খুলনা | বুধবার | ০১ অক্টোবর ২০২৫ | ১৫ আশ্বিন ১৪৩২

দুর্গাপূজায় ৫০১ প্রতিমা দেখে খুশি ভক্তরা

বাগেরহাটের ঐতিহ্যবাহী সিকদার বাড়ি মন্দিরে দেশি-বিদেশি দশর্নার্থীদের উপচে পড়া ভীড়

এস এস সোহান ও অমিত কর বিলাস, বাগেরহাট |
০১:৩৫ এ.এম | ২২ অক্টোবর ২০২৩


সনাতন ধর্ম্বাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে দেশি-বিদেশি ভক্ত, দর্শনার্থী ও সনাতন ধর্মালম্বীদের পদচারণায় মুখরিত বাগেরহাটের ঐতিহ্যবাহী হাকিমপুরের শিকদার বাড়ি পূজামন্ডপ। শনিবার সকাল থেকে মন্দিরে ভীড় শুরু হয়। দুপুরের পর থেকে ক্রমেই বাড়তে থাকে ভক্ত দর্শনার্থীদের ভীড়। ভীড় সামলাতে রীতিমত হিমশিম খেতে হয়েছে কর্তব্যরত আয়োজক, র‌্যাব, পুলিশ ও আনসার সদস্যদের। এদিকে ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার ইন্দ্রজিৎ সাগর ও প্রেসক্লাব অব ইন্ডিয়ার সভাপতি গৌতম লাহিড়ী শনিবার পূজামন্ডপ পরিদর্শন করেছেন। এর আগে শুক্রবার রাতে র‌্যাব ও পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পূজামন্ডপ পরিদর্শনে আসেন।  
গতকাল শনিবার বিকেলে সরেজমিন দেখা যায়, হাকিমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনের সড়ক থেকে মূল মন্দির পর্যন্ত প্রায় ৫০০ মিটার সড়কসহ আশপাশ এলাকা জুড়ে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভীড়। মন্দিরের যত কাছে যাওয়া হয় ভীড় ততই বাড়তে থাকে। আয়োজকদের নির্ধারিত ফটক দিয়ে প্রবেশ করে পাঁচ শতাধিক প্রতিমা দেখে বের হয়ে যাচ্ছেন দর্শনার্থীরা। কেউ কেউ আবার মা দুর্গাসহ অন্যান্য প্রতিমার সাথে সেলফি তোলায় ব্যস্ত। পরিবার পরিজন নিয়ে শিকদার বাড়ি মন্দিরে সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে পেরে খুশি ভক্ত ও দর্শনার্থীরা।
খুলনার ডুমুরিয়া থেকে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঘুরতে আসা ননী গোপাল দাস বলেন, গতকাল পূজা শুরুর পর থেকে অনেক মন্দিরে ঘুরেছি। এতবেশি প্রতিমা কোথাও দেখিনি। অনেক ভাল লেগেছে। দুই ছেলে ও স্ত্রী দীপা খুব খুশি হয়েছে। মৌসুমি দেবনাথ নামের এক দর্শনার্থী বলেন, দুর্গাপূজা মানেই শিকদার বাড়ি পূজামন্ডপ। শিকদার বাড়ি পূজা মন্ডপে না আসলে মনে হয় অপূর্ণতা রয়ে গেছে।
ভারত থেকে শিকদার বাড়ি মন্দিরে আসা প্রেসক্লাব অব ইন্ডিয়ার সভাপতি গৌতম লাহিড়ী বলেন, ইন্ডিয়া থেকে যখন বাংলাদেশে এসেছি, তখন পরিচিত অনেকেই বলেছেন শিকদার বাড়ির পূজা দেখে আসিয়েন। ভারতের চেয়ে বৈচিত্রের দিক থেকে শিকদার বাড়ির এই আয়োজন ব্যতিক্রম। এখানের আয়োজন শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, এটা একটি মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। ব্যতিক্রম এই পূজার জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান এই সাংবাদিক নেতা।
এর আগে শনিবার দুপুরে সফরসঙ্গীসহ ঐতিহ্যবাহী শিকদার বাড়ির দুর্গামন্দির পরিদর্শন করেন ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার ইন্দ্রজিৎ সাগর। এ সময় তাঁকে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী লিটন শিকদার ও তাঁর সহধর্মিণী পূজা শিকদার শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন। এছাড়াও শুক্রবার রাতে খুলনা র‌্যাব-৬ এর সিও লেঃ কর্নেল মোঃ ফিরোজ কবির, খুলনা রেঞ্জের এ্যাডিশনাল জিআইজি (ক্রাইম) জয়দেব চৌধুরী ও মোঃ হাসানুজ্জামান (অপারেশন) পরিদর্শনে আসেন এবং মন্দিরের প্রতিমা ঘুরে ঘুরে দেখেন। দুপুরে সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সরদার নাসির উদ্দিন সফর সঙ্গীসহ মন্দির পরিদর্শন করেন। 
এদিকে শিকদার বাড়ির এই আয়োজনকে ঘিরে স্থানীয়দের মাঝেও ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে। মন্দিরের আশপাশে সড়কের দুই পাশে বিভিন্ন পণ্যের পশরা সাজিয়ে বসেছে অর্ধশতাধিক দোকানী। ভক্ত-দর্শনার্থীরাও নিজের পছন্দ অনুযায়ী খাবার, খেলনা ও প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয় করতে পারছেন। 
অন্যদিকে পূজা মন্ডপ ও ভক্ত দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জেলা পুলিশ, আনসার ও র‌্যাব সদস্যরা কাজ করছে। এর পাশাপাশি সাদা পোশাকেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন। রয়েছে আয়োজকদের নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক দল।
শিকদার বাড়ি দুর্গাপূজার আয়োজক ব্যবসায়ী লিটন শিকদার বলেন, আমার স্বর্গীয় বাবা দুলাল শিকদার ২০১০ সালে ১৫১টি প্রতিমা নিয়ে প্রথম বারের মত ব্যতিক্রমী দুর্গা পূজার আয়োজন করেন। এরপর থেকে প্রতিবছরই আমরা প্রতিমার সংখ্যা বৃদ্ধি করতে থাকি। এক পর্যায়ে ২০১৯ সালে ৮০১টি প্রতিমা নিয়ে আমরা দুর্গাপূজার আয়োজন করি। আমাদের এই পূজায় সারা বাংলাদেশ থেকে ভক্ত দর্শনার্থীরা এসে থাকেন। দেশের বাইরে থেকেও অনেক ভক্তরা আসেন। তবে করোনার কারণে আমরা গেল তিন বছর সীমিত পরিসরে পূজার আয়োজন করেছিলাম। এ বছর সাড়ম্বরে আমরা দুর্গাপূজার আয়োজন করেছি। এবার ৫০১টি প্রতিমার মাধ্যমে আমরা সনাতন ধর্মীয় বিভিন্ন পৌরানিক কাহিনী তুলে ধরেছি। দর্শনার্থীরাও অনেক খুশি হয়েছে মন্ডপ ঘুরে দেখে।
এ বছর বাগেরহাটের ৯টি উপজেলা ও ৩টি পৌরসভায় ৬৪২টি পূজা মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শুক্রবার ষষ্ঠি পূজার মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্মালম্বীদের এই মহোৎসবের মূল আয়োজন শুরু হয়। নানা আচার অনুষ্ঠান ও পূজার পরে মঙ্গলবার দশমী পূজা ও দেবি বিসর্জনের মধ্য দিয়ে এই আয়োজনের শেষ হবে।