খুলনা | শনিবার | ১০ মে ২০২৫ | ২৭ বৈশাখ ১৪৩২

জনসংখ্যা ও প্রজনন হার উদ্বেগজনক প্রচার ও তদারকি বাড়ানো দরকার

|
১২:৩৬ এ.এম | ০৬ নভেম্বর ২০২৩


বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম ঘন বসতিপূর্ণ একটি দেশ। জনসংখ্যা এখন আমাদের জন্য বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। স্বাধীনতার সময়ে ১৯৭১ সালে দেশের জনসংখ্যা ছিল সাড়ে সাত কোটি। তখন যুদ্ধের কারণে জনসংখ্যা কিছু কমলেওÑ ত্রিশ লাখ শহিদ এবং এক কোটি শরণার্থীর মধ্যে কিছু ফেরেননিÑ পঞ্চাশ বছর পরে এ সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। সর্বশেষ জনগণনায় দেশের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি। তবে সমস্যা হলো এক সময় পরিবার পরিকল্পনায় সাফল্যের জন্য পুরস্কারপ্রাপ্ত এই দেশে এখন প্রজনন হার আশানুরূপ গতিতে কমছে না। বাংলাদেশ শিশুমৃত্যু রোধে সফল হয়েছে, নবজাতক ও প্রসূতির প্রাণরক্ষায়ও সার্থক। কিন্তু প্রজনন হার কমানোর লক্ষ্যমাত্রা ২ শতাংশ বা ২.১ শতাংশে নামাতে ব্যর্থ হচ্ছে। ২০১৭ সালে এই মাত্রায় একবার পৌঁছালেও বর্তমানে একমাত্র রাজশাহী বিভাগ ছাড়া বাকি সব বিভাগে তা বেড়ে গেছে। ফলে টোটাল ফার্টিলিটি রেট (টিএফআর) দুইয়ে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত জনবলের অভাব ও তদারকির ঘাটতির কারণে এই অবস্থা। অনেকে বলছেন, করোনার সময় একদিকে পরিবার পরিকল্পনার কাজ ব্যাহত হয়েছে, অন্যদিকে এই সময় বেড়ে গেছে বাল্যবিবাহ। আধুনিক জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণের হারও আশানুরূপ গতিতে বাড়ছে না। বাংলাদেশ এ ব্যাপারে মোটামুটি পঞ্চাশ শতাংশের মধ্যেই রয়েছে, যদিও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য প্রয়োজন এ হার ৭০ শতাংশে উন্নীত করা। এ অবস্থায় আমাদের মনে হয় আবারও অতীতের মতো জন্মনিয়ন্ত্রণের পক্ষে বহুমুখী প্রচারণা, পদ্ধতি গ্রহণে উৎসাহিত করা ও এ ব্যাপারে শিক্ষা দেওয়ার জন্য মাঠ পর্যায়ে দপ্তর স্থাপন ও লোকবল নিয়োগ এবং প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ দেওয়া জরুরি। জন্ম হারে যদি রাশ টানা না যায় তা হলে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নতি ব্যাহত হবে। সামাজিক জীবনে শৃঙ্খলা, শিক্ষার মান, স্বাস্থ্যসেবার পরিসর, বেকারত্ব ঘোচানো ও কর্মসংস্থান বাড়ানো সবই মারাত্মক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।
আমরা আশা করব প্রজনন হার কমানোর সঙ্গে জনসংখ্যার সম্পর্ক এবং পরিকল্পিত উন্নয়নের সাফল্য যে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত তা বিবেচনায় নিয়ে সরকার এ ব্যাপারে আশুব্যবস্থা গ্রহণ করবে। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের ৩০ শতাংশ পদ খালি রেখে এতে সাফল্য আসবে না। তেমনি জন্মনিয়ন্ত্রণের আধুনিক পদ্ধতি গ্রহণে সক্ষম দম্পতিদের আগ্রহী করে তুলতে হবে। বাল্যবিবাহ রোধ, নারী শিক্ষাকে উচ্চতর পর্যায় পর্যন্ত নেওয়া এবং নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানের বিকল্প নেই। মানুষের জীবনে বিনোদনের নানা বিকল্প ব্যবস্থাও জনপ্রিয় করা দরকার। পারিবারিক জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলা এবং সন্তানের সুশিক্ষা ও সুস্থ বিকাশ নিশ্চিত করার জন্য কম সন্তানই যে উপযুক্ত বাস্তবতা তা সংশি¬ষ্ট সবাইকে বুঝতে হবে।