খুলনা | শুক্রবার | ০৯ মে ২০২৫ | ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

ডেঙ্গু : আর কত মৃত্যু দেখতে হবে আমাদের?

|
১২:০২ এ.এম | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩


অচেনা কোনো মানুষের মৃত্যুর খবরে সাধারণত আমাদের মনে বড় ধরণের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় না। কিন্তু গত কয়েক মাসে ডেঙ্গুজনিত বহু মৃত্যুর খবর আমরা পেয়েছি, যেসব খবরে আমাদের মনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। স¤প্রতি এক দম্পতির সন্তান রাউফ-রাইদা নামের দুই শিশুর মৃত্যুতে কেবল যে তাদের বাবা-মা-নিকটাত্মীয় দিশেহারা হয়েছেন তাই নয়, এ দুই শিশুর অকাল মৃত্যু যে দেশের বহু মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে তাতে কোনো সন্দেহ নই। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে কয়েকদিনের ব্যবধানে না ফেরার দেশে চলে যায় রাউফ (৯) ও রাইদা (৬)। শিশু দু’টির স্মৃতি তাদের বাবা-মাকে প্রতিমুহূর্তে কাঁদাচ্ছে। সন্তান হারানোর কষ্ট ভুলতে বাসা বদল করেছেন তাদের বাবা-মা। গত কয়েক মাসে ডেঙ্গুজনিত এমন বহু শোকের ঘটনা ঘটেছে, যা বহুদিন আমাদের মনে থাকবে।
বস্তুত এডিস মশার ভয়াল থাবায় জনজীবন বিপন্ন। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ডেঙ্গুর কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। চোখের সামনে চিরতরে চলে যাচ্ছে তরতাজা প্রাণ। মা-বাবার সামনেই হারিয়ে যাচ্ছে তাদের প্রিয় সন্তন। প্রিয়জনকে হারিয়ে তাদের স্বজনরা দিশেহারা। প্রশ্ন হলো, আর কত মূল্যবান প্রাণ হারানোর পর দেশবাসী সচেতন হবে? সরকারি হিসেবে চলতি বছরের নয় মাসে একদিন থেকে ২৫ বছর বয়সি ৮১ হাজার ৪১৩ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে এবং ২২১ জন মারা গেছে। তিলে তিলে গড়ে তোলা সন্তানদের এমন মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না অভিভাবকরা। একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ঝুলছে তিন অবুঝ শিক্ষার্থীর শোকের ছবি। তাদের তিনজনের জীবন কেড়ে নিয়েছে ডেঙ্গু। কালো ব্যানারে মোড়ানো তিন শিশুর ছবি দেখে অনেকেই নীরবে চোখ মোছেন। অন্য শিক্ষার্থীরাও দাঁড়িয়ে কাঁদেন। তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা কারও জানা নেই। ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক শিক্ষকের মন্তব্য-আমাদের এ সমাজ এসব অবুঝ শিশুর জীবন রক্ষা করতে পারছে না। বর্তমানে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই এমন শোকের ব্যানার ঝুলছে।
মশক নিধনে কেন সফল হওয়া যাচ্ছে না, তা নিয়ে বহু আলোচনা চলছে। এক কর্তৃপক্ষ অন্য কর্তৃপক্ষকে মনে করিয়ে দিচ্ছে, মশক নিধনে কার কতখানি দায়। কিন্তু এরই মধ্যে একের পর এক মূল্যবান জীবনপ্রদীপ নিভে যাচ্ছে। এসব তথ্য শুনে আমাদের অসহায়বোধ করা ছাড়া আর কী-ইবা করার আছে! জানা যায়, চলতি বছর ডেঙ্গুতে একদিন থেকে ৫ বছর বয়সি শিশু আক্রান্ত হয়েছেন ৯ হাজার ৯৩৪ জন এবং মারা গেছে ৩২ জন। ৬ থেকে ১০ বছর বয়সি শিশু আক্রান্ত হয়েছে ৯ হাজার ৯৩৭ জন এবং মারা গেছে ৪১ জন।
জানা যায়, এ প্রজাতির মশা প্রতিক‚ল জলবায়ুর সঙ্গে টিকে থাকার সক্ষমতাও অর্জন করতে শুরু করছে। এডিসের উৎপাত শুধু বর্ষাকালে নয়, বছরজুড়েই থাকবে। কাজেই ডেঙ্গু থেকে সুরক্ষা পেতে বছরব্যাপী মশক নিধন ও অন্যান্য কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। যেভাবেই হোক, ডেঙ্গুর উৎস পুরোপুরি নির্মূল করতে হবে।