খুলনা | শুক্রবার | ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ | ১ ফাল্গুন ১৪৩১

প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি : সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে

|
১২:০৪ এ.এম | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩


সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ক্রমেই বাড়ছে। পৃথিবীজুড়েই উপকূলীয় নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যাচ্ছে। অনেক দ্বীপদেশ অস্তিত্ব হারাচ্ছে। বাংলাদেশেও বিস্তীর্ণ উপকূলীয় অঞ্চল তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে, পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে উপকূলের প্রায় দুই কোটি মানুষের জীবন হুমকিতে পড়বে। ঘরবাড়ি ছেড়ে উদ্বাস্তুজীবন বেছে নিতে বাধ্য হবে। উপকূলীয় জনজীবন রক্ষায় সরকার নানা ধরণের প্রকল্প গ্রহণ করছে। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নের হাল, কাজের মান, বাস্তবায়নের ধীরগতি অত্যন্ত হতাশাজনক।
গণমাধ্যমের প্রকাশিত একাধিক প্রতিবেদনে এমনই তথ্য উঠে এসেছে। উপকূলীয় জেলাগুলোতে ২০২২-২৩ অর্থবছরে অনুমোদন পাওয়া ১০টি প্রকল্পের মধ্যে সাতটিরই কার্যত কোনো অগ্রগতি নেই। এগুলো বাস্তবায়ন করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। অন্যদিকে বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলোর স্থায়িত্ব নিয়েও দেখা দিয়েছে সংশয়।
চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে ২০১৫ সালে গৃহীত স্থায়ী ভেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ কয়েক দফা সময় বাড়ানোর পর ২০২২ সালে সম্পন্ন হয়। একইভাবে কয়েক দফা বাড়ানোর পর এতে মোট ব্যয় হয় ২৯৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এক বছর যেতে না যেতেই ভেড়িবাঁধটিতে ভাঙন শুরু হয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বাঁধে অত্যন্ত নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। ষাটের দশকে নির্মিত উপকূলীয় ভেড়িবাঁধ অনেক আগেই তার উপযোগিতা হারিয়েছে।
তদুপরি, বিভিন্ন সময় ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ¡াসের আঘাতে অনেক স্থানেই এগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৯৯২ সালে সরকারি উদ্যোগে গঠিত একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি উপকূল রক্ষায় একটি মহাপরিকল্পনা তৈরি করেছিল। এর মধ্যেও ছিল বিদ্যমান ভেড়িবাঁধ আরো উঁচু এবং আরো মজবুত করে গড়ে তোলার সুপারিশ। দুঃখজনক হলেও সত্যি, তিন দশকেও আমরা সেভাবে পুরো উপকূলে ভেড়িবাঁধ গড়ে তুলতে পারিনি। এমনকি ঘূর্ণিঝড় সিডর ও আইলায় বাঁধের যে ক্ষতি হয়েছিল, তা-ও পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারিনি। প্রকাশিত খবরে দেখা যায়, সিডর আঘাত হানার ১৪ বছর পর বরগুনায় টেকসই ভেড়িবাঁধ নির্মাণে ৭৫১ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ২০২২ সালের ৪ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়। আগামী বছরের ডিসেম্বরে এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ এখনো শুরুই করতে পারেনি পাউবো। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের দেওয়া প্রতিবেদনেই উঠে এসেছে এমন তথ্য। ‘বিষখালী ও পায়রা নদীর ভাঙন হতে প্রতিরক্ষা’ প্রকল্প ২০২২ সালের ২২ ফেব্র“য়ারি একনেক সভায় অনুমোদন পায়। প্রায় ৮২৬ কোটি ৫০ লাখ টাকার ওই প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি মাত্র ০.৬০ শতাংশ। প্রায় একই অবস্থা অন্যান্য প্রকল্পেও।
শুধু প্রকল্প গ্রহণ করলেই বিপর্যস্ত উপকূলের বাসিন্দারা নিরাপদ হবে না, প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি, মান ও স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে বাঁশখালীর মতোই অবস্থা হবে সমগ্র উপকূলে। প্রকল্প বাস্তবায়নে তদারকি বাড়ানোর পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।