খুলনা | বৃহস্পতিবার | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১

ক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতা-কর্মী, খুলনা-৫

ইউপি নির্বাচনে নৌকার ভরাডুবির নেপথ্যে দলীয় কোন্দল

আশরাফুল ইসলাম নূর |
০১:০৬ এ.এম | ২৭ অগাস্ট ২০২৩


গেল ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে খুলনার সর্ববৃহৎ উপজেলা ডুমুরিয়ার ১৪টির মধ্যে ১২টি ইউনিয়নেই আ’লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা পরাজিত হন। এ পরাজয়ের নেপথ্যে দলীয় কোন্দলকে দায়ী করছেন তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। দলীয় প্রার্থীদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়ায় নৌকার প্রার্থীদের পরাজয় ঘটে বলে গত ২২ আগস্ট সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে দুষলেন আ’লীগ নেতারাই। আসনটির সম্ভাব্য প্রার্থী জেলা আইনজীবী সমিতির ও খুলনা সদর থানার আ’লীগের সভাপতি এড. সাইফুল ইসলাম বিস্তর অভিযোগ তুলে ধরেন। এ সময় উপজেলা আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সরদার আলমগীর হোসেনসহ স্থানীয় সাবেক-বর্তমান জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। শোক দিবসের কর্মসূচিতে গরু মাংসের খেচুড়ি খাওয়ার গুজব সৃষ্টি করে স¤প্রদায়িক স¤প্রীতি বিনষ্টের অভিযোগও উঠেছে।
খুলনা-৫ আসনে আ’লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী এড. সাইফুল ইসলাম বলেন, গত ১৬ আগস্ট ডুমুরিয়া সদরে জাতীয় শোক দিবসের শোকসভা ও খাবার বিতরণের কর্মসূচি পালন করেছিলাম। সেখানে মুরগীর মাংসের আড়াই হাজার প্যাকেট খিচুড়ি বিতরণ করেছি। পরদিন প্রিয়াংকা সাহা নামের ফেসবুক ব্যবহারকারী গরুর খেচুড়ি রান্না করে হিন্দু স¤প্রদায়ের মানুষের মাঝে বিতরণ এবং কাউকে কাউকে জোরপূর্বক গরুর মাংস খাওয়ানো হয়েছে বলে অপপ্রচার চালায়। এতে সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা ও তার রাজনৈতিক ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করা হয়েছে বলে দোষারোপ করেন তিনি। এছাড়া ডুমুরিয়া এলাকায় তার প্যানা পোস্টার ছিঁড়ছে দুর্বৃত্তরা। এসব ঘটনায় কয়েকটি জিডি করেছেন, প্রস্তুতি নিচ্ছেন মামলারও।
তিনি আরও বলেন, খুলনা-৫ আসনে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়ায় দলীয় সকল প্রার্থী অর্থাৎ নৌকার প্রার্থীরা পরাজয় বরণ করেন। এই পরাজয়ের ফলে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের ভিতরে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে খুলনা-৫ আসনে প্রচার-প্রচারণা প্রকাশ্য রূপ পাওয়ায় ডুমুরিয়া ও ফুলতলার রাজনৈতিক ময়দান উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের একাংশের মধ্যেও রয়েছে চাপা ক্ষোভ। সে ক্ষোভ দ্ব›দ্ব-কোন্দলের দিকে মোড় নিচ্ছে বলে দাবি আ’লীগ কর্মীদের একাংশের। 
দলীয় সূত্রমতে, খুলনা-৫ আসনে সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী সালাহউদ্দিন ইউসুফের মৃত্যুর পর উপ-নির্বাচনে অংশ নিয়ে নারায়ণ চন্দ্র চন্দ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে তিনি জামায়াতে ইসলামীর অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারের কাছে পরাজিত হন। ২০০৮ সালের ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনেও বিনাপ্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচিত হন তিনি। পরে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন তিনি। 
খুলনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দ জানান, জনগণ তাকে একাধিকবার নির্বাচিত করে জাতীয় সংসদে পাঠিয়েছে। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে তিনি নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। মানুষের ভালোবাসায় আবারও তিনি নির্বাচিত হয়ে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে চান। ইতোমধ্যে দলটির শীর্ষ পর্যায় থেকে তাকে গ্রীণ সিগনাল দিয়ে মাঠপর্যায়ে সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের প্রচার-প্রসারের নির্দেশনা দিয়েছেন বলে তার ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে।
খুলনা-৫ আসনে আ’লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন, সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ও ডুমুরিয়া উপজেলা আ’লীগের সভাপতি নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এমপি, আ’লীগ নেতা ড. এম মাহাবুব উল ইসলাম, জেলা আ’লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অজয় সরকার, ফুলতলা উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগ সভাপতি মোঃ আকরাম হোসেন, খুলনা সদর থানা আ’লীগের সভাপতি ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এড. সাইফুল ইসলাম ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও দৈনিক প্রবর্তন সম্পাদক মোস্তফা সারোয়ার। 
(আগামীকাল ক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতা-কর্মী, খুলনা-৪ প্রকাশিত হবে)।