খুলনা | বুধবার | ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ | ২৩ মাঘ ১৪৩১

খেলাপি ঋণ আদায়ে কার্যকর উদ্যোগ নিন

|
১২:০১ এ.এম | ২৪ নভেম্বর ২০২৩


আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী খেলাপি ঋণের হার সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ সহনীয় বলে ধরা হয়। বাংলাদেশের খেলাপি ঋণ ঝুঁকি এর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। বিশেষ সুবিধা দেওয়ার পরও ব্যাংক খাতে কমছে না খেলাপি ঋণ; বরং বেড়েই চলেছে। গত জুন প্রান্তিকে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে খেলাপি ঋণ। স্বাভাবিকভাবেই প্রত্যাশা ছিল, পরের প্রান্তিকে এটি কমে আসতে পারে। কমেছেও। তবে তা আইএমএফ-এর শর্তের কারণে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এখন ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা, যা আগের প্রান্তিকের চেয়ে ৬৪২ কোটি টাকা কম।  
খেলাপি ঋণ ব্যাংক খাতের এক বড় সমস্যা। বস্তুত খেলাপি ঋণ আদায়ে বড় কোনো উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, গ্রাহককে ঋণ পরিশোধে বারবার সুযোগ দেওয়ার পরও যেহেতু কোনো সুফল আসছে না, সেহেতু ঋণ আদায়ে কর্তৃপক্ষকে কঠোর হতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি বছরের জুন প্রান্তিক শেষে ব্যাংক খাতে মোট বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ১৫ লাখ ৪২ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণে পরিণত হয়েছিল ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ১০ দশমিক ১১ শতাংশ। এ প্রান্তিকে দেশের ইতিহাসের সব রেকর্ড ভেঙেছে খেলাপি ঋণ। মার্চ শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি ৮০ লাখ টাকা বা মোট ঋণের ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ। সে হিসাবে ৬ মাসের ব্যবধানে সবশেষ প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ ২৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা বেড়ে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। 
উলে­খ্য, গত বছরের জুন শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের অন্যতম শর্ত হচ্ছে, রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে হবে। তবে এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২১ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। আইএমএফ-এর শর্তমতে, পুনঃতফশিল ও পুনর্গঠন করা ঋণ, সন্দেহজনক ঋণ-এসবকেও খেলাপি দেখাতে হবে। সেক্ষেত্রে আইএমএফ-এর হিসাবে খেলাপি দাঁড়াবে ৩ লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি। 
বিশেষজ্ঞদের মতে, উচ্চমূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট, খেলাপি ঋণ, বিদেশে অর্থ পাচার, আমদানি-রপ্তানিতে অস্থিরতা, উৎপাদন ও সরবরাহে বিপর্যয় ইত্যাদি যেসব সমস্যা দেশের অর্থনীতিতে সৃষ্টি হয়েছে, এগুলো একটির সঙ্গে অন্যটি সম্পর্কিত। এসব সমস্যার মূলে রয়েছে দুর্নীতি। কাজেই দুর্নীতি রোধে কর্তৃপক্ষকে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। অভিযোগ রয়েছে, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিরা সাধারণভাবে অত্যন্ত ক্ষমতাবান। যারা ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি, তাদের বিরুদ্ধে যদি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয়, তাহলে ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা কঠিন হয়ে পড়তে পারে।