, (৪) অসাড়তার অনুভূতি হওয়া, (৫) দম বন্ধ হয়ে আসা, (৬) শরীর কাঁপতে থাকা, (৭) মাথা ঘোরানো, অস্থিরতা বা মূর্ছা যাওয়া, (৮) বমি বমি ভাব বা পেটের ব্যথা জনিত সমস্যা থাকা  (৯) ঠান্ডা বা বেশি গরম অনুভূত হওয়া, (১০) ব্যক্তির মাথা ঘোরানো, (১১) ডিপারসনালাইজেশন বা ডিরিয়ালাইজেশন এর অনুভূতি তৈরি হওয়া, (১২) নিয়ন্ত্রণ হারানোর ভয়, (১২) মৃত্যু ভয় থাকা।
আতঙ্কজনিত আক্রমণের কারণ : (১) নর-এন্ড্রিন্যালীন বা এপিনেফ্রিন-চালিত বা সংশ্লিষ্ট স্নায়ুতন্ত্রের অতিসক্রিয়তা বিশেষ করে পনস্ এর মধ্যে অবস্থিত একটি স্নুায়ুকেন্দ্র যার নাম ’লুকাস সেরুলিয়াস’ এর অধিক উত্তেজনা বা সক্রিয়তাকে আতঙ্কজনিত আক্রমণ জন্য দায়ী করা হয়। তবে এ বিষয়ে বিতর্ক বিদ্যমান। (২) কোন কোন স্নায়ুতত্ত¡বিদ মনে করেন-অতিরিক্ত শ্বাস গ্রহণই আতঙ্কজনিত আক্রমণ জন্য দায়ী। অনেক সময় বাতাসে স্বাভাবিকের তুলনায় কার্বন-ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বেশি থাকলে শ্বাস-প্রশ্বাসের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। এতে করে কখনো কখনো আতঙ্ক সৃষ্টি হতে পারে। (৩) কোন কোন ব্যক্তি নিজেদের শারীরিক অনুভূতি এবং উত্তেজনা সম্বন্ধে ভয় পায়। কোন কারণে তাদের শরীরের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে আতঙ্কজনিত আক্রমণ দেখা দিতে পারে। (৪) কোন কোন ব্যক্তির ভিতর অনেক সময় স্বাভাবিক ঘটনাকে বড় করে দেখার প্রবনতা বিদ্যমান। অনেক সময় তারা মনে করে পরিস্থিতির উপর তাদের কোন নিয়ন্ত্রণ নাই। এরূপ ভাবনা ঐ ব্যক্তির উপর আরো বেশি পরিমান ক্রিয়া করে এবং ব্যক্তি আতঙ্কজনিত আক্রমণে ভোগে। (৫) কোন কোন ব্যক্তি কোন বিশেষ সামাজিক পরিস্থিতিতে উপযুক্ত আচরণ করতে শিখে থাকে না, ফলে বিশেষ পরিস্থিতিতে তারা অস্বস্থি বোধ করে এবং আতঙ্কজনিত আক্রমণে ভোগে।
আতঙ্কজনিত আক্রমণ মোকাবেলায় করণীয় : 
(১) মোকাবেলা করতে শেখানো : কিছু কিছু ভীতির চিকিৎসায় যেমন : জনতার বা অন্যান্য সামাজিক পরিস্থিতির চিকিৎসায় ব্যক্তিকে উক্ত সামাজিক পরিস্থিতির সম্মুখীন করে তাদের সে সব পরিস্থিতিকে মোকাবেলা করতে শেখানো হয়। 
(২) ব্যক্তির সামাজিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করা : ব্যক্তির যাতে সক্ষমতাবোধ অক্ষুণœ থাকে-এসব কৌশলের মধ্যে আছে-(ক) আত্ম-প্রতিষ্ঠামূলক প্রশিক্ষণ (খ) ভাষাগত ও মৌখিক নির্দেশনা (গ) কারণ শিক্ষণের মাধ্যমে আচরণ শিক্ষণ (ঘ) রিহার্সেলের মাধ্যমে ব্যক্তির সামনে তার করণীয় ফুটিয়ে তোলা হয়। 
(৩) শ্লথন অভ্যাস করানো : আতঙ্কগ্রস্ত রোগীদের তাদের শারীরিক উত্তেজনা সম্পর্কে  ভীতগ্রস্ত হতে দেখা যায়, সেজন্য তাদের শ্লথন অভ্যাস করালে ভাল ফল পাওয়া যায়। 
(৪) জ্ঞানীয় সংগঠন পরিস্থিতির পুনঃমূল্যায়ন : জ্ঞানীয় সংগঠনের পরিস্থিতিকে আতঙ্কগ্রস্ত ব্যক্তি ভুল ভাবে মূল্যায়ন করে এবং ঋণাত্মক ঘটনা ঘটার সম্ভবনা বাড়িয়ে দেখে। সে জন্য আতঙ্কগ্রস্ত ব্যক্তিকে এসব পরিস্থিতিকে পুনঃমূল্যায়ন করতে সাহায্য করা উচিত। এতে তার আতঙ্ক কমে যাবে। 
(৫) পেয়ার এসোসিয়েটেড ট্যাক্স বা বডি ফোকাস ট্যাক্স: এ পদ্ধতি চর্চার মাধ্যমে আতঙ্কজনীত আক্রমণ দূর করা যায়। 
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, মনোবিজ্ঞান বিভাগ, সরকারি সুন্দরবন আদর্শ কলেজ, খুলনা, ফ্রি পরামর্শ-০১৭১৪৬১৬০০১।