খুলনা | বুধবার | ০৪ জুন ২০২৫ | ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে সেবা নিয়ে নানা অভিযোগ

খুমেক হাসপাতালে রোগীদের উপচে পড়া ভিড়, পাচ্ছে না কাঙ্ক্ষিত সেবা

রামিম চৌধুরী |
০১:২২ এ.এম | ০৬ নভেম্বর ২০২৩


দিনের পর দিন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। প্রতিনিয়ত ধারণ ক্ষমতার প্রায় ৩ গুণ বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছে এ হাসপাতালে। বিভাগের বেশির ভাগ জেলা বা উপজেলা স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোর চিকিৎসা মান নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। বিভিন্ন হাসপাতালে ভালো মানের চিকিৎসা সক্ষমতা না থাকায় দিনের পর দিন চাপ বাড়ছে নগর স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র গুলোতে। 
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান গেট থেকে শুরু করে ভিতর পর্যন্ত রোগীদের উপচে পড়া ভিড়ের চিত্র নিত্যদিনের। ভোর থেকে বহির্বিভাগে দেখা যায় চিকিৎসকের অপেক্ষায় হাজারো রোগী। 
এদিকে রোগীর ভিড়ে আন্তঃবিভাগে তৈরি হয়েছে এক হতাশাজনক পরিস্থিতির। হাসপাতালের প্রতিটি বেলকনি, মেঝেতে মানবেতরভাবে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা। সামান্য পাটি বিছিয়ে হাসপাতালের কোণায় কোণায় রোগীদের রাখা হয়েছে। এদের বেশির ভাগ রোগীই এসেছেন বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে চিকিৎসকদের অবহেলা, রোগ পরীক্ষার মেশিনে ত্র“টিসহ নানা কারনে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে আসেন তারা। এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তার স্বজনরা জানান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে কোন প্রকার টেস্ট করানো হয় না। এছাড়াও সব সময় চিকিৎসকদের পাওয়া যায় না। তাই খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সব রকম সেবার আশায় আসেন তারা। 
২৫০ শয্যার খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে ২০১৯ সালে ৫০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। তারপর থেকে নানান সংকটের মধ্য দিয়ে চলছে এ হাসপাতাল। কয়েকজন চিকিৎসক ও নার্সের সংখ্যা বৃদ্ধি ছাড়া তেমন কোনো পরিবর্তন না ঘটলেও রোগীর সংখ্যা বেড়েছে কয়েকগুণ। বর্তমানে ২৯৯ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন ২২৮ জন। ৫০০ শয্যার এ হাসপাতালে গেলো অক্টোবরে গড়ে প্রতিদিন রোগী ভর্তির সংখ্যা ছিলো ১৬শ’ থেকে ১৮শ’ জন। এতে অনেকটা চাপের মুখে চিকিৎসকরা। 
খুমেক হাসপাতাল সহকারী রেজিস্ট্রার ডাঃ সুদীপ পাল বলেন, এ হাসপাতালটি একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এখানে চিকিৎসার পাশাপাশি শিক্ষাও দেওয়া হয়। তবে অতিরিক্ত রোগী হওয়ার কারনে এ হাসপাতাল চিকিৎসা ব্যবস্থার পাশাপাশি ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রমও। 
খুমেক হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন, বেশ কয়েকটি কারনে এ হাসপাতালে রোগীদের সংখ্যা বাড়ছে। তার মধ্যে অন্যতম কারণ হলো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নানা রকম চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাব। এতে এসব হাসপাতালের উপরে আস্থা হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
বটিয়াঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সে এলাকার বেশির ভাগ নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য একটি আস্থার জায়গা। তবে গত কয়েক বছরে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও রয়েছে নানা সমস্যা। প্রাথমিক চিকিৎসা ছাড়া এখানে দেওয়া হয়না তেমন কোনো সেবা। বটিয়াঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-এর আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ অভিজিৎ সময়ের খবরকে মলি­ক বলেন, এনেস্থেসিয়লজিস্ট এবং সার্জন না থাকায় দীর্ঘদিন ব্যবহার করা হয়না অপারেশন থিয়েটার। এছাড়াও সামান্য এক্সরে বা আল্ট্রাসোনোগ্রাম করাতে রোগীদের যেতে হয় শহরে।
এদিকে একই পরিস্থিতি রূপসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের। সাধারণ কিছু রক্ত পরীক্ষা ছাড়া এ হাসপাতালে নেই তেমন কোনো রোগ নির্ণয়ক মেশিন। এ হাসপাতালের আরএমও ডাঃ পিকিং শিকদার জানান, আল্ট্রাসোনো ও এক্সরে মেশিন অকেজো হয়ে পড়ে আছে দীর্ঘ ৫ বছর ধরে। ১২ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের জায়গায় কাজ করছেন মাত্র ৩ জন। 
এভাবে নানা অভিযোগ ও সংকটের মধ্য দিয়ে চলছে জেলার ৯টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। যার প্রভাব পড়ছে নগর স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে। তাই সকল সংকট কাটিয়ে উপজেলা ও সদর হাসপাতালগুলোকে ঢেলে সাজাতে হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।