খুলনা | শনিবার | ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ | ৭ পৌষ ১৪৩১

বিশ্ব শিক্ষক দিবস

|
০১:১৮ এ.এম | ০৫ অক্টোবর ২০২৩


বিশ্ব শিক্ষক দিবস শিক্ষা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে পালন করা হয়। বিশ্বের সব শিক্ষকের অবদানকে স্মরণ করার জন্য জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থা ইউনেস্কোর ডাকে এ দিবসটি পালন হয়ে থাকে। ১৯৯৪ সাল থেকে প্রতিবছর ৫ অক্টোবর বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে আসছে বিশ্ব শিক্ষক দিবস।
আজকের শিক্ষকেরা আগামীর বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। শিক্ষকদের মানোন্নয়ন ছাড়া শিক্ষা ব্যবস্থার মানোন্নয়ন হবে না। ফলে শিক্ষকের দক্ষতা উন্নয়ন, স্বাধীনতা ও সম্মানের বিষয়ে যতœশীল হওয়ার মাধ্যমেই আগামীর স্বনির্ভর ও উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা সম্ভব। “শিক্ষকের হাত ধরে শিক্ষানীতির পরিবর্তন আসবে’’।
আসলেই শিক্ষকদের কাজই হচ্ছে ভবিষ্যতের বিনির্মাণের জন্য কর্মী তৈরি করা। এটি কোনো সাধারণ কাজ নয়। এটি নিঃসন্দেহে একটা সৃজনশীল কাজ। কারণ, শিক্ষক ইট-পাথরের মতো কোনো জিনিস নিয়ে কাজ করেন না। তিনি কাজ করেন রক্ত-মাংস দিয়ে গড়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে, যাদের মধ্যে আছে অসাধারণ একটা মন। আর এই মনের ওপর ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করেই শিক্ষার্থীকে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করতে হয়। ভবিষ্যৎ মানেই স্বপ্নের হাতছানি। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের কাছে তো বটেই। আর এই স্বপ্নের বাস্তবায়ন মানেই তো হাজারো সংকটের মুখোমুখি দাঁড়ানো। শুধু দাঁড়ালেই তো চলবে না। সংকটকে মোকাবিলা করে স্বপ্নময় সোনালি দুয়ার খুলতে হবে। আর এই কাজের উপযোগি করে গড়ে তোলার মতো চ্যালেঞ্জিং কাজটাই করে থাকেন শিক্ষক। এখানেই অন্যসব পেশার সঙ্গে শিক্ষকতার পার্থক্য।
‘‘ শিক্ষা যদি জাতির মেরুদন্ড হয়ে থাকে, 
তবে শিক্ষকেরা হলেন শিক্ষার মেরুদন্ড।’’
শিক্ষকেরা সমস্যায় থাকলে শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করা কঠিন হবে। তাই শুধু শিক্ষকগণের নয়, শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করার জন্য শিক্ষা ক্ষেত্রের সব ধরণের সমস্যা ও অসামঞ্জস্যতা দূর করে একটা পরিকল্পিত শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।
আরেকটি কথা সত্য যে, সুবিধাবঞ্চিত ও পিছিয়ে পড়া শিক্ষককূল হলো বেসরকারি স্তরে যারা কর্মরত। এখানে উলে­খ্য, বাংলাদেশের মোট শিক্ষাদান, সঞ্চালন ও পরিচালনের শতকরা ৯৮ ভাগ বেসরকারি অথচ সব ধরণের অবহেলার শিকার এই স্তরের শিক্ষক-কর্মচারীরা। বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে তুলনা করলে এটা ব্যাপক বৈষম্য। তাই বিশ্ব শিক্ষক দিবস নিয়ে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট অনেকটা ভিন্ন।
এ তো গেল সমস্যার কথা। সমস্যা সব দেশেই কমবেশি আছে। আমাদের সমস্যা হয়তো কিছু বেশি। তবে এর মধ্যেও আমাদের শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে হবে। আমাদের অধিকারের কথা যেমন ভাবতে হবে, তেমনি শিক্ষার্থীদের অধিকার যাতে কোনোভাবেই ক্ষুণœ না হয়, সেদিকটার প্রতিও লক্ষ্য রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, শিক্ষার্থীরা আমাদের সন্তানের মতো। শত প্রতিকূলতা, সংকট, আর বাঁধা-বিপত্তির মধ্যেও তাদেরকে এগিয়ে নিতে হবে। তাদের পাশে থেকে স্বপ্নের ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ বিনির্মাণের উদ্দেশ্যে তাদের স্বপ্নবাজ করে গড়ে তুলতে হবে। আমাদের বঞ্চনার প্রভাব তাদের ওপর কোনোভাবেই যাতে না পড়ে, তা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে লক্ষ রাখতে হবে। একজন সত্যিকারের শিক্ষকের বাঁধা-বিপত্তিকে অতিক্রম করার লড়াকু মানসিকতা থাকতে হবে। আর এই মানসিকতাটা শিক্ষার্থীদের মধ্যেও ছড়িয়ে দিতে হবে। তবেই তারা জীবনসংগ্রামে জয়ী হওয়ার জন্য লড়াই করার যোগ্যতা অর্জন করতে পারবে।
একজন সফল মানুষের পেছনে শিক্ষকের যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে, তা নতুন করে বলার কিছু নেই।
আমরা আমাদের বাবা মায়ের কাছ থেকে জীবন পাই কিন্তু সেই জীবন কিভাবে কাটাতে হয় তা শিক্ষকের চেয়ে ভালো কেউ বলতে পারে না।
“ওস্তাদে প্রণাম করো পিতা হন্তে বাড়।
দোসর-জনম দিলা তিঁহ সে আহ্মার।’’
পিতা-মাতার পরে আমাদের সাফল্যের পুরো কৃতিত্ব আমাদের শিক্ষকদের। শিক্ষক-শিক্ষিকারা হলেন আমাদের জীবনের প্রদীপ। যারা নিজেদের পুঁড়িয়ে আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে থাকা অজ্ঞানতার অন্ধকার দূর করে জ্ঞানের আলোয় ভরিয়ে তোলেন। 
“গুরু ব্রহ্মা, গুরু বিষ্ণু, গুরু দেব মহেশ্বর
গুরু সাক্ষাৎ পরোমব্রহ্ম
তস্মৈ শ্রী গুরুবে নমঃ”
শিক্ষকরা হলেন যুব সমাজের মূল স্তম্ভ। ছাত্রদের চরিত্র গঠনে তাদের ভূমিকা অপরিসীম। 
শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবক সম্পর্ক সুদৃঢ় করা: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অন্যতম উপাদান হলো শিক্ষার্থী। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ হলো শিক্ষক। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সার্বিক উন্নয়নের জন্য অভিভাবকের গুরুত্ব অপরিসীম। ফলে শিক্ষা ব্যবস্থার সার্বিক সফলতা পেতে হলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের পারস্পরিক সম্পর্ক সুদৃঢ় হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই।
বিশ্ব শিক্ষক দিবস ২০২৩ প্রতিপাদ্য হচ্ছে “The transformation of education begins with teacher”  অর্থাৎ “শিক্ষার পরিবর্তন শিক্ষক দিয়ে শুরু হয়”। আজকের এই বিশ্ব শিক্ষক দিবসে সকল শিক্ষকদের জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।
রাজু আহমদ (প্রধান শিক্ষক)
মহাকাল মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়/চেঙ্গুটিয়া, অভয়নগর, যশোর।