খুলনা | শুক্রবার | ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১২ পৌষ ১৪৩১

এ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করুন

|
১২:০৮ এ.এম | ২১ নভেম্বর ২০২৩


গত শনিবার থেকে শুরু হয়েছে বিশ্বব্যাপী এ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স সপ্তাহ। আগামী ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত এই সপ্তাহের কার্যক্রম চলবে। আমাদের দেশে এ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলছে। ভাইরাসজনিত সর্দি, কাশি, জ্বরের মতো সাধারণ রোগের জন্য আমরা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই এ্যান্টিবায়োটিক সেবন করি। দুঃখজনক হলেও সত্য, মানুুষের কল্যাণে আশীর্বাদ হয়ে উদ্ভাবিত এ্যান্টিবায়োটিক যেন অভিশাপ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। এ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণে আগে অনেক ওষুধ শরীরে কার্যকর ছিল, বর্তমানে সেগুলো আর কাজ করছে না। একই কারণে চিকিৎসা ব্যয়ও বহুগুণ বেড়ে যায়। ব্যক্তি, সমাজ ও জাতীয় অর্থনীতিতে এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। এমনকি কার্যকর নতুন এ্যান্টিবায়োটিক উৎপাদন সময়সাপেক্ষ বিধায় এ ক্ষেত্রে ঝুঁকি বাড়ছে। স¤প্রতি এক সমীক্ষায় জানা গেছে, দেশের সব জরুরি ও বহুল ব্যবহৃত এ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ৫০ শতাংশেরও বেশি কার্যকারিতা হারিয়েছে। এতে দেশের পুরো জনগোষ্ঠী যে কোনো ধরণের মহামারির বিরুদ্ধে অরক্ষিত থেকে যেতে পারে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তালিকাভুক্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ৫টি ওষুধ ক্রমেই অকার্যকর হয়ে পড়ছে বলে ২০১৭ থেকে ২০২১ এর মধ্যে রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) পরিচালিত এই সারভেইলেন্স গবেষণা থেকে জানা গেছে। ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে ব্যবহার হওয়া এ্যান্টিবায়োটিকের অপপ্রয়োগ থামানো যাচ্ছে না। গত তিন বছরে প্রায় ৩২ শতাংশ বেড়েছে এ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার। এভাবে চলতে থাকলে মানবজাতি বিপন্ন হওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বিশ্বে প্রতি বছর ৫০ লাখ মানুষ ওষুধ প্রতিরোধী জীবাণুর কারণে মারা যায়। এর মধ্যে ১২ লাখ ৭০ হাজার মানুষের মৃত্যুর একমাত্র কারণ ওষুধ প্রতিরোধী জীবাণু। মৃত্যুর বড় অংশ ঘটে নিম্নœ ও মধ্যম আয়ের দেশে। বিশ্বব্যাংকের আশঙ্কা, এ্যান্টিবায়োটিকের অযাচিত ব্যবহার অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে ২ কোটি ৪০ লাখ মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যের মুখে পড়বে। একই সময়ে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি ১ থেকে ৩ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলার কমে যেতে পারে। আমাদের মতো দেশে অতিমাত্রায় ব্যবসায়িক মনোবৃত্তির কারণে রোগীর প্রচন্ড চাপ সহ্য করতে না পেরে চিকিৎসকরা অসতর্কতা ও অবহেলার কারণে রোগীকে সঠিক চিকিৎসা প্রদানে ব্যর্থ হন। অন্যদিকে পৃথিবীজুড়েই বহু চিকিৎসক ওষুধ কোম্পানি কর্তৃক প্রভাবান্বিত ও প্রলুব্ধ হয়ে অপ্রয়োজনীয়, ক্ষতিকর ও দামি ওষুধ প্রেসক্রিপশনে লিখে থাকেন। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এ ব্যয়ভার বহন করতে হয় নিরীহ ক্রেতা বা রোগীকেই। এ্যান্টিবায়োটিকের যথেষ্ট ব্যবহারে জরিমানার বিধান রেখে গত ৭ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে পাস হয় ওষুধ ও কসমেটিকস আইন। তবে ব্যবস্থাপত্র ছাড়া এ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি বন্ধের বিধান এখনো কার্যকর হয়নি। প্রেসক্রিপশন ছাড়া এ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি কঠোরভাবে বন্ধ করতে হবে। নিবন্ধনকৃত চিকিৎসকের লিখিত প্রেসক্রিপশন ছাড়া এ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করা যাবে না মর্মে বিজ্ঞ হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছেন, তা সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে এ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স অনেকাংশে কমানো সম্ভব হবে।