খুলনা | শনিবার | ১০ মে ২০২৫ | ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

বিকালে সিসিইউতে, রাতে কেবিনে খালেদা জিয়া

খবর প্রতিবেদন |
০১:০৭ এ.এম | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩


চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) থেকে কেবিনে নেওয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, শুক্রবার রাত ৮টার দিকে তাঁকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে বিকেল ৫টা ১০ মিনিটে তাঁকে হাসপাতালের সাত তলা থেকে চারতলায় সিসিইউতে নেওয়া হয়।
গত ৯ আগস্ট রাতে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডাঃ শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড তাঁকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছে।
এর আগে শুক্রবার বিকেলে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন গণমাধ্যমকে জানান খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় কেবিন থেকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়। তিনি বর্তমানে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।  
জাহিদ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক কিছু জটিলতা বেড়ে যাওয়ায় মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে বিকেলে তাঁকে কেবিন থেকে সিসিইউতে নেওয়া হয়।
এর আগে গত ২২ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হাওয়ায় মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে বেগম জিয়াকে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়েছিল। পরে অবস্থার উন্নতি হলে তাকে ফের কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।
এক মাসেরও বেশি সময় ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন খালেদা জিয়া। গত ৯ আগস্ট রাতে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেই থেকে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এখন তার লিভার, হৃদযন্ত্র ও কিডনির সমস্যা জটিল অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
এর আগে ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর খালেদা জিয়ার লিভার সিরোসিসে আক্রান্তের বিষয়টি সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিল তার মেডিকেল বোর্ড। তখন থেকে প্রায় দুই বছরে পরিপাকতন্ত্রে কয়েকবার রক্তক্ষরণ হয়েছে তার।
বিএনপি নেত্রীর মেডিক্যাল বোর্ডের একজন জ্যেষ্ঠ সদস্য জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে অনেক আগেই খালেদা জিয়ার পরিপাকতন্ত্র সংকুচিত হয়ে গেছে এবং এর কার্যক্ষমতা প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে তার লিভারে জটিলতা বেড়েছে ও রক্তক্ষরণের ঝুঁকির মধ্যে থাকতে হচ্ছে।
অন্যদিকে, ২৫ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়াকে স্থায়ীভাবে মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার অনুমতি চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বৃহস্পতিবার বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।
খালেদা জিয়া পরিবারের একটি সূত্র শুক্রবার জানিয়েছে, তাঁর বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা। তাঁকে বিদেশে নিতে চেয়ে করা আবেদনে ইতিবাচক সাড়া মিলতে পারেÑএমনটাই আশা পরিবারের সদস্যদের। খালেদা জিয়ার পরিবারের ওই সূত্র আরও জানিয়েছে, সরকার যদি অনুমতি দেয়, তাহলে দ্রুত যাতে খালেদা জিয়াকে বাইরে নেওয়া যায়, সে জন্যই এ প্রস্তুতি। খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও সিঙ্গাপুর এই চার দেশের হাসপাতালে খোঁজ নিচ্ছেন।
বিএনপি নেত্রীর মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তাঁর লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে। তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সংবাদ মাধ্যমকে জানান, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তাঁর স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। এ কারণে তাঁকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে এবং কখনো কখনো তাঁকে সিসিইউতে নিতে হচ্ছে।
দুর্নীতির দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্র“য়ারি কারাবন্দি হন। দুই বছরের বেশি সময় কারাবন্দি ছিলেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকার নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছিল। এরপর ছয় মাস পরপর তাঁর সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছে সরকার। শেষ গত মার্চ মাসে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ১২ সেপ্টেম্বর বিএনপি’র চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।