খুলনা | শনিবার | ২৩ নভেম্বর ২০২৪ | ৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

যে কারণে খুলনায় বাদ পড়লেন প্রতিমন্ত্রী-হুইপ ও সংসদ সদস্য, মিশ্র প্রতিক্রিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০১:১৫ এ.এম | ২৭ নভেম্বর ২০২৩


দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে খুলনার তিনটি আসনে প্রার্থী পরিবর্তনে তৃণমূল আ’লীগে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষমতাসীন আ’লীগের মনোনয়নে বর্তমান প্রতিমন্ত্রী, হুইপ ও সংসদ সদস্য বাদ পড়ায় শুরু হয়েছে নানা আলোচনা। কী কারণে বাদ পড়লেন, কেন বাদ পড়লেন তা নিয়ে চলছে দলীয় নেতা-কর্মীসহ নির্বাচনী এলাকার মানুষদের নানা মন্তব্য। তবে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, বাদ পড়া এমপিদের মধ্যে একজন অসুস্থতা ও বার্ধক্যজনিত কারণে মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন। অপর দুইজনের বিরুদ্ধে দল ও দলের বাইরে একাধিক অভিযোগ থাকায় ইমেজ সংকটে ভুগছিলেন।
তারা হলেন খুলনা-১ (দাকোপ-বাটিয়াঘাটা) আসনে সংসদ সদস্য ও হুইপ পঞ্চানন বিশ্বাস, খুলনা-৩ (খালিশপুর-দৌলতপুর) আসনের সংসদ সদস্য ও শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নজান সুফিয়ান, খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রা) আসনে সংসদ সদস্য মোঃ আখতারুজ্জামান বাবু। এর মধ্যে সবচেয়ে চমক সৃষ্টি হয়েছে খুলনা-৩ ও ৬ আসনে। 
সংসদ সদস্য শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ানের আসনে আ’লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা এস এম কামাল হোসেন। আর খুলনা-৬ (কয়রা-পাইকগাছা) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও লবণ পানির ঘের বিরোধী আন্দোলনের নেতা মোঃ রশিদুজ্জামান।
অন্যদিকে গতকাল রোববার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে খুলনা-যশোর মহাসড়কের রেলিগেটে প্রতিমন্ত্রীর বাস ভবনের সামনের সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করেন তার অনুসারীরা। তবে দলীয় প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তকেই প্রাধান্য দিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবেই দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে নৌকার বিজয় দেখতে চায় দলটির নেতা-কর্মীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুলনা-৩ আসনে দীর্ঘদিন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন আসছেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। তিনি দীর্ঘদিন শ্রমিক রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য। সাদাসিদে জীবন যাপনের অভ্যস্ত এই নারী নেত্রী সব সময়ই নেতা-কর্মীদের কাছে অন্য উচ্চতায় আসীন ছিলেন। তবে মন্ত্রীত্ব হয়ে নিজ ভাই সাহাবুদ্দিন আহমেদকে ব্যক্তিগত সহকারী নিয়োগ দিয়ে সমালোচনায় পড়েন। পরবর্তীতে মন্ত্রীর ভাই সাহাবুদ্দিন, সাহাবুদ্দিনের স্ত্রী ও কন্যার বিরুদ্ধে নিয়োগ, সিন্ডিকেট গড়ে তোলাসহ গণমাধ্যমে বিভিন্ন খবর প্রকাশিত হয়। বিশেষ তাদের দাপটে শ্রম মন্ত্রণালয়ে অসন্তোষ রয়েছে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দপ্তরের একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, বেগম মুন্নুজান সুফিয়ানকে তাঁর পরিবারের লোকরাই ডুবিয়েছে। নেত্রী থেকে এমপি, এমপি থেকে মন্ত্রী হয়েও বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের ব্যক্তি জীবনের খুব পরিবর্তন হয়নি। অথচ তাঁর এই আত্মীয়রা ফুলে- ফেঁপে উঠেছেন, যার খেরাসত দিতে হয়েছেন একজন মাঠের নেতাকে। এই আসনটিতে এবার মনোনয়ন পেলেন সাবেক ছাত্রনেতা ও দলটির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন।
অপর দিকে খুলনা-১ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য পঞ্চানন বিশ্বাস বর্তমান সংসদের হুইপ ছিলেন। একাধিক বারের এই সংসদ সদস্য বয়সজনিত কারণে দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন। ফলে দলীয় ও সরকারি কার্যক্রমে তিনি অনেকটাই নিস্ক্রীয় হয়ে পড়েন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে এবার বাদ পড়েছেন তৃণমূল স্তরের এই নেতা। এখানে মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক এমপি ননী গোপাল মন্ডল।
এদিকে সবচেয়ে চমক দেখা দিয়েছেন খুলনা-৬ আসনে। এখান থেকে বাদ পড়েছেন সাবেক ছাত্রনেতা ও জেলা আ’লীগ নেতা মোঃ আখতারুজ্জামান বাবু। এর আগের একাদশ জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়ে চমক দেখিয়েছিলেন এই তরুণ নেতা। তিনি ছিলেন খুলনার বয়সে সর্বকনিষ্ঠ এমপি। কিন্তু এক মেয়াদেই মনোনয়ন দৌড়ে হেরে গেলেন তিনি।
দলটির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু বিভিন্ন সময়ে খবরের শিরোনাম হয়েছেন। উপকূলীয় ভেড়িবাঁধে কার্যকর বাঁধ নির্মাণে ব্যর্থ হওয়ায় প্রকাশ্যে জনরোষেও পড়েছিলেন তিনি। এছাড়া কয়রা উপজেলা আ’লীগের কর্মসূচিতে প্রকাশ্যে ‘দলটার আর বারোটা বাজাবেন না’ বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন থানা আ’লীগের সভাপতি জি এম মহসিন রেজা। নিজস্ব ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দু’টি উপজেলার যাবতীয় কাজ বাগিয়ে নেয়া, দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের বাদ দিয়ে গুটিকয়েক লোকজনকে সুবিধা দিয়ে নিজস্ব বলয় সৃষ্টির কারণেই তার এমন পরিণতি বলে অভিযোগ তৃণমূল নেতা-কর্মীদের।
এতে দলের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। আওয়ামী লীগের স্থানীয় কোন্দলও তাঁকে কোণঠাসা করে রাখে। ফলে প্রতিটি দুর্যোগে এলাকায় থাকা, উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেও শেষ হাসি হাসতে পারেননি। এই এমপির বিরুদ্ধে সর্বশেষ ঠিকাদারী করার অভিযোগ করা হয়।
অপর দিকে এবারও এ আসনটিতে মনোনয়নের ক্ষেত্রে চমক দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এবার এখানে মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা মোঃ রশিদুজ্জামান। এক সময়ের সিপিবি’র এই রাজনীতিক লবণ পানিতে ঘের বিরোধী আন্দোলনের নেতা হিসেবে এলাকায় পরিচিত।