খুলনা | শুক্রবার | ০৯ মে ২০২৫ | ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

রাত ৩টায় গ্রেফতার, চার দিনের রিমান্ডে

‘আমি চোর না ডাকাত’, নির্যাতনের বর্ণনায় আদালতে কাঁদলেন এ্যানি

খবর প্রতিবেদন |
০১:৪২ এ.এম | ১২ অক্টোবর ২০২৩


বাসার দরজা ভেঙে গ্রেফতারের পর থানায় ফেলে বেধড়ক পেটানো হয়েছে বলে আদালতের কাছে অভিযোগ করেছেন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী (এ্যানী)। ধানমন্ডি থানার নাশকতার একটি মামলায় বুধবার রিমান্ড শুনানি চলাকালে তিনি ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে এই অভিযোগ করেন। নির্যাতনের কথা বলতে গিয়ে আদালতের সামনে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন শহীদ উদ্দিন চৌধুরী। তিনি কেঁদেও ফেলেন।
মধ্যরাতে দরজা ভেঙে গ্রেফতারের বিষয় শহীদ উদ্দিন চৌধুরী আদালতকে বলেন, ‘আমি দুবার সংসদ সদস্য ছিলাম। ছাত্ররাজনীতি করে আমি আজ এই পর্যায়ে। গতকালও (মঙ্গলবার) তো আমি জাতীয় প্রেসক্লাবে প্রোগ্রাম করেছি। সেখান থেকেও তো আমাকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারতো। কিন্তু সেটি না করে পুলিশ কেন মধ্যরাতে আমার বাসায় অভিযান চালাল?’
তাঁর বাসায় ভাঙচুর করা হয়েছে অভিযোগ করে বিএনপির এই নেতা আদালতকে বলেন, ‘বাসায় আমার বাচ্চা ছিল। দরজা ভেঙে আমাকে টেনেহিঁচড়ে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমি তো চোরও না, ডাকাতও না। থানায় নিয়ে যাওয়ার পর আমাকে পুলিশ বেধড়ক পিটিয়েছে। আমি এর বিচার চাই।’
এই কথা বলার পর শহীদ উদ্দীন চৌধুরী আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন। তিনি কাঁদতে থাকেন। এ পর্যায়ে শহীদ উদ্দিন আদালতকে আরও বলেন, ‘কারও গায়ে হাত তোলার অধিকার কি পুলিশের আছে? আমার ওপর অত্যাচার করেছে পুলিশ। চোর-ডাকাতকেও তো মানুষ এভাবে মারতে পারে না।’
ধানমন্ডি থেকে মধ্যরাতে গ্রেফতারের পর বুধবার বেলা দুইটায় বিএনপি নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরীকে ঢাকার আদালতে হাজির করে পুলিশ। তখন থেকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের সামনে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য দাঁড়িয়ে ছিলেন। ঢাকার সিএমএম আদালতের হাজতখানায় ঘণ্টাখানেক অবস্থানের পর কড়া পুলিশ পাহারায় শহীদ উদ্দিন চৌধুরীকে আদালতের এজলাসে তোলা হয়। আদালতে আসার পর এজলাস কক্ষের বেঞ্চে বসেন তিনি। পরে আদালত কক্ষে আসেন ম্যাজিস্ট্রেট রশিদুল আলম। বিচারকের উপস্থিতিতে পুলিশের পক্ষ থেকে শহীদ উদ্দিন চৌধুরীকে লোহার খাঁচার তৈরি আসামির কাঠগড়ায় যাওয়ার অনুরোধ করা হয়।
এ সময় শহীদ উদ্দিনের আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী আদালতকে বলেন, বিএনপি নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী অসুস্থ। তাঁর বাইপাস সার্জারি হয়েছে। তিনি ঠিকমতো হাঁটতে পারছেন না। 
তখন আদালত বলেন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী আসামির কাঠগড়ায় যাবেন। তাঁর বসার ব্যবস্থা করা হবে। পরে শহীদ উদ্দিন লোহার খাঁচায় তৈরি আসামির কাঠগড়ায় যান। তখন পুলিশের পক্ষ থেকে তাঁকে একটি চেয়ার দেওয়া হয়। তিনি সেখানেই বসে ছিলেন।
এরপর শহীদ উদ্দিনকে কেন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিত, তার পক্ষে যুক্তি আদালতের কাছে তুলে ধরেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ধানমন্ডি থানার এসআই শহীদি হাসান। 
ওই পুলিশ কর্মকর্তা আদালতকে বলেন, গত ২৩ মে রাজধানীর সিটি কলেজের সামনে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের ১০ থেকে ১৫ হাজার নেতা-কর্মী পদযাত্রার সমাপনী বক্তব্য শেষে চলে যাওয়ার সময় নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড করেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন আসামি শহীদ উদ্দিন। তাঁর মদদে বিএনপি’র নেতা-কর্মীরা দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পুলিশের ওপর আক্রমণ করেন, ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটান, গাড়ি ভাঙচুর করেন। পরে শহীদ উদ্দিনকে রিমান্ডে নেওয়ার পক্ষে আরও যুক্তি তুলে ধরেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবদুল­াহ আবু।
অন্যদিকে রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন শহীদ উদ্দিন চৌধুরীর আইনজীবীরা। তাঁর আইনজীবী মোসলে উদ্দিন আদালতকে বলেন, বিএনপি নেতা শহীদ উদ্দিন দু’বার সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি অসুস্থ। বাইপাস সার্জারির রোগী। মামলায় রিমান্ডে নেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। 
তাঁর আরেক আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী আদালতকে বলেন, বিএনপি নেতা শহীদ উদ্দিন তো পালিয়ে বেড়ান না। কেন তাঁর বাসায় মধ্যরাতে অভিযান চালিয়ে দরজা ভেঙে গ্রেফতার করা হলো? রাজনীতি করা কি কোনো অপরাধ? বাসার দরজা ভেঙে গ্রেফতারের পর তাঁকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে।
এ অভিযোগের বিষয়ে পিপি আবদুল­াহ আবু আদালতকে বলেন, ‘বিএনপি নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরীকে কোনো ধরনের নির্যাতন করেনি পুলিশ। তাঁকে নির্যাতন করার অভিযোগ সত্য নয়।’ তবে শহীদ উদ্দিন চৌধুরী আদালতের কাছে তাঁর ওপর পুলিশের নির্যাতনের ওই বিবরণ দিয়েছেন।
দুই পক্ষের বক্তব্য শুনে ধানমন্ডি থানার এই মামলায় শহীদ উদ্দিন চৌধুরীর চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। পরে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা আদালতের সামনে শহীদ উদ্দিনের মুক্তির দাবি জানিয়ে শ্লোগান দিতে থাকেন।