খুলনা | শুক্রবার | ০৯ মে ২০২৫ | ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

প্রবীণ ভাতা নিয়ে ভাবতে হবে

|
১২:১২ এ.এম | ০৩ অক্টোবর ২০২৩


প্রবীণ জনসংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবীণ নীতিমালা মতে, ৬০ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সের ব্যক্তিকে প্রবীণ হিসেবে গণ্য করা হয়। গৃহগণনা ও জনশুমারির তথ্য মতে, দেশে বর্তমানে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর মানুষের সংখ্যা এক কোটি ৯৮ লাখ। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু হচ্ছে ৭০.০৬ বছর। বর্তমানে দেশের মোট জনসংখ্যার তুলনায় এই হার খুব বেশি না হলেও তা এখন ১১.৬৬ শতাংশ। জাতিসংঘের জনসংখ্যা উন্নয়ন তহবিলের প্রাক্কলন অনুযায়ী ২০২৫-২৬ সালে প্রবীণের সংখ্যা দাঁড়াবে দুই কোটিতে। ২০৫০ সালে ওই সংখ্যা দাঁড়াবে সাড়ে চার কোটিতে, যা তখনকার জনসংখ্যার ২১ শতাংশ হবে। সাধারণ বিবেচনায় বয়োবৃদ্ধির একটা পর্যায় হচ্ছে বার্ধক্য। মানুষ তখন কর্মক্ষম থাকে না। এমনিতেই বয়োজ্যেষ্ঠদের বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার ঝুঁঁকি বাড়ছে। বার্ধক্যের কারণে অনেকে অসহায় হয়ে পড়েন। উপার্জন কমে যায়। অর্থনৈতিকভাবে অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়তে হয়।
বাংলাদেশের সংবিধানে দেশের সব অসুবিধাগ্রস্ত শ্রেণিকে সহায়তা প্রদানের নিশ্চয়তার বিধান রয়েছে। সংবিধানের ১৫ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো সবার জন্য অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ জীবনধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা করা। কর্মের অধিকার অর্থাৎ কর্মের গুণ ও পরিমাণ বিবেচনা করে যুক্তিসংগত মজুরির বিনিময়ে কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তার অধিকার রয়েছে সবার। যুক্তিসংগত বিশ্রাম, বিনোদন ও অবকাশের অধিকার এবং সামাজিক নিরাপত্তার অধিকারও রয়েছে। এরই আলোকে প্রবীণদের মর্যাদাপূর্ণ, দারিদ্র্যমুক্ত, কর্মময়, সুস্বাস্থ্য ও নিরাপদ সামাজিক জীবন নিশ্চিত করতে ‘জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা ২০১৩’ প্রণয়ন করা হয়। ২০টি অনুচ্ছেদ সংবলিত এই নীতিমালায় দেশের প্রবীণ ব্যক্তিদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে বলা হয়েছে। জাতীয় প্রবীণ নীতিমালার ১৭ নম্বর অনুচ্ছেদে প্রবীণ ব্যক্তিদের জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করতে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে সরকার উৎসাহিত করবে, এমন কথা উলে­খ রয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে এই ভাতা ৫০০ থেকে বাড়িয়ে ৬০০ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। কিন্তু অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বর্তমানের উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রেক্ষাপটে প্রবীণদের এই ভাতার পরিমাণ অত্যন্ত অপ্রতুল। প্রবীণদের প্রধান সমস্যা স্বাস্থ্যজনিত। বাংলাদেশে প্রবীণদের চিকিৎসায় সুনির্দিষ্ট বিশেষ কোনো ব্যবস্থা নেই। যেসব হাসপাতালে সবার চিকিৎসা হয়, সেখানেই তাঁদের চিকিৎসা করা হয়। উন্নত দেশগুলোতে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বিশেষ বরাদ্দ রয়েছে। হাসপাতালে প্রবীণদের জন্য আলাদা বহির্বিভাগ আছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আমাদের দেশেও প্রবীণদের চিকিৎসার জন্য একটি আলাদা ব্যবস্থা থাকা দরকার।
এই সমাজকে প্রবীণবান্ধব করে গড়ে তুলতে হবে। কর্মসংস্থানের প্রয়োজনে, বসবাসের স্থান সংকুলানের অভাবে একান্নবর্তী পরিবার ভাঙতে শুরু করেছে অনেক আগেই। বিভিন্ন কারণে প্রবীণরা আজ অবহেলার শিকার। নিজেদের তৈরি ঘরেই অনেকের ঠাঁই হচ্ছে না। অনেকেরই আশ্রয় এখন বৃদ্ধাশ্রম। ব্যক্তিগত উদ্যোগে কেউ কেউ বৃদ্ধাশ্রম গড়ছে। সরকারিভাবে ব্যাপক ভিত্তিতে বৃদ্ধাশ্রম প্রতিষ্ঠা করতে হবে। প্রবীণদের জন্য দেশে নীতিমালা আছে। সেই নীতিমালা সম্পূর্ণভাবে কাজে লাগাতে হবে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চাওয়া, প্রবীণদের বিশেষ সুবিধা দিতে তাঁদের জন্য সিনিয়র সিটিজেন এ্যাক্ট করা হোক।